সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে ৯টি বিভাগে ৬ বছর ধরে শিক্ষক না থাকায় পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকশূন্য থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করা হলেও কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি।
জেলার নারীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র বিদ্যাপীঠ এই কলেজ। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সুনামগঞ্জ সরাসরি মহিলা কলেজ ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও কলেজটির সরকারিকরণ করা হয় ১৯৯৭ সালে । প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে এই কলেজ ২০১১ সালে ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। ডিগ্রিতে উন্নীত হওয়ার মেয়াদ ইতোমধ্যে দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নতুন কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি এই প্রতিষ্ঠাটিতে। এ যেন গোড়ায় গলদ। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতায় শুরুতেই থমকে আছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথ, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ও ইতিহাসসহ সর্বমোট নয়টি বিভাগে শিক্ষক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এদের কোনো কোনোটিতে প্রায় ছয় বছর ধরে আবার কোনোটিতে ছয় বছরেরও অধিক সময় ধরে কোনো শিক্ষক নেই।
জানা যায়, শিক্ষক না থাকায় সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের নয়টি বিভাগে পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পরছেন শিক্ষার্থীরা। স্বনামধন্য এই কলেজটিও হারাতে বসেছে জৌলুস। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান থেকে সরে এসেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব কলেজে ১০ জন কিংবা আরো অধিক শিক্ষক রয়েছে সেখানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের নয়’টি বিভাগ শিক্ষক শূন্য থাকার পরেও এখানে অদৃশ্য কারণে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষক শূন্যতার কারণে পাঠদানের ঘাটতি থাকায় এই প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। কলেজবিমুখ হয়ে পরছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
কলেজে কর্মরত একাধিক শিক্ষক জানান, এমনিতেই শিক্ষক সংকট থাকায় আমাদের বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নয়টি বিভাগেই কোনো শিক্ষক নেই। আমাদের যেভাবে সময় যাচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এখন মাথা বোঝা চাপানোর মতোন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক না থাকায় ক্লাস হচ্ছে না। আমরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পাঠদানের ঘাটতি পূরণ করতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। প্রাইভেট পড়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি আমরা। আবার অস্বচ্ছল পরিবারের অনেকে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট পড়তে পারছে না। তাছাড়া প্রাইভেট পড়ার মতো পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আমরা উভয় সংকটে আছি। এই কলেজে ভর্তি হয়ে আমরা উপরন্তু পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পরছি।
সংষ্টিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য পদে লোকবল সংকটও। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় ১৬টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৬২ জনের মধ্যে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। এতে কাজের বাড়তি চাপ ও নানান ঝামেলা পোহাতে হয় প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত সঙ্কট ও সমস্যা রয়েছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পরাগ কান্তি বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। এখন আমরা অনেকটাই নিরুপায়। শিক্ষক শূন্যতার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রতি মাসেই অবহিত করছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখানো পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানটির সমস্যা ও সংকটের শেষ নেই। শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা