২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাট অচল

অসম বাণিজ্য ও বিএসএফের বাধার অভিযোগ
-

ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে ভারতীয়দের অসম বাণিজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের টানা ধর্মঘাটে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘাটে অচল হয়ে পড়েছে হাটটি। অসম বাণিজ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশীরা সীমান্ত হাটে দোকান বসাতে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
মেয়াদোত্তীর্ণ, অননুমোদিত পণ্য ও অতিরিক্ত দামে সামগ্রী বিক্রিসহ সীমান্ত হাটের শুরু থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একতরফা নিজেদের ইচ্ছামতো মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্য দিকে কয়েক মাস ধরে বিএসএফর বাধায় পর্যাপ্ত ভারতীয় ক্রেতা সীমান্ত হাটে প্রবেশ করতে পারছে না। এ ছাড়া চার থেকে পাঁচ কেজির বেশি পণ্য কিনতে ভারতীয় বিএসএফের বাধার ঘটনায় বাংলাদেশীদের ব্যবসায়ীদের বেচা-বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে চলছে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট।
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মোকামিয়া এবং ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর এলাকায় জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ করে দুই দেশ থেকে জায়গা নিয়ে চালু হয়েছিল দেশের তৃতীয় ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় দুই দেশের সীমান্ত পারের মানুষের দীর্ঘ দিনের বিচ্ছেদ ও বাণিজ্যে সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সীমান্ত হাটটি চালু হয়েছিল।
আত্মিক ও বাণিজ্যিক সমতার ভিত্তিতে সীমান্ত হাট থেকে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও ভারতীয়দের একতরফা ব্যবসায় লুফে নেয়ার কৌশলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা শুরু থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুই দেশের সমঝোতা আলোকে সীমান্ত হাটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তরকারি, ফলমূল, খাদ্যসামগ্রী, মসলা, অপ্রধান বনজ পণ্য, যেমন : গামছা, লুঙ্গি, শাড়ি, গৃহস্থালি ও কৃষি উপকরণ দা, লাঙ্গল, কুঠার, বেলচা, বাটাল, তৈরী পোশাক, মেলামাইন পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফলের জুস, স্টেশনারি, প্রসাধন সামগ্রী, টয়লেট্রিজ, প্লাস্টিকপণ্য, অ্যালুমিনিয়াম এবং বর্ডার হাট এলাকায় উৎপাদিত স্থানিক দেশজ পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা। প্রতি ক্রেতা প্রতি হাটে ২০০ মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। বর্ডার হাটের প্রত্যেক ক্রেতা-বিক্রেতাকে ছবিসংবলিত পরিচয়পত্র বহন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অনুমোদিত ফরম্যাটে ক্রেতা-বিক্রেতার পরিচয়পত্র ইস্যু করার নিয়ম থাকলেও প্রতি হাটবারে কয়েক হাজার বহিরাগত ক্রেতা টিকিট কিনে হাটে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সীমান্ত হাট চালু হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করছে বলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা মাছ, শুঁটকি, মুড়ি-চানাচুর, বিস্কুটসহ অল্পসংখ্যক পণ্যের বিপরীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শাড়ি, থ্রি-পিস, বিভিন্ন মসলা, হরলিক্স, গার্মেন্ট সামগ্রী, কসমেটিকস, তেল, বিদেশী ক্রিম, পাউডার, জুস, লজেন্স, চা-পাতা, বিস্কুট, চানাচুর, দুধপাউডার, ধনিয়া, জিরা, জুসসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী অবাধে বিক্রি করছে। এতে সীমান্ত হাটে অসম বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আগে সীমান্ত পথে অবৈধ পথে বাংলাদেশে যেসব পণ্য আসত, বর্তমানে সীমান্ত হাটে অবাধে ওই সব পণ্য বিক্রি হওয়ায় সীমান্ত হাট ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চোরাকারবারি ও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট। প্রতি মঙ্গলবার হাটবারের দিন তাদের তৎপরতায় বাংলাদেশে ঢুকছে শুল্কবিহীন ভারতীয় পণ্য। ওই সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ পাশের জেলার হাটবাজারে। অন্য দিকে বাংলাদেশ অংশে কোনো কড়াকড়ি না থাকায় জেলা শহরসহ নানা স্থানের ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য পাইকারি ও খুচরা দরে কিনে বাংলাদেশে নিজেদের দোকানে মজুদ করে বিক্রি করে থাকে। এসব বিষয় বেশ কিছু দিন থেকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে প্রতিকার চেয়ে আসছেন। দীর্ঘ দিন পরও এসব সমস্যার কোনো ধরনের সন্তোষজনক সমাধান না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।
সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান জানান, কোনো প্রতিকার না পেয়ে তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে ৯০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশী বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা প্রবেশ না করায় সীমান্ত হাট ফাঁকা হয়ে অচল হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ক্রেতার বিপরীতে ভারতীয় বিএসএফ তারা তাদের দেশের হাতেগোনা কয়েক শ’ নাগরিক ক্রেতাকে সীমান্ত হাটে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে আসছে।
এ দিকে গত দুই হাটবারে ধর্মঘট চললেও ভারতীয়রা একে পাত্তা দিচ্ছে না বলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সীমান্ত হাটে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা চোরাচালানি বন্ধ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একমুখী নীতি বন্ধকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে হাটের বাইরের গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্মঘট চলাকালে সীমান্ত হাটে বিজিবি কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। পাকা হাটে কয়েকজন ভারতীয় ব্যবসায়ীকে দেখা গেলেও বাংলাদেশী কোনো ব্যবসায়ীকে সীমান্ত হাটে দোকান বসাতে দেখা যায়নি। তারা ধর্মঘটের সমর্থনে বাজারের বাইরে অবস্থান করেন। গত মঙ্গলবার হাটবারে ধর্মঘট চলাকালে বিপুলসংখ্যক বিজিবি সদস্যকে মোতায়েন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীসহ দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, সমতার ভিত্তিতে বাজারে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালিত হলে দুই দেশের নাগরিকেরা সীমান্ত হাট থেকে উপকৃত হতে পারে।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সীমান্ত বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আক্তার উন নেছা শিউলী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জেনেছেন উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ভূমিকায় বাংলাদেশী পণ্য ক্রয় করে নেয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল