২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগির খামার

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ব্রয়লার মুরগির খামার : নয়া দিগন্ত -

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় নিজ উদ্যোগে বাড়ির পাশেই লাভের আশায় কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়েছিলেন বেশ কয়েকজন তরুণ। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ ছাড়াই শুধু অন্য খামারিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এসব খামার গড়ে তুলেলন তারা। এভাবে গত কয়েক বছরে উপজেলায় খামারের সংখ্যা দাঁড়ায় অর্ধশতাধিক।
প্রথম প্রথম এসব ব্রয়লারের খামার প্রতি মাসেই কিছু লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে খাদ্য দ্রব্য, ওষুধ ও বাচ্চার অব্যাহত দাম বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর উৎপাদন পদ্ধতির কারণে উৎপাদন কমে গেছে। শীত ও ব্রয়লারের দাম কম হওয়ায় এখন লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে এসব খামারির। ফলে অনেক ব্রয়লার খামারি তাদের স্বপ্নের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ খুব কষ্টে সুদিনের আশায় খামারে উৎপাদন কমিয়ে ধরে রেখেছেন ব্যবসায়ের হাল।
এমনি এক ব্রয়লার মুরগির খামারি হরিপুর উপজেলার টেংরিয়া ঝারবাড়ি গ্রামের আবদুল হাকিম। তিনি কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। আবদুল হাকিম জানান, এই এলাকায় কয়েকটি ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে কিন্তু কেউ টিকে রাখতে পারেনি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধের দাম অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় ও খামারে উৎপাদিত ব্রয়লারের দাম কমে যাওয়ায় এ ব্যবসা নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন তিনি। তবুও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে ভালো বাজারের আশায় ব্যবসায়টা টিকিয়ে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়ের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রতি চালানেই লস গুনতে হচ্ছে। আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগে ব্রয়লার মুরগির খাবার প্রতি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ছিল ১৫-১৮ শ’ টাকা। এখন সেই খাবারের বস্তার দাম দুই হাজার ১৫০ টাকা। পাঁচ-সাত বছর আগে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল প্রতি পিস ১২-১৫ টাকা। বর্তমানে ৩০ টাকা। বেড়েছে ওষুধ ও শ্রমিকের দামও। কিন্তু উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। বরং কমেছে। পাঁচ-সাত বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আর বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। গত চালানে তাকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ক্ষতি গুনতে হয়েছে বলে জানান।
ক্ষতির পরও খামারে মুরগি উৎপাদন উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন যদি হঠাৎ করে ব্রয়লারের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। দুই বছরে তিন লাখ টাকা ক্ষতির কারণে ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জনাব। তার খামার বর্তমানে খালি পাড়ে আছে।
একই এলাকার উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মাসুদ রানা জানান, তিন বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হলে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায় বন্ধ করেছি গত বছর।
উৎপাদন কমায় ব্রয়লার মুরগির খামার ধরে রেখেছেন উপজেলা চৌরঙ্গী এলাকার কামরুজ্জামান, হলদি বাড়ির কারিম উদ্দীন।
মালিকেরা জানান, তারা সবাই নিজেদের বেকার সমস্যা সমাধানে নিজ খরচে ব্রয়লারের খামার গড়ে তুলছেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্রয়লারের খাদ্য ও বাচ্চার দাম যে হারে বেড়েছে সেই হারে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। বর্তমানে দ্বিগুণ দামে বাচ্চা ও খাবার কিনেও ১০ বছর আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোনো খামারিই এ ব্যবসায় ধরে রাখতে পারবে না।
জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে পাঁচটি আর অনিবন্ধিত খামার রয়েছে ৪৫টি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রেজুয়ানুল হক ইতোমধ্যেই অনেক ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অব্যাহত ব্রয়লার খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি ও ব্রয়লার মুরগির গোশতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এতে করে আমাদের করার কিছু নেই। সামনে কোনো প্রকল্প এলে আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন কৌশল শেখাতে ও পরামর্শ দিতে পারব। কিন্তু ব্রয়লারের খাবারের দাম কমানোর বিষয়ে কিছু করতে পারব না।


আরো সংবাদ



premium cement