২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেনশন সুবিধা বাড়ানো ও পুনঃস্থাপন

-

সমাজের প্রতিটি স্তরে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সামাজিক কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন সেবাধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ, বিধিবিধান প্রণয়ন ও কার্যকর করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধান নির্দেশিত পথে জনকল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রসার ঘটিয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার জনগণ, অবসরভোগী এবং প্রবীণেরা। পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কার ও পরিবর্তন, সার্বজনীন পেনশন ধারণা এবং সামাজিক সুরক্ষায় গৃহীত ব্যবস্থা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সরকার পাঁচ-ছয় বছরান্তে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ জাতীয় বেতন কমিশনের মাধ্যমে বেতন স্কেল ঘোষণা করে। সর্বশেষ বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৯৭, ২০০৫ এবং ২০০৯-এর সাথে বিদ্যমান বেতন স্কেল ২০১৫-এর গ্রেড অনুযায়ী, আহরিত বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য প্রাপ্যতার ব্যবধান লক্ষণীয়। উল্লেখ্য, কোনো কোনো গ্রেডে বেতন স্কেল প্রায় দ্বিগুণ বা দ্বিগুণের ঊর্ধ্বে রেখে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আগের মতো অর্জিত ছুটি (ছুটি পাওনাসাপেক্ষে) ১২ মাসের স্থলে ১৮ মাস নগদায়ন সুবিধা, চাকরির মেয়াদকাল দুই-তিন বছর বাড়ানো, অবসরকালীন প্রাপ্যতায় পেনশনের হার সর্বশেষ আহরিত বেতনের ৮০ শতাংশের স্থলে ৯০ শতাংশ করা হয়েছে এবং অবসরকালীন সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন ও সুরক্ষার জন্য পেনশনের পঞ্চাশ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণ এবং বাকি পঞ্চাশ শতাংশ বাধ্যতামূলক মাসিক পেনশন নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলমান বেতন স্কেলে গ্রেড অনুযায়ীÑ আর্থিক প্রাপ্যতার সাথে আগের বেতন স্কেলগুলোর সমগ্রেডে তুলনামূলক বৈষম্য রয়েছে। চলমান ২০১৫ বেতন স্কেলের সাথে তুলনা করে সমগ্রেডে সমান সুবিধা না দেয়ায় একই বাজারে ভুক্তভোগীরা অবর্ণনীয় ক্লায়কেশে অর্থাভাবে জীবনযাপন করছেন। তারা অতিরিক্ত ছুটি নগদায়ন সুবিধা, এককালীন সুবিধা পাওয়াতে এবং দুই-তিন বছর চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
২০১৫ সালের আগের বেতন স্কেল থেকে যারা অবসরে এবং যে টাকা পেনশন পাচ্ছেন, তা বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে অপ্রতুল এবং বর্তমানে চলমান বেতন স্কেলের সমগ্রেডের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক। অবসর পরবর্তী কমানো আয়, বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চমূল্যের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জীবন ধারণের জন্য আনুষঙ্গিক ব্যয়, সর্বত্র ভ্যাট/মূসক, দৈব ব্যয় প্রভৃতি মেটাতে একজন পেনশনার আর্থিক সঙ্গতি ক্রমে হারাচ্ছেন। উল্লেখ্য, পেনশনারদের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে পেনশন বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং ৬৫ বছরের কম বয়সীদের ৪০ শতাংশ যা বর্তমান বেতন বাড়ানোর তুলনায় অনেক কম। পেনশন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমগ্রেডে সমআর্থিক সুবিধা পূর্বাপর হিসাবায়ন করা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পেনশনারদের প্রযুক্তির মাধ্যম পেনশন পাওয়াতে এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারা টাকা তুলতে হয়। যারা পারিবারিক পেনশনে তাদের কষ্ট হয় বেশি। বিধবা মহিলা যারা পারিবারিক পেনশন পান দূরাঞ্চলের অফিস/প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করতে হয়, যা লাঘবের চেষ্টাসহ সব পেনশনারের পেনশনের অর্থ পরিশোধে অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বল্প সময়ে, সহজে পরিশোধ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পেনশন নিয়মাচারে ১৯৯৪ সাল থেকে পুরো টাকা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা না থাকায় তাদের জীবন বাঁকে নিয়তির তাড়নায় অবিবেচকের মতো ভবিষ্যতের বিচিত্র নির্মম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় গ্রাসের ভাবনা ছেড়ে শতভাগ পেনশন সমর্পণ করে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আর্থিক অসঙ্গতি নিয়ে ক্লায়কেশে বেঁচে থেকে জীবন সাঙ্গ করছেন।
বর্তমানে গড় আয়ু বেড়েছে ৭২-৭৩ পর্যন্ত। আগে অবসরপ্রাপ্তদের বয়স বাড়ানোজনিত কারণে মৃত্যু হেতু পেনশনারদের সংখ্যা কমছে। অবসরের বয়সসীমা বেড়েছে দুই-তিন বছর। ৫৭ বছর বয়সে অবসরে গেলে আট বছরে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চিকিৎসা ভাতা মাসে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশন ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়, যা পর্যালোচনায় এনে যুক্তিযুক্তভাবে বাড়ানো দরকার। গড় আয়ু বিবেচনায় দীর্ঘ সময় অবসরের পর বেঁচে থাকতে অনেকেরই অনুকূল আর্থিক অবস্থা থাকে না, সেদিকটিও বিবেচনার অপেক্ষা রাখে। যাদের অন্য সহায়ক আয় নেই, শুধু সঞ্চয়পত্র আয়ে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করেন, তাদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ানোর হার বাড়ানোসহ মুনাফা থেকে কর অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। সিপিএফভুক্ত যারা অবসরে আছেন তাদের জন্য চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে মানবিক বিবেচনার প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধির উত্তরণ ঘটেছে। প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনের সুফল সমভাবে পাওয়ার আশা সবার। সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা সম্প্রসারণে সরকারের দৃঢ়তা প্রশংসার দাবি রাখে। অবসরভোগীরা অসংগঠিত, সরকারের উপলব্ধি এবং সংবাদমাধ্যমে তাদের অভাব-অভিযোগ প্রতিধ্বনিত হয়। সরকার এরই মধ্যে পেনশন সমর্পণকারীদের অবসরের ১৫ বছর পর সত্তরোর্ধ্বদের মাসিক পেনশনে পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। অনুরূপভাবে একই বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে সামাজিক সুরক্ষা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং মানবিক দিক ও গড় আয়ু বিবেচনায় বিদ্যমান বেতন স্কেল ২০১৫ সালের আগে যারা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছিল অবসরোত্তর বয়সসীমা উন্মুক্ত রেখে বা অবসরের পর আট বছর পূর্তির পর অর্থাৎ ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সীদের মাসিক পেনশনে পুনঃস্থাপন করে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়ে উন্নয়নের সুফল ভোগ করার অনুকূল ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন অবসরভোগীপ্রত্যাশীরা। হ
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
ইমেইল: qsstechno@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement