২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে বহুদূর যাওয়া যায় : ডলি বেগম

-


‘একসময় ইংরেজি ভালো করে লিখতে এমনকি বলতেও পারতাম না। আর এখন বাংলা বলতে গেলেও মুখে নিজের অজান্তেই ইংরেজি চলে আসে। আমার মধ্যে এমন পরিবর্তন এসেছে পারিপার্শ্বিক দিক ও নানা বিষয়ে জানার আগ্রহের কারণে।’ কথাগুলো বলেছেন ডলি বেগম। বহুদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে। ‘তবে কখনো চিন্তাও করিনি, বড় কোনো পদে আমার কাজ বা চাকরি করার সুযোগ হবে। শুধু বাংলাদেশ কিংবা কানাডা নয়, সারা বিশ্বের মানুষ আমাকে চিনবে’Ñ এমন কিছু কথা বলতে গিয়ে তিনি এ সংক্রান্ত আরো কথা বলতে থাকেন।
ডলি বেগম অন্টারিওর এমপিপি বা মেম্বার অব প্রভিনশিয়াল পার্লামেন্ট। তিনি জড়িত কানাডার নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে। তার আগে এমন গৌরব অর্জন করতে পারেননি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কোনো নারী-পুরুষ। তার রয়েছে ছিমছাম সাজানো গোছানো একটি দফতর। সেখানে বসে এ সংক্রান্ত কাজ করেন বেশির ভাগ সময়।
অন্টারিওর রাজধানী টরেন্টোর স্কারবরো সাউথওয়েস্ট আসনে গ্যারি এলিসকে (প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির) হারিয়ে দিয়েছেন গত জুনের নির্বাচনে। ডলি বিপুল ভোটে হারিয়েছেন বহুদিনের এই এমপিপিকে। এই নির্বাচনে ডলি পান প্রায় ২০ হাজার ভোট। এটি মোট ভোটের পঞ্চাশ শতাংশের কিছু কম।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে আমার জেতার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সবাই আমার জয়ের জন্য কাজ করেছেন। এমনকি মসজিদেও দোয়া হয়েছে। নির্বাচনে বড় ধরনের সফলতার ব্যাপারে ডলি বেগম বলেন, এখন আমার যে কত বেশি ভালো লাগছে তা আপনাদের কোনোভাবেই বুঝাতে পারব না। তা বুঝানোর ভাষাও আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের জন্য ভালো কিছু করতে পরি। এদিকে বহু মানুষের বাস স্কারবরো সাউথওয়েস্টে। কাজ করতে হবে সবার জন্য সমানভাবে। কে কোন দেশ থেকে এসেছে কিংবা কে কালো আর কে সাদা তা বিবেচনা করলে চলবে না।
ডলি বলেন, ‘আমি বড় ক্ষমতা পেয়েছি বলে সবই জানি তা বলা যাবে না। আমি ছাড়াও অনেকে এ সংক্রান্ত কাজ, পরামর্শ ভালোই জানেন। প্রয়োজনে তারাও আমার কাছে আসতে পারেন পরামর্শ দেয়ার জন্য। আমি তা সাদরে গ্রহণ করব। সবচেয়ে আসল কথা হচ্ছে, এমন পরিবেশ আমাকে তৈরি করতে হবে যাতে করে চাইলেই সহজেই আমার কাছে আসতে পারে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ।’ ‘আমাকে নির্বাচিত করতে পারলে আপনাদের চাওয়াগুলো পূরণ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব’Ñ এমনটিই ছিল ডলির নির্বাচনপূর্ব স্লোগান। তিনি মনোনয়ন পান গত এপ্রিল মাসে। তখন থেকেই তার অনুসারীরা, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আশায় বুক বাঁধে। শেষ পর্যন্ত তাদের মনের আশা পূর্ণ হলো। বিজয়ের আনন্দ মিছিল বের হয় টরেন্টোর রাস্তায়, যা খুব কমই দেখেছে দেশটির মানুষ।
ডলি পথ দেখিয়েছেন তরুণদের। কেননা তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পিছুটান আসতে পারে। সেজন্য মন খারাপ করে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। অগ্রগতির পথে সমস্যা বা সঙ্কট থাকতেই পারে। সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকে। সেই সমাধানের পথ আমাদের বের করতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, কাজের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস আমাকে এত উপরে উঠিয়ে দিয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সততা, বিনয়ী ইত্যাদি গুণও থাকতে হবে। রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য অনেকে নির্বাচনের আগে নানা চটকদার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট বা সমর্থন চায়। কিন্তু ক্ষমতা পেলে সেসব প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়। এমনটিকে এক ধরনের প্রতারণা বলা যায়। আমাদের এমন কাজের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আসল কথা হলোÑ মানুষকে লক্ষ্যে বা গন্তব্যে নিয়ে যায় সঠিক কাজ। পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না, তাও আবার নিজের জন্মভূমির বাইরে।
বিশ্বের মানুষ এখন তাকে চেনে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং তাকে বলা হচ্ছে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি। বংশগতভাবে রাজনীতির সাথে নানাভাবে জড়িত ছিলেন তার বাবা-দাদারা। তাদের কাজও ছিল মানুষের সেবা করা। ডলিও তাতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি গবেষণা করেছেন লন্ডন ও ইথিওপিয়াতে। কাজ করে যাচ্ছেন ১৮টি সংস্থার সাথে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপসু। কাজের ক্ষেত্রে সফলতার জন্য বলেন, কমিউনিটির সাথে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। রুট লেভেলের মানুষের মন জয় করতে হবে। তিনি একটা বিষয় দেখতে পান। তা হলো, সাদা, কালো, ফিলিপিনো ইত্যাদি কমিউনিটির মধ্যে হতাশা বেশি। এমন মনোভাব দূর করতে হবে আগে।
মানব স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানির সহজ প্রাপ্তি, দন্ত চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়েও ভাবেন ডলি বেগম। তিনি বলেন, এসবের বিনিময়ে আমরা টাকা নেবো না। অনেক সময় এ ধরনের সেবা নিতে গেলে প্রতারণার শিকার হতে হয়। তাতে প্রচুর অর্থ, সময় ইত্যাদি নষ্ট হয়।
অনেকে বলেন, গত ৭ জুনের এই নির্বাচন সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ। আর এটি বিশ্বের জন্য ইতিহাসও। অল্প বয়সেই তিনি কঠিন প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে যান। বাবা পতিত হয় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায়। তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয় অনেক বছর। কিন্তু দমে যাননি ডলি। তখনই তিনি পিতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন।
ডলির জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৮৯ সালে। এখন তিনি থাকেন অন্টারিওর টরন্টোর স্কারবরোতে। আর কানাডায় আসেন তার প্রায় ১১ বছর বয়সে। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন মৌলভীবাজারের মনুমুখ বাজরাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন মনুমুখ পিটি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। পরে ২০১২ সালে কানাডায় এসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে।
তার বিষয় হচ্ছে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা। এর পরই তিনি প্রবেশ করেন পেশাগত কাজে। প্রায় ১০ মাস কাজ করেন সিটি অব টরন্টোতে। দ্য সোসাইটি অব অ্যানার্জি এফেশনালসে চাকরি করেছেন রিসার্চ অ্যানালিস্ট হিসেবে। তারপর প্রধান সমন্বয়ক হন অন্টারিও প্রদেশের কিপ হাইড্রো পাবলিক ক্যাম্পেইনের। তার নানামুখী সফলতার
ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে বহুদূর যাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হক আর নেই নোয়াখালীতে ফের নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান, খনন উদ্বোধন বরিশালে তীব্র তাপদাহে ৩ স্কুলছাত্রী অসুস্থ বগুড়ায় জব মেলায় চাকরি পেলেন বেকার প্রকৌশলীরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার নীলনকশা থামছে না : রিজভী তাজউদ্দীন মেডিক্যাল দুদকের অভিযান : নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য মিলেছে পূর্ব কালুরঘাটে বেইলিব্রিজে টেম্পু চাপায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত কুবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী শনাক্ত দিনাজপুরে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১ ভারতে মসজিদের ভেতর ইমামকে পিটিয়ে হত্যা তীব্র গরমে কাঁঠালিয়ায় এক শিক্ষার্থী অসুস্থ

সকল