২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেরখাদায় ভাসমান বেডে সবজি চাষে উৎসাহিত কৃষক

তেরখাদার একটি বিলে কচুরীপানার উপর সবজি চাষের দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

বাড়ির পাশের জমিতে থৈ থৈ পানি। কচুরিপানা ভরে থাকায় বছরের প্রায় ছয় মাস এ জমিতে কোনো ফসল চাষ করতে পারতেন না নাজমা বেগম। অথচ এ বছর তিনি জলমগ্ন এ জমির কচুরিপানা স্তূপ করে ভেলার মতো ধাপ তৈরি করে তার ওপর উন্নত পদ্ধতিতে লাউ ও লালশাক চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তাকে দেখে আশপাশের মানুষও ভাসমান বেডে সবজি চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। সফল নারী নাজমা বেগম খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার নেবুদিয়া গ্রামের কৃষক ইসমাইল শেখের স্ত্রী।
নাজমা বেগম জানান, তিনি তেরখাদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এ বছর জলাবদ্ধ জমিতে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে তার ওপর লাউ ও লালশাক চাষে উৎসাহিত হন। তিনি পাশাপাশি চারটি ভাসমান বেডে সবজি চাষ করেছেন। পানির ওপর কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ৩০ হাত লম্বা, চার হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু করে প্রতিটি বেড তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তেরখাদা উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ভাসমান বেড তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বীজ, ফেরোমন ফাঁদ ও অন্যান্য উপকরণ দেয়া হয়। এ বেড থেকে এ পর্যন্ত তিনি ২৭০ কেজি লাউ এবং ১৫০ কেজি লালশাক পেয়েছেন। প্রতি কেজি লাউ ১০ টাকা দরে মোট দুই হাজার ৭০০ টাকা এবং প্রতি কেজি লালশাক ১৫ টাকা দরে মোট দুই হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বমোট চার হাজার ৯৫০ টাকা বিক্রি করেছেন। আরো লাউ ও লালশাক বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। এ কাজে তার স্বামী ইসমাইল শেখ ও তিন ছেলে আসগর, তামিম ও জোবায়ের সহযোগিতা করেছেন। তা ছাড়া এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: জেহাদুল ইসলাম শেখ সব সময় সবজি দেখাশুনা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
তেরখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার কাজী শাহনেওয়াজ জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ একটি লাভজনক প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে জলমগ্ন পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এটি পরিবেশবান্ধব ও জৈব পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে খুব কম সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করা যায়। চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এতে জলাবদ্ধ এলাকার কচুরিপানা ও জলজ আগাছার সদ্ব্যবহার হয়।
তিনি আরো জানান, তেরখাদা উপজেলার নিচু এলাকায় বিশেষ করে ভূতিয়ার বিল, বড়নাল, বিলবাসুয়াখালি ও সলিমপুর বর্ষা মওসুমে জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস সাধারণত জলমগ্ন ও পতিত থাকে। এ সময় এসব এলাকার জমি কচুরিপানা ও জলজ আগাছায় পূর্ণ থাকে। জলমগ্ন জমিতে কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না।
নিচু এলাকার এসব জলমগ্ন পতিত জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে তেরখাদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ প্রকল্পের আওতায় এ বছর খরিপ-২ মওসুমে এলাকার ২২টি ভাসমান বেডে সবজি প্রদর্শনী স্থাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় আজগড়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে দুইটি, পশ্চিম শেখপুরায় এক, বারাসাত ইউনিয়নের হাঁড়িখালি গ্রামে এক, বারাসাতে তিন, সাচিয়াদাহ ইউনিয়নের কামারোল গ্রামে তিন, নাচুনিয়ায় এক, কড়লিয়া গ্রামে এক, ছাগলাদাহ ইউনিয়নের নেবুদিয়া, চরকুশলা ও রাজনগর গ্রামে একটি করে, তেরখাদা সদরে চারটি, বলর্ধনা গ্রামে দুই ও আদমপুর একটি প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি চাষের প্রদর্শনীভুক্ত কৃষকেরা হলেন ফারুক মোল্লা, শ্যাম সরকার, ছিয়ারুন নেছা, আসমা, এহিয়া, আব্বাস আলী, মনিরুজ্জামান, গোলাম মোস্তফা, নাজমা বেগম, বিউটি বেগম, মনোয়ারা বেগম, মৃণাল বিশ্বাস, দুলালী বিশ্বাস, হরিশ বিশ্বাস, অনিতা বিশ্বাস, ডালিম বেগম, সোহরাব মোল্লা, মান্নু শিকদার, বুরুজা খাতুন, মন্নু শেখ, জোছনা বেগম ও আবদুল্লাহ শেখ। তারা এসব ভাসমান বেডে এ মওসুমে শসা, করলা, উচ্ছে, লাউ, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, ধনিয়া, ডাঁটাশাক, লালশাক ও ঢেঁড়স চাষ করেন। জলমগ্ন জমিতে ভাসমান বেডে সবজি চাষ তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আগামীতে আরো ব্যাপক এলাকায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না

সকল