০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঈদ ও নতুন কাপড়ের গল্প

-

মজুমদারদের পুকুরের এই পাড়ে আমাদের বাড়ি আর ওই পাড়ে রুনির নানা বাড়ি। রুনি নানা বাড়ি থেকে বড় হয়েছে। রুনির জন্মের সময় মাকে হারিয়েছে। রুনি আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ছোটবেলায় একসাথে বলতে গেলে একই থালায় খেয়ে বড় হয়েছি আমরা। পারিবারিকভাবেও রুনিদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সারা দিন নানা রকম খেলায় ব্যস্ত থাকতাম আমরা। পুতুল খেলা, ট্রেন ট্রেন খেলা, কখনো রুনি কখনো আমি ট্রেনের ড্রাইভার হতাম আবার কখনো বা যাত্রী হতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মক্তবে যেতাম আরবি পড়তে। রুনি আর আমি পাশাপাশি বসতাম। প্রায় প্রতিদিনই রুনি এসে ডেকে ঘুম ভাঙাত আমার। রমজান মাস এলেই আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। রমজান মাস মানেই ঈদের আগাম বার্তা। সবাই ব্যস্ত থাকত রোজা, ইফতারি ও সেহেরি নিয়ে আর আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়তাম ঈদের নতুন কাপড়ের চিন্তায়। দু’জনে কল্পনা করতাম এ রকম, সে রকম, এই রঙের কাপড় কিনব। নতুন জামা আর প্যান্ট নিয়ে নানা স্বপ্ন বুনতাম নিজেদের মনের অঙ্গনে। ঈদের কয়েক দিন আগে দক্ষিণপাড়ার আবু সাইদ দর্জির বাড়িতে রুনিকে নিয়ে যেত রুনির নানী আর আমি যেতাম মায়ের সাথে। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা এক বৃদ্ধ লোকের কাছ থেকে সিট কিনে মাপ দিয়ে আসতাম। সময় পেলেই ছুটে যেতাম দর্জি বাড়ি। বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখতাম দর্জি বারান্দায় বসে সেলাই করছেন কাপড়। আর মনে মনে ভাবতাম এটাই বুঝি আমার জামা, আমার প্যান্ট। আর মনের খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়তাম। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরে আসতাম। আর আশায় থাকতাম এই বুঝি জামা কাপড় নিয়ে হাজির হলো দর্জির বউ। জামা-কাপড় বানানো হয়ে গেলে দর্জির বউ সেটা বাড়ি দিয়ে যেত আর টাকা নিয়ে যেত। কিন্তু দর্জির বউ আর আসে না। পরের দিন আবার যেতাম। এখানে সেখানে লুকোয় থেকে দেখতাম দর্জির কাজ। কখনো যদি দেখতাম যে, দর্জি কাজ করছে না অথবা বারান্দায় কেউ নেই তখন চুপি চুপি গিয়ে নিচে পড়ে থাকা কাপড়ের টুকরার মধ্যে নিজের কাপড়ের রঙ খুঁজতাম। এভাবে কেটে যেত দিনের পর দিন। ঈদের দিনও ঘনিয়ে আসত। আর রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতাম প্রায়ই যে নতুন জামা, প্যান্ট পরে এটা করছি সেটা করছি। এভাবে আশায় থাকতে থাকতে ঈদের আগের দিন বিকেলে দর্জির বউ জামা প্যান্ট দিয়ে যেত বাড়ি। নতুন জামা প্যান্ট নিয়ে নাড়া চাড়া করতাম আর এক অদ্ভুত আনন্দের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিতাম। একবার মনে আছে, ঈদের আগের দিনও দর্জির বউ জামা কাপড় দিতে আসল না। সন্ধ্যায় মা গিয়ে জেনে এলো সকালে ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই হয়ে যাবে। সকালে দিয়ে যাবে। দর্জির প্রচুর কাজ। ঈদের আগের দিন সারা রাত কাজ করত। সেই ঈদের সকালে রুনি নতুন জামা কাপড় পরে হাজির আমাদের বাড়ি। বাহিরে ঘুরতে যেতে হবে। সেবার রুনি ওর নানার সাথে বাজারে গিয়ে জামা-কাপড় বানাতে দিয়েছিল। আর তখনো আমার জামা প্যান্ট দিয়ে যায়নি দর্জির বউ। বড় আপা আমাকে গোসল করাচ্ছেন আর মা গেছেন দর্জিবাড়ি। আমার চোখ বেয়ে বেয়ে পানি ঝরছে। কিছু সময় পরে মা নতুন জামা প্যান্ট নিয়ে হাজির হলো। নতুন জামা প্যান্ট পরে রুনি আর আমি ঈদগাহে গেলাম।


আরো সংবাদ



premium cement