ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যেই যখন পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিশ্লেষণ, তখন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘আল-আকসার মর্যাদা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি বিশেষ কনফারেন্স। বিশেষ এজন্য যে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির সব মতের নেতা ও শীর্ষ ব্যক্তিরা। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ওই কনফারেন্সে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ইসলামী গবেষক ও পাকিস্তানের বরেণ্য আলেম মুফতি তাকি উসমানি। তার ভাষণটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পরই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভাষণকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ’ ভাষণ বলেও আখ্যায়িত করছেন। নয়া দিগন্ত পাঠকদের জন্য ভাষণটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো। অনুবাদ করেছেন তরুণ লেখক ও মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুদ্দীন গাজী।
হজরত উলামায়ে কেরাম, জাতির নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত শ্রোতামণ্ডলী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়রাহমাতুল্লাহি তাআলা ওয়াবারাকাতুহ্!
আমরা এ মুহূর্তে এমন এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ও শুনতে একত্রিত হয়েছি, যদি বলি অতিরঞ্জন হবে না, এটি পাকিস্তানের ২২ কোটি মানুষ ও বিশ্বের দুই শ’ কোটি মুসলিমের হৃদয়ের স্পন্দন। আর তা হলো- ফিলিস্তিন সমস্যা।
ইতোপূর্বে উৎসাহ-উদ্দীপক অকেক জোরালো বক্তৃতা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে এবং নানা প্রস্তাবনাও পেশ করা হয়েছে। আমি সেগুলোর পুনরাবৃত্তি না করে কয়েকটি সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
প্রথমকথা হলো- আলহামদুলিল্লাহ, সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ইসরাইল গাজার বাসিন্দাদের প্রতি যে বর্বরতা ও হিংস্রতার প্রদর্শনী করছে, তাতে ইসরাইল মানবতার সকল মূল্যবোধকে পদদলিত করে চলেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে- এই নিকৃষ্ট নাপাক দুশমনের অন্তরে ন্যূনতম মানবতাবোধও অবশিষ্ট নেই।
সারাবিশ্বে এবং আজকের সম্মেলনে সকলেই এর নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু কতক নিন্দাভাষ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আমি আপনাদের সামনে তা সংক্ষেপে নিরসন করতে চাই।
সারাবিশ্ব ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ হতে, এমনকি মুসলিম রাষ্ট্রসঙ্ঘ ওআইসির পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনের চলমান সঙ্কটে যে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, তা ছিল যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধবন্ধের প্রস্তাব। যুদ্ধবন্ধের অর্থ হলো- ইসরাইলকে যেমন এ যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে হবে, তেমনি হামাসকেও যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে হবে। যুদ্ধবন্ধের সাধারণ অর্থ এটাই।
কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের দাবি হলো, গাজার ওপর ইসরাইলের বোমাহামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, হামাসের স্বাধীনতাযুদ্ধ বন্ধ নয়। হামাসের জানবাজ লড়াকু মুজাহিদরা তাদের জন্মগত অধিকার ও ইসলামের আলোকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার যুদ্ধে নেমেছে। এ যুদ্ধ থামিয়ে দেয়ার যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ অমিমাংসিতভাবে শেষ করার যুদ্ধ নয়। এটি ততদিন অব্যহত থাকতে হবে এবং থাকা উচিত, যতদিন না পূর্ণ ফিলিস্তিনভূমি ইসরাইলের কব্জা থেকে মুক্ত হবে। এ কারণে আমাদের প্রস্তাব যুদ্ধবন্ধের নয়।
যদি ইসরাইল সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোম্বিং বন্ধ করে খোলাখুলি যুদ্ধের ময়দানে হামাসের মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে মোকাবেলা করুক। হামাস লড়াই করতে প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের একটি ট্যাঙ্ক ও একটি সৈন্যও অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন হামাসের প্রতিরোধযুদ্ধ অব্যহত থাকবে।
এজন্য অনুভূতিসম্পন্ন যেকোনো মানুষ ও সচেতন যেকোনো মুসলমানের দাবি- যুদ্ধবন্ধের পরিবর্তে ইসরাইলের একতরফা বোমাহামলার বন্ধ হওয়া উচিত। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাযুদ্ধ বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না। ইসরাইল তার পরাজয় আড়াল করার নিমিত্তে নিজের বিপর্যয়ের প্রতিশোধ নিরীহ শিশু নারী ও সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে নিচ্ছে। এই স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। এ যুদ্ধাপরাধ বন্ধের জোরালো দাবি ওঠা উচিত, হামাসের যুদ্ধ বন্ধের নয়। এ যুদ্ধ ইনশাআল্লাহ বিজয় অর্জিত হওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে।
দ্বিতীয় যে কথা আরজ করতে চাই- তা হলো, বারবার বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে এবং অনেক শান্তিপ্রিয় লোকদের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার কারণে ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থাৎ সেখানে দুই রাষ্ট্র কায়েম হওয়াকে সমাধান মনে করা হচ্ছে। ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্র, অবশিষ্ট অঞ্চল নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর প্রস্তাব, আমরা তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা প্রথম দিন থেকেই ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী। আমাদের পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা সেই প্রথম দিনই ইসরাইলকে পশ্চিমা অপশক্তির ‘জারজ সন্তান’ আখ্যা দিয়েছিল। আমরা এখনো সেই বিশ্বাসে অটল রয়েছি। কাজেই ইসরাইলের অধিকৃত অঞ্চল ইসরাইলের, এবং গাজা ও পশ্চিমতীর মুসলমানদের- এ প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর দাবি থেকে বিরত থাকা উচিত।
তৃতীয় কথা, সারাবিশ্বে এমনকি পশ্চিমা প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত মুসলমান সরকারগুলো একটি বিষয়ে চরম বিভ্রান্তির শিকার। তা হলো, পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষকরে আমেরিকার এক একচোখা নীতি হলো, যখনই কোনো জাতি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদ করার জন্য উঠে দাঁড়ায়, তখনই তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী-টেরোরিস্ট’ আখ্যা দিয়ে সারা দুনিয়ায় দুর্নাম রটানো হয়। এই নীতিতেই তারা আমাদের কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী মুজাহিদীনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। একটি দীর্ঘসময় পর্যন্ত আফগানিস্তানের তালিবানকেও টেরোরিস্ট বলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা নতজানু হয়ে একটেবিলে বসে আল্লাহর মেহেরবানীতে তালিবানদের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তালিবানই বিজয় লাভ করেছে। এই অভিন্ন নীতি তারা ফিলিস্তিনেও প্রয়োগ করেছে।
হামাস একটি রাজনৈতিক শক্তি। এটা নিছক যুদ্ধবাজ গোষ্ঠী নয়। আমার আক্ষেপ লাগে, কতক মিডিয়ায় তাদেরকে ‘যুদ্ধপ্রিয় গোষ্ঠী’ আখ্যা দেয়া হচ্ছে। অথচ এরা সকলে মুজাহিদ, পবিত্র জিহাদে রত। একটু আগে জনাব ইসমাইল হানিয়া (হামাস প্রধান) বলেছেন, এদের অধিকাংশই হাফেজে কোরআন। অন্যরাও কোরআনের অনেক সূরা মুখস্ত জানে। তিনি আরো বলেছেন, হামাসের সদস্যদেরকে বিশেষায়িত তারবিয়াত করা হয়। হামাসে ভর্তি হওয়ার পূর্বে তাদেরকে বিশেষ তরবিয়াতের নানা ধাপ অতিক্রম করতে হয়, তারপর হামাসে দাখিল করা হয়।
এরা সবাই প্রকৃত মুজাহিদ, যারা আত্মরক্ষায় লড়াই করছে। এ কারণে পশ্চিমারা ওদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে। অথচ আসল সন্ত্রাসী হলো ইসরাইল, যারা ৭৫ বছর থেকে ফিলিস্তিনে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে আসছে। কাজেই ‘হামাস একটি জনবিচ্ছিন্ন সংগঠন, এরা ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে না’- এ জাতীয় বিভ্রান্তিকর কথা থেকে বিরত থাকা উচিত। হামাস সমগ্র ফিলিস্তিন ভূমির মুখপাত্র।
চতুর্থ কথা হলো, ইতোপূর্বে অনেক উলামায়ে কেরাম ও নেতৃবৃন্দ বলেছেন এবং আক্ষেপ করেছেন যে, মুসলমানদের ওপর এহেন জুলম ও নির্বিচার হত্যা সত্ত্বেও, যেখানে মাসুম শিশু ও নারীর রক্তাক্ত বিভৎস ও ভয়ার্ত চেহারা সহ্য করার মতো নয়, এতদসত্ত্বেও মুসলিম সরকারগুলোর পক্ষ থেকে আশানুরূপ পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। কেবল মৌখিক নিন্দা-বিবৃতি ও সামান্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। কথা বাস্তব। আমরা সরকারগুলোর ত্রাণতৎপরতার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি আফসোসের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের শাসকগোষ্ঠী যে ধরনের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, তা এখনো করে দেখাতে পারেনি। ইসমাইল হানিয়াও আক্ষেপ করে সেই কথাই বলেছেন- ‘আমরা চাই না, আপনারা আমাদের পক্ষে সেখানে হামলা করুন। আমরা চাই আপনারা গাজাবাসীকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন এবং এতে কোনোরূপ ত্রুটি করবেন না।’
এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনাদের সম্মুখে শরীয়তের বিধান স্পষ্ট করতে চাই। শরীয়তের বিধান হলো, মুসলমানদের কোনো ভূখণ্ডের ওপর যদি অন্য কেউ দখলদারিত্ব কায়েম করে নেয়, কিংবা তাদের ওপর কোনো কাফির শাসক চেপে বসে, তখন মুসলমানদের ওপর জিহাদ করা ফরজ হয়ে যায়। এই জিহাদ প্রথমে সে ভূখণ্ডের মুসলমানদের ওপর ফরজ হয়, তারপর তৎপার্শ্ববর্তী মুসলিমদের ওপর ফরজ। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মুসলিমদের ওপর নিজ নিজ শক্তি স্বার্থানুসারে জিহাদ ফরজ হয়ে যায়।
আমি একজন তালিবে ইলম হিসেবে আরজ করতে চাই, বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদের ওপর এ অর্থে জিহাদ ফরজ- তারা নিজ নিজ সামর্থানুসারে সাধ্যমতো হামাস ও গাজাবাসীকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
আমি আপনাদের সম্মুখে কোরআনুল কারিমের দুটি আয়াত পড়ে শোনাব। আমি মনে করি, আয়াত দুটি আজকের এ সম্মেলনের মূল পয়গাম ও প্রধান ঘোষণা হওয়া উচিত, বিশ্বের সমগ্র মুসলমানদের প্রতি। প্রথম আয়াত, সূরা নিসায় আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিমদের লক্ষ করে বলছেন- ‘তোমাদের কী হয়ে গেল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য, যারা এ বলে দুআ করছে, ‘হে আমাদের রব! এ জনপদ, যার অধিবাসীরা জালিম, সেখান থেকে আমাদেরকে বের করে নিন। আর আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কাউকে অভিভাবকরূপে পাঠান এবং আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের সহায়করূপে প্রেরণ করুন। যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, আর যারা কফের তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। কাজেই তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৭৫-৭৬)
আল্লাহ তাআলা নারী শিশু ও দুর্বল পুরুষদের দোহাই দিয়ে বলছেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমরা এদেরকে উদ্ধার করার জন্য জিহাদ করছো না?
