২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কিছু প্রস্তাব

-

জীবনের নিরাপত্তা একজন নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো প্রত্যেক নাগরিকের এ অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় রাষ্ট্র যখন এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তখনই নাগরিকেরা তাদের অধিকার আদায়ে মিছিল, মিটিং, আন্দোলন করতে বাধ্য হয়। গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে চলমান শিশু-কিশোর ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এরই বহিঃপ্রকাশ। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিচারপতি, সরকারি দল, বিরোধী দল, সেনা-বিমান-নৌবাহিনী এবং বিজিবিসহ সব স্তরের মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ৪৭ বছরের রাষ্ট্রটির ভিত কত নাজুক। এর মেরামত কত প্রয়োজন। সর্বত্র অনিয়ম আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি। আইন ভঙ্গ করাই যেখানে সবার মনোবাসনা। যেখানে মানুষ নামের পশুরা মানুষকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যেখানে একটি লাশের মূল্য কত? পাঁচ, দশ, বিশ হাজার থেকে তা আন্দোলন পর্যন্ত গড়ালে হয়তো ২০ লাখ। অনেক আগ থেকেই এ অনিয়মের বেড়া থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল আমাদের। কিন্তু যারাই আইনকানুন তৈরি করে, তারাই যদি তা অমান্য করেÑ তবে কে এ রাষ্ট্রের হাল ধরবে? কে করবে এর মেরামত? পৃথিবীতে জুলুম নির্যাতন আর অনিয়মের স্থায়িত্ব চিরস্থায়ী নয়। যুগে যুগে তা প্রমাণিত। বাংলাদেশে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা আবারো তা প্রমাণ করে দেখাল। আমাদের এ অসহযোগ আন্দোলন থেকে সবারই শিক্ষা নেয় উচিত। তবেই এ আন্দোলন সফল হবে।
প্রতিটি আন্দোলনের যেমন শুরু আছে তেমনি শেষও আছে। এ আন্দোলনটিরও অবস্থা তাই। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন না করে শেষ হলে আন্দোলনটি ব্যর্থতায় পরিণত হয়। দুর্নীতিবাজ শোষকগোষ্ঠী আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে খুনের মিছিলে পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তা ছাড়া জনদুর্ভোগের কথাও আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। সরকারের সাথে আলোচনায় বসে দ্রুত নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনটি সফলতার মুখ দেখতে নি¤েœ কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করলাম।
প্রথমত : আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের থেকে ১০ জন, পাঁচজন অভিভাবক, পাঁচজন শিক্ষক, সরকারের সংশ্লিষ্ট পাঁচ মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন মন্ত্রী বা তাদের প্রতিনিধি (শিক্ষা, পরিবহন, যোগাযোগ, স্বরাষ্ট্র ও আইন) নির্বাচন করে তাদের মধ্যে দ্রুত গোলটেবিল বৈঠক।
দ্বিতীয়ত : আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবিগুলো সবার সাথে পরামর্শক্রমে সরকারের কাছ উপস্থাপন করা। বিক্ষিপ্তভাবে কেউ নয় দফা, কেউ ছয় দফা এভাবে দিলে ফলাফল পাওয়া যাবে না।
তৃতীয়ত : সব স্তরের শ্রমিকেরাও যেহেতু মানুষ ও এ দেশেরই নাগরিক, তাই তাদের থেকেও প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনা সভায় বসা। তাদের কী কী সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত নিরসন করা। সড়কে চাঁদাবাজি, পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে।
চতুর্থত : আলোচনা করে তা বাস্তবায়নে সরকারকে নির্দিষ্ট সময় দেয়া দরকার। কেননা সব কিছুতেই একটি নিয়মতান্ত্রিকতা রয়েছে।
পঞ্চমত : ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেয়া। সরকারকে আরো সহনশীল ও সংযত হতে হবে। কোনো পেটুয়াবাহিনী দিয়ে আক্রমণ করে এ আন্দোলন দমানো যাবে না, এ কথা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে সক্ষম হবে ততই দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে।
ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখতে হবে ৪৭ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি রাষ্ট্রকে একদিনে মেরামত করা যাবে না, আবার একটি সড়ক আন্দোলন করেও দায়িত্ব শেষ বলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। শুধু একটি নিরাপদ সড়ক নয়; একটি দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক


আরো সংবাদ



premium cement
পূর্ব কালুরঘাটে বেইলিব্রিজে টেম্পু চাপায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত কুবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী শনাক্ত দিনাজপুরে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১ ভারতে মসজিদের ভেতর ইমামকে পিটিয়ে হত্যা তীব্র গরমে কাঁঠালিয়ায় এক শিক্ষার্থী অসুস্থ উল্লাপাড়ায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যা রাজশাহীর পদ্মায় ডুবে তাবলীগ জামাতের সদস্যের মৃত্যু রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড বাংলাদেশ থেকে আম নিতে চায় চীন দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল রুশ অগ্রযাত্রার মধ্যেই ভারী হামলা প্রতিহত করল ইউক্রেন

সকল