২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমুদ্রে সম্পদ রক্ষায় মনোযোগ দরকার

-

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় সোনার চেয়ে দামি বালি এবং তেল ও গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এই সম্পদ স্থায়ী, যা খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা কম। ব্যাংকে টাকা তোলার মতো বিষয়টা সহজ না হলেও তেমন কঠিনও নয়। তবে প্রযুক্তিগত উদ্যোগটা নিখুঁত হওয়া দরকার।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি মূলত তার জলভাগের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপরই নির্ভরশীল। এত দিন সীমানা বিরোধের কারণে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারত না বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে। এক বিশাল অঞ্চলজুড়ে (স্থলভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ) বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ তার সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে। কিন্তু সে কাজটি খুব সহজ নয়। জলভাগে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য আর্থিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক প্রস্তুতি থাকা দরকার ছিল, তার প্রায় কিছুই গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
বঙ্গোপসাগরের প্রাথমিক সম্পদ হচ্ছে মাছ। কিছু দিন আগে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় পাশের দেশগুলোর মৎস্যশিকারিরা এসে মাছ ধরে নিয়ে যেত। এখন তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কারণ তারা জেনে গেছে, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে নির্বিঘেœ ফিরে যাওয়া যাবে না। চৌকস কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হতে হবে। সেটি কিভাবে সম্ভব হয়েছে? কোস্ট গার্ডে জনবল বাড়ানো হয়েছে এবং পাহারা দেয়ার জন্য বেশ কিছু অত্যাধুুনিক জাহাজ নামানো হয়েছে। আরো বেশ কিছু জাহাজ সাগরে নামার অপেক্ষায় রয়েছে। নৌবাহিনীতে দু’টি সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। গ্যাস, খনিজসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য উন্নত দেশগুলোর সাথে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি ব্লকে গ্যাস আহরণের জন্য বিদেশী কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। আশা করা যায়, ২০২৫ সালের আগেই সমুদ্রের গ্যাসও বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ দুনিয়ার অন্যতম ঘনবসতির দেশ। গত চার দশকে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, শিল্পকলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কৃষিজমি ব্যবহার হওয়ায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে এখন চাষযোগ্য জমির অপ্রতুলতা যেমন দেখা দিচ্ছে তেমন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সাগর প্রান্তে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে এ সঙ্কট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। সাগর প্রান্তে নিঝুম দ্বীপের আশপাশের জমি উদ্ধার করে বনায়ন এবং পর্যটন জোন গড়ে তোলা হলে পর্যটনক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বনায়ন করা হলে ভূমিক্ষয় যেমন রোধ করা সম্ভব হবে, তেমন উপকূলবর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার গ্যাসব্লকের ১০টি ভারত ও ১৮টি মিয়ানমার দাবি করে আসছিল। এসব ব্লকে বিভিন্ন সময় দেশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালাতে গেলেও সম্ভব হয়নি। ভারত ও মিয়ানমারের বাধার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের সমুদ্রবিষয়ক রায়ে এ বাধার অবসান ঘটেছে।
ভারতের সাথে আটটি ও মিয়ানমারের সাথে ১৩টি তেল-গ্যাস ব্লক বাংলাদেশের হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্জিত সমুদ্রসীমায় আনুমানিক ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) আর ভূ-সীমায় মজুদ রয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে প্রতি বছর দেশে এক টিসিএফ গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ১২ বছর পর দেশে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেবে। সমুদ্রসীমায় গ্যাস আবিষ্কৃত হলে এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
সাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য আমাদের শুধু অর্থ বা প্রযুক্তির অভাব নয়, দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। সাগরে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার পরিপূর্ণ সুফল পেতে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ওপর আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ কাজ করতে হবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ও দ্রুত। প্রয়োজনে আমাদের জনবলকে সমুদ্রসম্পদ আহরণে দক্ষ দেশগুলোতে পাঠিয়ে এ কাজে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। তার আগে সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। হ
লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
e-mail: advahmed@outlook.com


আরো সংবাদ



premium cement