২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেরপুরে জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অপচেষ্টা

বগুড়ার শেরপুরে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় ঘর পাওয়া জাহাঙ্গীরের বাড়ি। বাবার একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীরের বাবার রয়েছে ৮/১০ বিঘা আবাদি জমি : নয়া দিগন্ত -

বগুড়ার শেরপুরে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রকৃত প্রাপ্যদের বঞ্চিত করে ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঘর বরাদ্দের নামে একটি চক্র একদিকে মোটা অঙ্কের টাকা, অপর দিকে নির্মাণসামগ্রী ক্রয়ের নামে এই অর্থ আত্মসাতের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় ৭-৮ বিঘা জমি ও এখনো বাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নামও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২টি করে মোট ১৮০টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ১৫ ফুট প্রস্ত ও ১৬ ফুট লম্বা প্রতিটি ঘর (অনেক ঘরের মাপ ঠিক নেই) ও টয়লেট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ টাকা (মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, সরকারি ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাদে) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাজটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেষ করার কথা থাকলেও দেরিতে শুরু হওয়ায় টাকাগুলো অন্য একটি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে মালামাল কিনে অর্থ বরাদ্দের তারিখ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ঘরগুলো নির্মাণ করার কথা। এ উপলক্ষে শেরপুর উপজেলায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট ক্রয় কমিটি করে বিভিন্ন মালামাল কেনার কথা কিন্তু কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই কিছুই জানেন না। যে মালামালগুলো কেনা হয়েছে তা নিম্নমানের ও কম দামের। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ১২ ফুট খুঁটি ১২টি ও ১০ ফুট খুঁটি ৯টি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ওই খুঁটির ভেতরে ৬ মিলির চারটি রড থাকার কথা থাকলেও সেখানেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এমনকি খুঁটি তৈরিতে যে পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার করার কথা তা ব্যবহার করা হয়নি এবং ৩ নং ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ঘরে ৫৮০টি ১নং ইট ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও সেখানে ৪৫০টি থেকে ৫৫০টি ইট ব্যবহার করা হয়েছে (কোথাও আবার সেটি ২নং ইট) বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে দেড় থেকে ২ ইঞ্চি এবং খোয়ার সাথে বিপুল পরিমাণ ডাস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্টের পরিমাণ দেয়া হয়ে খুব কম। যেখানে ১৪ ব্যাগ দেয়ার কথা সেখানে দেয়া হয়েছে ৭ ব্যাগ। ঘরের চার পাশে ইট দিয়ে মেঝে তৈরি করতে সিমেন্টের গাঁথুনি দেয়ার কথা থাকলেও নিচের ২ লাইন ইট শুধু বালু দিয়ে সাজিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে, যা পরে পলিস্তারার মাধ্যমে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ঘরের খুঁটি ইট দিয়ে চার দিকে বাউন্ডারি তৈরি করে তার মধ্যে রাখার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পাশাপাশি যে কাঠ দিয়ে ঘর নির্মাণ করার কথা, তা না দিয়ে কম দামের নিম্নমানের ও মাপে কম কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও দরজা একেবারেই নিম্নমানের, চার দিকে বাটাম দিয়ে একটি শিট কোনো রকমে আটকে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে জানালা হয়েছে দুর্বল। তা ছাড়া প্রকল্প তৈরির সময় যে এস্টিমেট করা হয়েছে সেখানে মাটি কাটা, ঘরের মেঝে তৈরি ও মালামাল বহন বাবদ খরচ রাখা হলেও এই সব খরচ ঘর পাওয়া সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নিকট থেকে নেয়া হচ্ছে। অপর দিকে ঘর তৈরিতে যে টিন ব্যবহার করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে মানের ঘর তৈরি হচ্ছে তাতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু এখানে বাজেট করা হয়েছে ১ লাখ টাকা করে।
জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিমাবাড়ী ও বিশালপুর ইউনিয়নের ৩৬টি ঘর ওই ২ চেয়ারম্যানকে দিয়ে, বাকি ঘরগুলো শেরপুরের জনৈক ফরহাদ নামের ব্যক্তিকে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে নিচ্ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যানদের ৮০ হাজার টাকা ও ফরহাদকে ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি দিয়ে কাজ করে নিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ফরহাদ হোসেন জানান, আমি কাজ করছি কিন্তু সব বিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে তুলছেন। কত টাকায় ঘর নির্মাণের চুক্তি নিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি তা জানাতে অস্বীকার করেন।
বিশালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ঘর তৈরিতে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করলেই আর কিছু হবে না। তা ছাড়া তিনি আরো জানান, প্রতিটি ঘর তৈরিতে ৬-৭ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম নবী বাদশা জানান, এই প্রকল্পে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিলে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারা কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করছেন না। তালিকার সময় টাকা আদায়, ঘর নির্মাণের সময় কম দামের জিনিসপত্রের ব্যবহার ও এস্টিমেটের বাইরে গিয়ে নামকাওয়াস্তে ঘর নির্মাণ করে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামছুন্নাহার শিউলী (ওই প্রকল্পের সদস্যসচিব) বলেন, সব তথ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম সাহেবের নিকট রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তা ছাড়া আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এর কিছুই জানি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাজের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে, কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি ইতিহাস গড়া জয় পেল পাঞ্জাব

সকল