২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জবাবদিহি না থাকায় দীর্ঘ লাশের সারি

-

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রগতি সরণী দিয়ে বাসে গুলশান যাচ্ছিলাম। পাশের সিটে বসা অন্য যাত্রী যিনি দেশের প্রধান ফরেনসিক ল্যাবের একজন কর্মকর্তা। বয়সে তরুণ। পথে চলতে চলতে তিনি ফরেনসিক ল্যাবে কাজ করতে বিভিন্ন সমস্যার কথা বললেন। বললেন অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা। পেশাগত জীবনে তাকে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। জানি না ওই কর্মকর্তা এখন কতটা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কারণ ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হয়েছেন বহু মানুষ। এই প্রাণ হারানো মানুষের দেহের ফরমালিটি রিপোর্টিং কাজ তো অবশ্যই ফরেনসিক ল্যাবেরই করতে হবে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড রোডে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের সাবধান করেছিলেন! ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকনের এই সেই সাবধানতামূলক বা হুঁশিয়ারিমূলক কথা পত্রিকাতেও ছাপা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর ৬ নম্বর পৃষ্ঠার একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল- ‘ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পাওয়া গেলে লাইসেন্স বাতিল’ উপ-শিরোনাম সাঈদ খোকনের হুঁশিয়ারি।
এই রিপোর্ট থেকে কয়েকটি বাক্য এখানে তুলে ধরছিÑ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে, এমন অতিঝুঁকিপূর্ণ ২৯টি রাসায়নিক যে প্রতিষ্ঠানের গুদামে পাওয়া যাবে তা সিলগালা করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড রোডে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে মেয়র এ হুঁশিয়ারি দেন।
আমাদের দেশে প্রাণহানির এতবড় ঘটনা শুধু এটাই নয়। প্রায়ই ঘটে। লঞ্চ ডুবে শত শত মানুষ মারা যায়। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেও শত শত মানুষ মারা গেছে। বিভিন্ন বস্তিতেও আগুন লেগে হাজারো স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়। সাভারের রানা প্লাজায় কী ঘটেছিল নতুন করে তা বলার কিছু নেই। এরকম প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে, টিভির স্ক্রলে লেখা ভাসতে থাকেÑ শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা। অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি, তাও গঠন হয়ে যায়! কিন্তু রেজাল্ট জিরো! বরাবরই এরকমটি হয়ে আসছে। মানুষজন এসব তদন্ত কমিটিকে বিশ্বাস করে না! বিশ্বাস করবেইবা কিভাবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ব্যাপারেও তো তদন্ত কমিটি হয়েছিলÑ কোথায় সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট? বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেল! তাতেও তদন্ত কমিটি হয়েছিল! এরকম প্রতিটি ব্যাপারেই তদন্ত কমিটি হয়েছিলÑতাজরীন ফ্যাশন্স, নবাব কাটরা, রানা প্লাজাÑ সবখানেই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। ফলাফল শূন্য। দেশের মানুষ রয়েছে বড় বিপদে। দেশে টেকসই রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে কারো জবাবদিহির তেমন বালাই নেই। জবাবদিহিবিহীন কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ড, পানিতে ডুবে, সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে লাখো মানুষ। এই মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। সব কিছু চলছে বেপরোয়াভাবে। ঠিক মৃত্যুও ঘটছে বেপরোয়াভাবে।
পুরান ঢাকায় এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। কয়েক বছর আগে পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এক লোকের এক পরিবারের ১৩ জন প্রাণ হারায়। সে সময় বেঁচে যাওয়া দুই তরুণীকে নিয়ে অনেক আবেগীয় ঘটনা ঘটে। যা মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার শুরু হয়। কিন্তু কী হয়েছে? মৃত্যুর মিছিল কি থেমেছে? সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কি জানেন না কোথায় কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। চকবাজারের এমন বেহাল অবস্থা সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে প্রশাসন করছেটা কী? হ


আরো সংবাদ



premium cement