২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘মেয়ে পালে মা-বাপে, মরে যৌতুক অভিশাপে’

-

যৌতুক একটি অনৈতিক অন্তর্ঘাতমূলক অনুষঙ্গ। দেশব্যাপী এখন এ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। মূলত আমাদের সমাজে ও সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় প্রজ্ঞাপ্রসূত জ্ঞানের অনুপস্থিতিতে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় মতাদর্শ স্বাধীন হওয়াতে এ অবস্থার উদ্রেক করেছে সীমাহীনভাবে। অথচ ‘যৌতুক দেয়া, নেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ’ স্লোগানের প্রচার-প্রচারণাও তুঙ্গে। তার পরও পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে যৌতুকের বলি, নারী নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি।
ক’দিন আগে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ের দাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। বাড়ি থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরবর্তী উপজেলা শহরে। যৌতুকবিহীন বিয়ে এটি। নিমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে কবি, সাংবাদিক এবং বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বর হলেন এমবিবিএস ডাক্তার। কনে এমবিবিএস পড়–য়া চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। কনের বাবা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা মূলত যৌতুকবিরোধী মানসিকতায় ও প্রচারণায় অনড় অবস্থানে। এ নজির স্থাপনে উদ্দীপনায় উৎসাহী। গাড়িতে যাচ্ছিলাম অনুষ্ঠানস্থলে, পথে রাস্তার পাশে একটি ছাড়াভিটা জঙ্গল ও গুল্মলতার আস্বাদনে এক নারীর কবর। যৌতুকের বলি, মেয়েটির অপমৃত্যু। আমি তখন ওই এলাকায় কৃষি ব্যাংকের মাঠ কর্মকর্তা। মেয়েটির স্বামীর বাড়ি আমার পাশর্^বর্তী গ্রামে। বরের অবস্থা ভালো। বাবা সরকারি চাকরি করেন। ছেলেটি (স্বামী) ও ছেলেটির মা বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের চাপ অব্যাহত রাখেন নববধূর ওপর। অবশ্য মেয়েটিকে বিয়ের সময় মা-বাবা সাধ্যমতো গয়না দিয়েছিলেন। তার পরও দফায় দফায় মারধর এবং নগদ টাকা চায় স্বামীর পরিবার। মেয়েটিকে বাবার বাড়ি রেখে যান স্বামী। মেয়েটি স্বামীর জন্য হাপিত্যেশ করেন, কান্নাকাটি করেন, আসতে খবর পাঠান। তখনো দেশে মোবাইলের প্রচলন হয়নি। কিন্তু স্ত্রীর এই কাতর মিনতিতে সাড়া দেননি স্বামীপ্রবর। এসেছিল একটি পত্র। হাতে চিরকুট অনূঢ়া বধূ চিঠি হাতে না নিলেও পাশের এক ব্যক্তি কাগজটি পাঠ করে শোনান। ‘তালাকনামা’। মেয়েটা দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনে পাঠ শুনছেন। সহসা মেয়েটি মূর্ছনা গেলেন। মুদে গেল আঁখি, দিনান্তের পাখি উড়ে গেল নির্লিপ্ত পাখায়। যৌতুকের বলি বীথিকার শাখা-প্রশাখায় অনুরিত। বাড়ির লোকের আর্তচিৎকার শুনে গিয়ে দেখি ঘুমের অঘোরে লীন, নিস্তব্ধ নিথর, মাটিতে পড়ে আছে সুকোমল ধর। লক্ষ্য করি নিষ্প্রাণ দেহটি ধুলোয় লুটিয়ে রয়েছে। চুলগুলো অগোছাল। দরিদ্র পরিবারে মেয়েটি রাস্তার পাশে পারিবারিক গোরস্থানে ঘুমন্ত। তবে ওই পাষণ্ড স্বামীর সাথে মাঝে মধ্যে পথে এখনো দেখা হয়। তিনি বর্তমানে মানসিক প্রতিবন্ধী। আর বিয়ে করতে পারেননি।
সরকারি আইন তো বর্তমানে রয়েছেই, তবে এর সার্থক প্রয়োগের উন্মেষ ঘটাতে হবে যথাযথভাবে। আর আমরা যারা কন্যাদায়গ্রস্ত, যৌতুক প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যেকে প্রত্যাখ্যান করলে ঘৃণ্য এই প্রথা নির্মূল হবে নিঃসন্দেহে। হ


আরো সংবাদ



premium cement