দাগ
চারাগল্প- জেলী আক্তার
- ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
পড়শু বিয়েটা সাইড়া ফালাইতেই হইবো, নয়তো পোলাডা হাতছাড়া হইব।
খুব জোরেসোরে বলল কেরামত ঘটক।
সব কোনার ঘরটায় শুয়ে শুয়ে বালিশ ভিজিয়ে ফেলছে করিম মিয়া। শিমুল তুলার তৈরি করা তুলতুলে বালিশটা চোখের জলে ভিজতে ভিজতে কডকডে মাথায় দিয়ে আজকাল স্বস্তি নেই।
করিম মিয়া ভাবছেÑ মাইয়াডা বড় হইতেছে, ভালো একটা সম্বন্ধ পাইলাম হাতে, টেহা-পয়সা কিচ্ছু নাইÑ কেমনে কী করব। আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তেই কেরামত ঘটক ডাকলÑ
...ও করিম ভাই বাইরে আহেন কতা আছে।
Ñ চোখ মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এলো করিম মিয়া।
করিম : কন কেরামত ভাই, কী কইবেন,
কেরামত ঘটক : আরে কইলাম না সেদিন,
একটা ভালো পোলা আছে মেট্রিকে দুই সাবজেক্ট ফেল, বাপের সাড়ে সাত বিঘা সম্পতি আছে। ছেলেডা এহন ব্যবসা করে কাঁচামালের ব্যবসা। কামাই আছে খুব।
করিম : কেরামত ভাই পাওনা-দাওনা কী?
ঘটক : তেমন কিচ্ছু চায় নাই, এক লাখ টাহা আর তোমার মাইয়ো ডাক সাজে দিবেন তাতেই হইবে।
করিম : কেরামত ভাই টাহা-পয়সা হাতে নাই, ঘরে যা ধান আছে তা দিয়া এই মাসটাই চলব না। আর এত টাহা কই পাবো।
ঘটক : দ্যাহো করিম মিয়া মাইয়া সুখে থাকলেই তো আপনেও সুখী থাকবেন। হাতে সময় নাই, পড়শুই শুভ কাজটা সাড়তে হইব। ভাইবা-চিন্তা কন কী করবেন।
করিম : কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন আমি আইতাছিÑ
এই বলে ঘরে গেল করিম মিয়া অনেক ভাইবা করিম মিয়া ঘরে গিয়ে ট্রাং থাইকা বাড়ির ভিটার দলিলডা বাইর করল। ওই একটাই জমি, সেইডাও গত বছর বউটার অসুখের পিছনে বন্ধক রাখছে। এইবার বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।
ঘাড়ের গামছাটা দিয়া দলিলডা ঢাইকা বাইরে আইসা কইল,
করিম : কেরামত ভাই ডিমেনডা (যৌতুক) একটু কম করার চেষ্টা করেন। আর বিয়া পড়শুই হইবো।
ঘটক : করিম মিয়া চিন্তা কইরো না, খুব চেষ্টা করুম। এই বলে চলে গেল ঘটক।
করিম মিয়া বউকে ডাকছে :
কই গো ফুলির মা এইদিকে আহো।
-কী কইবেন?
করিম : জমিডা বিক্রি দিয়া টাহা নিয়া আইলাম, মাইয়াডা যদি ভালো থাকে আমরা না হয় গাছের তলায় থাহুম, তাতে সুখ আইব।
Ñকী আর কমু, আপনে যা ভালো বোঝেন সেইডাই করেন।
করিম : হ পড়শু বিয়া। ফুলী কই গ্যাছে অনেকক্ষণ দেহি না মাইয়াডারে।
... ওই গেছে হয়তো খেলতে।
করিম : এহন মাইয়াডারে বাইরে বাইরাতে দিয়ো না।
Ñ কেমনে বাইন্ধা রাখুম, মাইয়াডার এহনো খেলার বয়সই পার হয় নাই।
সংসার যে কেমনে করব?
করিম : ফুলীর মা অত চিন্তা কইর না তো। সব ঠিক হইয়া যাইব।
...চিন্তা হয় ফুলীর বাপ, চিন্তা হয়।
বিয়ের দিন এসে গেল, সব আয়োজন করা হলো। ফুলী এহনো বিয়ে-সংসার এসব কিছুই বোঝে না।
তবুও বিয়েটা দিয়েই দিলো ফুলীর বাপ।
কিন্তু অবুঝ ফুলী স্বামীর বাড়িতে গিয়ে খেলতে যায়। রান্না পারে না। এবাড়ি ওবাড়ি টই টই করে ঘুরে বেড়ায়। এ নিয়ে কত কথা। কিছু দিন পর ফুলীকে প্রচণ্ড মারধর করে ফুলীর স্বামী বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ফুলীকে।
ফুলীর মা।
... ফুলীর পিঠে অসংখ্য মারের দাগে সৃষ্টি হওয়া ফুল দেখে চিৎকার করে বলে,
... ফুলীর বাপ ফুলীর পিঠে এত্ত মাইরের ফুল গো, এইডাই কি আমার মাইয়ার সুখের দাগ।
ফুলীর বাপ কোনো কথা বলে না, অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের পিঠে আঘাতগুলোর দিকে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা