২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নীলফামারীর ইটভাটা গিলে খাচ্ছে আবাদি জমি : ভেঙে চৌচির এলাকার রাস্তাঘাট

ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁঠালগাছ (বাঁয়ে) এবং একটি ধান ক্ষেত : নয়া দিগন্ত -

বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইটভাটা মালিকেরা। কোনো কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম্য। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ইটভাটাগুলো। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যে যার মতো ইটভাটা বহাল তবিয়তে চালাচ্ছেন। ইটভাটাগুলোতে রাতের আঁধারে কাঠ, বাঁশের মুড়া, ভাঙা বোতাম, সমিল থেকে আনা কাঠের গুঁড়া, পুরনো টায়ার-টিউব, ইউরিয়া সার, সোয়াবিন তেলের বর্জ্যসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটার জ্বালানি কাজে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অপরিকল্পিতভাবে জেলার যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো চোখের পলকে গিলে খাচ্ছে আবাদি জমি। জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় ব্যবহার কারায় উর্বরতা হারিয়ে উৎপাদন হ্্রাস পেয়েছে হাজার হাজার একর জমির। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছে না। এ ছাড়া প্রতিদিন শত শত ট্রলি ও ট্রাক্টরে অতিরিক্ত ইট ও মাটি পরিবহনের ফলে ভেঙে চৌঁচির হচ্ছে এলাকার কাঁচা পাকা রাস্তাঘাট। কুণ্ডলী পাকানো কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত কালো ধোঁয়া পরিবেশের মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইটভাটার ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। ধানে পড়েছে চিটা। কলাগাছ, জলপাই গাছসহ এলাকার সবুজগাছগুলোর পাতা পুড়ে যাচ্ছে বিষাক্ত ছাইয়ের কবলে পড়ে।
ভাটার আশপাশে বসবাসকারী পরিবারগুলোর অবস্থা আরো করুণ। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে উর্বর ও তিন ফসলি জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় ৫৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ভাটা রয়েছে সৈয়দপুর উপজেলায় ৩২টি। নীলফামারী জেলা সদরে রয়েছে ১১টি, ডোমার উপজেলায় চারটি, জলঢাকা উপজেলায় সাতটি ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় তিনটি। যার বেশির ভাগই অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় এলাকার পরিবেশ, রাস্তাঘাট ফসলি জমি ও ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে ছয়টি ভাটা রয়েছে। ভাটার কারণে এলাকার পরিবেশই শুধু নয় নীলফামারী- দেবীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা হয়েছে। গোটা সড়ক ফেটে চৌঁচির হয়ে গেছে। এ ছাড়া পিকনিক স্পট নীলসাগর কাছে মেসার্স এমএসবি ব্রিকসসহ আধা কিলোমিটারের মধ্যে এমকে ব্রিকস ও আরএমবি ব্রিকস নামে আরো দুটি, গোড়গ্রাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গোড়গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে বিওবি ব্রিকস নামের একটি। এ ছাড়া আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে উত্তর মাঝপাড়া গ্রামে টিএবি ব্রিকস-১ ও হাজীগঞ্জ বাজারের কাছে টিএবি নামে আরো একটি ভাটা রয়েছে (যদিও সরকারি তালিকায় টিএবি নাম নেই)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভাটাগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ ট্রলি ও ট্রাক্টরে করে ইট ও মাটি পরিবহনের কারণে গোটা ইউনিয়নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ দিকে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের এমকেবি ব্রিকস ও আরএমবি ব্রিকস ইটভাটার দূষণের কবল থেকে বাঁচতে স্থানীয় জনগণ গত ৮ ও ১৪ মে জেলা প্রশাসক বরাবরে দু’টি আবেদন করেছেন। এ ছাড়া অতি সম্প্রতি টিএবি, আরএমবি ব্রিকস ও বিওবি ব্রিকস নামের তিনটি ভাটায় মোবাইল কোর্টের মাধমে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিওবি ব্রিকস ভাটা মালিক দেয়াল দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় এই বর্ষায় ওই এলাকার জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভূমি মালিকেরা। ওদিকে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক এলাহী বকস, আবুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও তোফাজ্জল হোসেনসহ অনেকেই স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ করে জানান, কামারপুকুরের ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছে উর্বর আবাদি দো-ফসলি ও তিন-ফসলা জমিতে। ইট তৈরির জন্য ভাটা মালিকরা নামমাত্র টাকা দিয়ে দু-তিন ফিট গভীর করে মূলত জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকেরা অভিযোগ করেন, কিছু কৃষক ইটভাটায় জমি দেয়ার কারণে জমিগুলো ডোবায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে পাশের উর্বর জমিগুলো ভেঙে পড়ছে ওই ডোবায়। ফলে বাধ্য হচ্ছেন অন্য কৃষকরা ইটভাটায় জমি দিতে। এ ভাবে ধ্বংস হচ্ছে আবাদি জমি।
ইটভাটার মালিকরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement