২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিকল কেটে চলে গেলে... : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

সায়মন, আমি লক্ষ করেছি, আমার পৃথিবীর কিছু কিছু সৌন্দর্য হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যায়। সে দিন বৃহস্পতিবার সকালে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা তোর লাশের কফিনের ছবি ফেসবুকে দেখে আমার সেই সৌন্দর্যই নষ্ট হয়নি কেবল, বুকের ভেতরটাও নদীর তীরের মতো ভাঙতে শুরু করেছে। এমন কেন হলো ভাই! বিশ্বাস হয় না, এখনো যে তুই আমাদের থেকে অনেক দূরে। মেঘের উপরে তৈরি হয়ে গেছে তোর একটি অনন্তকালের বাড়ি। বাড়ির নাম ‘পরকাল’। পরকালের সেই বাড়িতে আল্লাহ তোকে একটি ভালো জায়গা দান করুন।
তোর সাথে যে আমার অনেক স্মৃতি, সেই স্মৃতি গত কয়েক দিন ধরে পোড়াচ্ছে আমায়। আমার একটি ভোরের কথা খুব মনে পড়ছে সায়মন। সে দিন ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির ভোর। শহীদমিনারে ফুল দেবো বলে ভোরের বাতাস গায়ে মেখে স্কুল প্রাঙ্গণে যাচ্ছি একা। হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে নাম ধরে ডাকল। তাকিয়ে দেখি তুই। তুইও যাচ্ছিস শহীদমিনারে ফুল দিতে।
সে দিন তুই আর আমি মিলে ফুল দিলাম শহীদমিনারে। তোর আর শহীদদের এখন খুব মিল। শহীদেরা যেমন আকাশের তারা, তুইও আজ আকাশের তারা। এই মিল সত্যি আমরা চাইনি সায়মন। সত্যি চাইনি। তোর মৃত্যুর খবর প্রথম শোনে থমকে যাই। পরদিন তোদের বাড়ি গেলাম আন্টিকে দেখতে। টেবিলে বসে কাঁপা কাঁপা হাতে ভাত খাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে কাছে ডেকে কাঁপন গলায় বললেন, ‘আব্বা এ দিকে আয়। আমার সায়মন বিদেশে লাইফ সাপোর্টে। আমার এমন হয়ে গেল কেন আব্বা?’ অথচ আন্টিকে তখনো শোনানো হয়নি তুই লাইফ সাপোর্টে নয়, অনেক দূরে চলে গেছিস।
সত্যি তোদের পরিবারটা এমন হয়ে গেল কেন? মাত্র ১১ মাস আগে সাথী আপু (তোর বোন) দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। এবার তুইও চলে গেলি। আমি জানি না তোর বাবা-মা এ শোক কিভাবে সয়ে নিয়েছেন!
আমার এখনো মনে আছে, সাথী আপু মারা যাওয়ার পর তুই বিকেল বেলায় ফেসবুকে সবার কাছে দোয়া চেয়ে পোস্ট লিখেছিলি। আর এখন তোর মৃত্যুর খবর আমিই সবার আগে ফেসবুকে জানিয়েছি। কত বিচিত্র আমাদের এই জীবন, তাই না!
একবার তোর বাবা ভুল ওষুধ খেয়ে যখন নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারালেন, তুই পাগলের মতো বেহুঁশ হয়ে ছুটে এসেছিস আমাদের ওষুধের দোকানে। আমার বাবা তোকে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেন। তুই সেই উদ্দেশ্যে আবার বাড়ির দিকে ছুটে গেলি। অথচ দেখ, তোর বাবা এখনো বেঁচে আছেন, আর তুই চলে গেছিস অনেক দূরে! আচ্ছা ওই জগতটা খুব সুন্দর, না? বেহেশতের বাগানে তোর বোনের সাথে দেখা হয়েছে ঠিকঠাক? তোরা ভাইবোন মিলে গল্প করিস তো? সাথী আপু খুব গল্প পারে। আমার বিশ্বাস, তুই বোনের গল্প মন দিয়ে শুনিস!
পুরো মহল্লা সে দিন তোর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিল। দুপুর বেলায় তুই এসেছিস কফিনে ঘুমিয়ে। কিন্তু তোর এভাবে আগমন হোক, আমরা তা কখনোই চাইনি সায়মন। ভালো থাকিস তুই আকাশের তারায় তারায়।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement