২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জি-সেভেন জোটের নতুন পরিকল্পনা, কিভাবে দেখছে চীন?

জি-সেভেন জোটের নতুন পরিকল্পনা, কিভাবে দেখছে চীন? - ছবি- সংগৃহীত

কিছু দেশের একটি ‘ছোট’ জোট সারা পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে, সেই যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। জি-সেভেন জোটের নেতাদের সতর্ক করে করে দিয়ে এ কথা বলেছে চীন।

ইংল্যান্ডে চলমান এক শীর্ষ সম্মেলনে জি-সেভেন জোটের নেতারা যখন চীনকে মোকাবিলা করতে একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, তখনই এই মন্তব্য করলেন লন্ডনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র।

চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলা করতে জি -সেভেন জোটের শীর্ষ নেতারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের এক পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে চীনের পুনরুত্থান ঠেকাতে হলে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে এখনই সক্রিয় হতে হবে।

মনে করা হচ্ছে, রোববার জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা প্রকাশ করবেন, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন সঙ্কটে আক্রান্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরো বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়নশীল বিশ্বে অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে আরো অর্থায়নের কথা থাকবে, যাকে বলা হচ্ছে চীনা কর্মসূচির বিকল্প।

জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড নামে এমন এক পরিকল্পনার সূচনা করছে, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির চেয়ে উচ্চতর মানের হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিনিয়োগ কর্মসূচিতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন, যার আওতায় বিভিন্নরকম অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, চীনের এই কর্মসূচি দারিদ্র্যতর দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, যা তারা শোধ করতে পারছে না। এখন ক্ষমতাধর পশ্চিমা দেশগুলোর জোট জি-সেভেনও চীনের পাল্টা এক কর্মসূচি হাজির করতে চাচ্ছে।

তবে রয়টার্স জানাচ্ছে, লন্ডনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, একটা সময় ছিল যখন কয়েকটি দেশের ছোট্ট একটি জোট বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু সেই যুগ শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করি, ছোট বা বড়, শক্তিধর বা দুর্বল, ধনী বা দারিদ্র্য যাই হোক, সব দেশই সমান। বৈশ্বিক বিষয়গুলো সব দেশের সাথে পরামর্শের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত।

শনিবার এক বিবৃতিতে জি-সেভেন দেশগুলো বলেছে, তাদের অবকাঠামো পরিকল্পনা হবে ‘মূল্যবোধ-সম্পন্ন, উচ্চমানের ও স্বচ্ছ’ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অবশ্য কিভাবে এর অর্থায়ন হবে তা এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

বিবিসির রাজনৈতিক সংবাদদাতা রব ওয়াটসন জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেন করোনাভাইরাস মহামারী-পরবর্তী বিশ্বকে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হিসেবে চিত্রিত করতে চাচ্ছেন। তবে তিনি বলছেন, চীনকে অংশীদার, প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি একটি নিরাপত্তা হুমকি- ঠিক কিভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে জি-সেভেনের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এখনো কোনো ঐকমত্য নেই।

বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগের যে কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তার ব্যাপারে গতকালই জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, জি-সেভেন এই তহবিল ছাড় করার মতো অবস্থায় আসেনি।

কয়েক দিন আগে চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করবে এমন এক পরিকল্পনার কথা জানার পর চীন অভিযোগ করে যে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহবাতিকগ্রস্ত বিভ্রমে ভুগছে। মার্কিন সেনেটে অনুমোদিত এই বিলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও সেমিকন্ডাকটরের মতো গবেষণার জন্য অর্থসংস্থান করবে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনকে একটি হুমকি হিসেবে দেখা বন্ধ করা। চীন ইতোমধ্যেই নিজস্ব এমন কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা তাদের মতে দেশটিকে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement