২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মা’র ঘাতক ছেলেকে আটকে রাখতে পারেনি পুলিশ

মা’র ঘাতক ছেলেকে আটকে রাখতে পারেনি পুলিশ - সংগৃহীত

রাজধানীর পল্লবীতে মাদক কেনার টাকা না পেয়ে মাকে হত্যাকারী সৎ ছেলে রাসেল কৌশলে পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার দিন প্রতিবেশীরা রাসেলকে গনপিটুনি দিয়ে পল্লবী থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। কিন্তু কিছু সময় পর ঘটনাস্থল থেকেই রাসেল কৌশলে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবে বিষয়টি মুখ খুলতে চাইছে না পুলিশ। এদিকে রাসেলকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র বলছে, খুব শিগগিরই পুলিশ রাসেলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।

এলাকাবাসী জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পল্লবীর বাউনিয়বাদ সুইজ গেইটের পাশের বস্তির একটি ঘরে মাদকের টাকা চাওয়া নিয়ে সৎ মা কাজল বেগমের সাথে ঝগড়া হয় ছেলে রাসেলের। কাজল বেগম ছেলে টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাজল বেগমের গলায় আঘাত করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শাবল দিয়ে মায়ের মাথায় একাধিক আঘাত করে। এসময় কাজল বেগমের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তারা রাসেলকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে আটকে রাখে। একই সাথে অন্যরা কাজল বেগমকে নিয়ে স্থানীয় কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন। এদিকে খবর পেয়ে পল্লবী থানার দুজন এসআইসহ কয়েক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যান। প্রতিবেশীরা আগে থেকে আটকে রাখা রাসেলকে পুলিশের কাছে সর্পোদ করেন।

প্রতিবেশীরা আরো জানান, একজন এসআই রাসেলকে ধরে কয়েকজন কনস্টেবলের জিম্মায় দিয়ে হত্যাকান্ড সম্পর্কে নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। অপরজন হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছিলেন। এমন সময় রাসেল কৌশলে ওই পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে পালিয়ে যায়।

এ ব্যপারে জানতে চেয়ে পল্লবী থানার ওসির সাথে গতকাল মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিকেলে থানায় ফোন দেয়া হলে ডিউটি অফিসার বলেন, ‘এটি বৃহস্পতিবারের ঘটনা। আমি পরদিন শুক্রবার দিনের বেলায় ডিউটি করছি। এব্যপারে কোন কিছুই আমার জানা নেই’। এমনকি এব্যপারে থানায় কোন মামলা দায়ের হয়েছে কি না সেটি বলতে পারেননি তিনি। তবে থানার অপরএকজন কর্মকর্তা বলেন, রাসেলকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার দিন রাসেল পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তাও বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এদিকে নিহত কাজল বেগমের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, ঘাতক রাসেল ছিলো কাজল বেগমের স্বামী আব্দুর রহিমের প্রথম স্ত্রী ছেলে। প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আব্দুর রহিম কাজল বেগমকে বিয়ে করেন। কাজলের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। আর আগের স্ত্রী ওই একটি মাত্র ছেলে রাসেল। তারা জানান, রাসেল দির্ঘদিন ধরে পল্লবী এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছিলো। একই সাথে ছিলো একজন মাদকাসক্ত। গত বছর আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মাদকবিরোধী সাড়াশি অভিযানের সময় রাসেল তার ব্যবসা গুটিয়ে গা ঢাকা দেয়। কিন্তু থেমে থামেনি তার মাদক সেবন। পুলিশি অভিযানের মধ্যে চড়া দামে মাদক কিনে সেবন করতে থাকায় রাসেলের ব্যবসার পুঁজিও শেষ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাদকের টাকার জন্য বাবা ও মায়ের কাছে হাত পাততে থাকে সে। বাবা আব্দুর রহিম মাঝে মধ্যে টাকা দিলেও মা কাজল বেগম বেশির ভাগ সময়ই দিতে চাইতেন না। এই নিয়ে রাসেলের সাথে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। এমনকি মাঝে মধ্যে তা হাতাহাতি পর্যায়েও চলে যেত বলে জানান প্রতিবেশীরা।


আরো সংবাদ



premium cement