চীনের পর এবার তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে নামতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউজ ঘোষণা করেছে, তুরস্ক থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে নতুন করে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে নতুন এই শুল্ক। এর ফলে ন্যাটো মিত্র তুরস্কের সাথে নতুন করে বিরোধী জড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
এই আইন কার্যকর হলে নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বে তুরস্কের রজব তাইয়েব এরদোগান সরকার। এমনিতেই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্র লিরার মান কমছে ক্রমশ। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জিতলেও এটি তার সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণা আসতে পারে সেটি জানাই ছিলো। হোয়াইট হাউজ শুল্ক আরোপের আগে বিষয়টি টুইটারে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছে, তুরস্কের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নয়। দেশটি থেকে আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২০ শতাংশ ও স্টিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আইনে স্বাক্ষর করেছি।
এই টুইটের পরই গত কয়েকদিনে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রার মান কমেছে কয়েক দফা। সব মিলে চলতি বছরের শুরু থেকে তুর্কি লিরা ডলারের বিপরীতে ৩০ শতাংশ মান হারিয়েছে। ফলে এরদোগান আবারো তুর্কি নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন, স্বর্ণ ও ডলারের বদলে লিরা সংরক্ষণ করতে। শুক্রবার এরদোগান, বলেছেন, অর্থনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কৃষ্ণ সাগর পাড়ের শহর রাইজে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ডলার কখনোই আমাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। তাই আমি আবারো বলছি, আপনাদের যাদের কাছে ডলার ও স্বর্ণ মজুদ আছে, ব্যাংকে গিয়ে সেগুলোর বিনিময়ে লিরা সংগ্রহ করুন।
এরদোগান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের যেমন ডলার আছে, আমাদের আছে আল্লাহ ও আমাদের জনগন। আমরা প্রতিদিন উন্নতি করছি। গতকালকের চেয়ে আজ ভালো আছি, আগামীকাল আরো ভালো থাকবো।
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে, তুরস্ক তার মধ্যে উপরের দিকে। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে একশো কোটি ডলারের বেশি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক শুল্ক বৃদ্ধির ঘটনাকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি বহির্ভূত বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক। আল জাজিরা ও আনাদোলু
আরো পড়ুন : আমরা আমাদের জনগণকে অন্ধকারে রাখতে পারি না : তুরস্ক
তুরস্কের জ্বালানিমন্ত্রী ফাতিহ ডোনমেজ বলেছেন, তুরস্কের জ্বালানি খাত আমদানি নির্ভর এবং প্রতিবেশী ইরান তুরস্কের জ্বালানি চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে থাকে। তুরস্কের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গ্যাস চালিত। তাই ইরানের সাথে দীর্ঘ মেয়াদি যে গ্যাস চুক্তি রয়েছে তা অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। আমরা আমাদের জনগণকে অন্ধকারে রাখতে পারি না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরো বলেছেন, তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল এখন আমেরিকা সফর করছে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছেন। এ সফর থেকে একটি ভালো ফল আশা করছেন তিনি।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে তিনি একতরফা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও ক্ষুব্ধ। তুরস্ক বৈধভাবে কাজ করছে বলে তিনি জানান। ইরানের রপ্তানি বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আঘাত হানতে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নতুন পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু করেছে আমেরিকা।
এদিকে তুরস্কের সিনিয়র এক কূটনীতিক ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার মধ্যে সঙ্কট নিরসনের প্রচেষ্টায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বুধবার বৈঠক করেছেন। আমেরিকান যাজক অ্যান্ড্রিউ ব্রুনসনকে আটক করা নিয়ে এ দু’টি দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। তুরস্কের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাদাৎ অনাল মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভানের সাথে বৈঠক করেন।
এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এ দুই কর্মকর্তা যাজক ব্রনসনসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সঙ্কট সমাধানে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে উভয় দেশ।
সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে যাজক অ্যান্ড্রিউ ব্রুনসেনকে দুবছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল তুরস্কের আদালত। সাজা খাটার পর তাকে গৃহবন্দী করা হয়। ব্রুনসেনের পূর্ণ মুক্তি না দেয়ায় তুরস্কের ওপর অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট। তুরস্কও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়।
ন্যাটোর মিত্র এ দুই দেশের মধ্যে এ বিরোধকে বিশ্লেষকরা সবচেয়ে বেশী উত্তেজনাপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েন হিসেবে দেখছেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে তুরস্কের সাইপ্রাসে হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার করা হয় ৫০ বছর বয়সি মার্কিন যাজক ব্রুনসনকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা' এবং ‘গুপ্তচরবৃত্তির' অভিযোগ আনা হয়৷ অ্যান্ড্রু ব্রুনসন এখন তুরস্কে গৃহবন্দি আছেন৷ বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করতে হতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷ এ সব অভিযোগের সপক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র৷ ১ আগস্ট তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ দু'জনেই এরদোগানের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত৷ যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা থেকে আসা এই যাজক ২৩ বছর ধরে তুরস্কে বাস করছেন এবং ইজমির রিসারেকশন চার্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন৷
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা