২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অসময়ে যমুনায় ভাঙন

মানিকগঞ্জে অর্ধশত পরিবার গৃহহীন ১০০ একর জমি বিলীন

যমুনার ভাঙনে এভাবে বিলীন হচ্ছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা : নয়া দিগন্ত -

অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনায়। ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত দুই সপ্তাহে ভাঙনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা, ৮টি গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার গৃহহীন ও ১০০ একর ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনকবলিত ইউনিয়নগুলো হলোÑ চরকাটারী, বাঁচামারা ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন। সহায়সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ওই সব এলাকার মানুষ। ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে চরকাটারী ইউনিয়নের লালপুর, চরকাটারী, কাঁঠালতুলি, চরকাটারী মণ্ডলপাড়া, বোর্ডঘর বাজার, চরকাটারী বাজার এলাকায়। যমুনা পাড়ে হুমকির মুখে পড়েছে ওই সব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিসসহ শত শত বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
নদীভাঙনে ইতোমধ্যে ঐতিহ্যবাহী চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়, চরকাটারী বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূমি মসজিদ, মাদরাসা ও অর্ধশত বাড়িঘর আবাদি জমি ভাঙনের শিকার হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ঘরবাড়ি-জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজের ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমির ওপর আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কমপক্ষে ৫০টি পরিবার গৃহহীন ও ১০০ একর ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
প্রতিদিনই একের পর এক নতুন পরিবার গৃহহীন ও ফসলি জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। অসময়ে ভাঙনের শিকার এসব এলাকার মানুষ বাঁধের পাদদেশে ও খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
দৌলতপুর উপজেলার চরবারাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ সমেজ প্রামাণিক। গত ২ যুগে ৮ দফা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। তার ৪০ বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিছুই নেই, সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ইপিজেড এলাকায় কুলির কাজ করে চলে তার সংসার।
চরকাটারী মণ্ডল পাড়ার আবদুল খালেক মণ্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়। এবার নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। চরকাটারী বোর্ডঘর বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর, জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে এখন অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে কোনোমতে থাকছেন।
দৌলতপুর উপজেললায় যমুনার তীরবর্তী বাচামারা ইউনিয়নের ৪৪ নম্বর বাচামারা উত্তরখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শত শত শিার্থীর কোলাহলে মুখরিত ছিল সেই স্কুলটি যে কোনো মুহূর্তে যমুনা নদীতে বিলীনের পথে।
৪৪ নম্বর বাচামারা উত্তরখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক রিক্তা আক্তার জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয়টি ভাঙনের আশঙ্কার মধ্যে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে কয়েকবার চিঠি লেখা হলেও তারা ভাঙন রোধ কিংবা ভবন স্থানান্তরের কোনো কার্যকর পদপে নেননি। ১৯৬৯ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়ে বিগত অর্থ বছরে ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় করে দ্বিতল ভবনটি করা হয়েছিল।
বাচামরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানান, এ এলাকাটির ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরইমধ্যে তার ইউনিয়নের ৩০-৪০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
যমুনা নদীর করাল গ্রাসে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টির এক হাজার ৫০০ ছাত্রছাত্রীর শিাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বারেক মণ্ডল জানান, যমুনা নদীর ভাঙনে চরকাটারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র, দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শত শত বাড়িঘর, আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। তিনি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা বলেন, এই এলাকার মানুষের মনে নদী ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করে। নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে কিংবা ভাঙনের হুমকীর মুখে থাকা বাড়ির মানুষজন মাথা গোজার ঠাঁইটুকু রা করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement