২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের রাজনীতি ও ইমরান খান

-

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর নির্ভর করে পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন। সেই পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দিয়েছিলেন ক্রিকেটার ইমরান খান। দ্বিজাতিতত্ত্বের জন্য জিন্নাহ সাহেব আলোচিত, সাথে সমালোচিতও বটে। ইমরান খানও রাজনীতির শুরুতে বেশ কিছু বক্তব্যের জন্য হয়েছিলেন সমালোচিত।
সাফল্য ও ব্যর্থতাÑ দুটোই একজন নেতার জীবনে থাকবেই। থাকবে প্রশংসার সাথে সমালোচনাও। ইমরান খানের বেলায় তা কতটা থাকবে ভবিষ্যৎই বলে দেবে। এবার পাকিস্তানে শুরু হলো তার শাসন। ২০ কোটি পাকিস্তানিকে তিনি কোন দিকে নিয়ে যান, তা দেখার অপোয় বিশ্ববাসী। পাকিস্তানে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (ন্যায় বিচার আন্দোলন) বিজয় চমকপ্রদ হলেও, অবাক হওয়ার কিছু নেই। সমালোচকরা এটাকে ‘নীরব সেনা অভ্যুত্থান’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন! নির্বাচনে তিন নম্বর অবস্থানে থেকে ভুট্টো পরিবারের নেতা বিলওয়াল এ বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেনাসমর্থনে ইমরানের বিজয় হয়েছে বলে দাবি করলেন বিলওয়াল। বিরোধী দলে থাকলে নানা অভিযোগ করা হবেই। তবে সমালোচকেরা এ কথাটাকে আংশিক সত্য বলছেন। দণি এশিয়ায় পাকিস্তানের রাজনীতি ভিন্ন। দীর্ঘদিন পাকিস্তান একনায়ক ও সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বে শাসিত হয়ে আসছে। কখনো প্রত্য, কখনো বা পরোভাবে।
পাকিস্তানের রাজনীতির কথা বললে, প্রথমে এ অদৃশ্য শাসকদের কথা ভাবতে হয়। নতুন পার্লামেন্টের ২৭০ আসনের মধ্যে ১১৭টিতে জিতেছেন ইমরান। সরকার গঠনে দরকার ১৩৭ আসন। তাই তাকে জোট বেঁধেই তা করতে হয়েছে। বিগত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লিগ-এন ৬৪ আসন পেয়ে বিরোধী দলের অবস্থানে রয়েছে। সেনাদের ‘চোখের বালু’ নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে মামলায় দণ্ডিত। একদিকে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন, অন্যদিকে দলগুলোকে সেনাদের অসহযোগিতাÑ সব মিলিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইমরানের মতা গ্রহণ আর এমনকি, অপাত্রে কন্যা দানের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজছেন। তারা বলছেন, ইমরানের মাথায় লবণ রেখে নাকি তেঁতুল খাবেন সামরিক কর্তারা। ইমরান তার বক্তব্যে বলেছেন, ভারত এক পা এগোলে, তিনি দুই পা এগোবেন। ইমরান তার দেশের শত্রু ভারত বিষয়ে কি ভাবছেন তা খুবই গুরুত্ববহ। তিনি কি ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির নজির সৃষ্টি করবেন? সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা বললেও তা কতটা বাস্তব? কিংবা সাবেক পাকিস্তানের এক সময়ের বৃহৎ অংশ আজকের বাংলাদেশকে তিনি কোন চোখে দেখবেন? ইমরান কি অতীতের ভুল স্বীকার করে এক হাজার ৭০০ মাইলের দূরত্বটা কমাতে পারবেন? চীনের বিশাল অর্থের ঋণ কতটা কাজে লাগানো যাবে? আরো আছে এক কোটি বেকার, যাদের তিনি কর্মসংস্থান দেয়ার পণ করেছিলেন। তাদের জন্য কি আছে তার ভাবনায়? এ ছাড়া, আফগানিস্তানের তালেবান ও নিজ দেশের অনুরূপ উগ্রপন্থীদের কিভাবে সামাল দেবেন?
ভাগ্যের লিখন বা জনসমর্থন যাই বলি, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ার লজ্জা পাকিস্তানকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ইমরানের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, উগ্রপন্থার কলঙ্ক মোছা, আর ভেঙেপড়া অর্থনীতিকে গড়ে তোলা। এটা তিনি করতে গেলে জনসমর্থন পাবেন বলে আশা করা যায়। আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনায় এটাকে বলা হয় ‘উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র’। পাকিস্তানের জন্য তা কি অনুসরণ করা হবে? ইমরান খান ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ জিতেছেন। দুঃখের বিষয় হলো, তার দেশে এখন কোনো দেশ সহজে ক্রিকেট খেলতে যেতে চায় না। দেশের জন্য তার আরো একটি ‘ওয়ার্ল্ডকাপ’ জিততে হবেÑ যা তার দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করবে। হ
লেখক : শিার্থী, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা


আরো সংবাদ



premium cement