দ্বিতীয় আয়াত হলো- সূরা তাওবায় আল্লাহ তাআলা নবীজি সা:-কে লক্ষ্য করে বলেন- ‘আপনি সবাইকে বলে দিন, ‘যদি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানেরা, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আপনগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাস, আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং তাঁর (আল্লাহ্র) পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ্ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ২৪)
শেষ কথা হলো-
আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আরজ করতে চাই। আমাদের এ সম্মেলনে মুসলিম শাসকদের বেশ সমালোচনা হয়েছে। এর বেশিরভাগই যথার্থ ছিল। তানকীদ ও সমালোচনা করা নিশ্চয় আমাদের অধিকার। আমরা অবশ্যই একথার আদিষ্ট, যে বিষয়টিকে আমরা হক মনে করবো, তা শাসকশ্রেণীর কাছে পৌঁছে দেব। তবে আমি মনে করি- বিষয়টি ‘মুখাসামাত’ তথা ঝগড়াবিতর্কের আবহে নয়, বরং ‘মুফাহামাত’ তথা তাদের বোঝানো ও নসীহতের আবহে হওয়া উচিত। কারণ, আমাদের দ্বীন সকল মুসলিমের জন্য নসীহত তথা কল্যাণকামিতার আদেশ করেছে। ‘আননুসহু লিকুল্লি মুসলিম’ এর মধ্যে ‘আননুসহু লি উলিল আমর’ ও আহলে ইলমের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সে সূত্রে আমি বলতে চাই, আমি আমার অন্তরকে ভালোভাবে যাচাই করে, তারপর আল্লাহর দিকে রুজু করে এবং তাঁর কাছে দুআ ও ইস্তিখারা করে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি- ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত এমন আসে, যদি সে মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করা হয়, তাহলে শত শত বছর সে ভুলের মাশুল গুণতে হয়। প্রসিদ্ধ উক্তি আছে- ‘মুহূর্ত করেছে ভুল,
শতবর্ষ গুণেছে মাশুল।’
ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন হিম্মত ও সাহসিকতার, ত্যাগ ও কোরবানির সর্বোচ্চ পারাকাষ্ঠা দেখিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি সেই সঠিক সিদ্ধান্ত যথাসময়ে নিতে বিলম্ব করা হয়, তাহলে শত শত বছর ধরে তার ক্ষতি ও গ্লানির বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। আমি মনে করি, এখন মুসলিম উম্মাহ ইতিহাসের সেই যুগসন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে।
আপনারা সকলে অবগত আছেন, যা অস্বীকার করার উপায় নেই, সমগ্র ইসলামী বিশ্ব, মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত পশ্চিমা দাসবৃত্তির নির্মম শিকার। কেউ কি অস্বীকার করতে পারবে যে, আমরা গোলামী জীবনযাপন করছি না? সর্বক্ষেত্রেই চলছে এ গোলামী- অর্থনীতি, সমরনীতি রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে।
কিন্তু এ গোলামীর শেষ কোথায়? অথচ মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম দুনিয়াকে আল্লাহ তাআলা যে প্রাকৃতিক সম্পদ-সমৃদ্ধি দান করেছেন, তা অন্য কাউকে তিনি দেননি। মুসলিম উম্মাহর অবস্থান পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে। তাদের হাতে রয়েছে সেসব বিস্তৃত মরুঅঞ্চল, যদ্দ্বারা তারা সমগ্র দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। সুয়েজ খাল তাদের হাতে। এডেন উপসাগর তাদের হাতে। দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি তরল স্বর্ণ তথা তেলসম্পদ তাদের হাতে। তারপরও কেন তাদেরকে গোলামির জীবন কাটাতে হচ্ছে? এর কারণ কী?
কারণ একটিই, যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন। তিনি বলেছেন, মুসলমান অধিক হওয়ার পরও তারা খড়কুটার মতো ভেসে যাবে। কারণ, তারা জীবনকে বেশি ভালোবাসবে, মৃত্যুকে ভয় করবে এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ'কে পরিত্যাগ করবে। আজ আমাদের সুরতহাল সেটাই জানান দিচ্ছে।
হামাসের বীর মুজাহিদরা আজ আমাদের জন্য মুক্তির মহাসুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার, পশ্চিমা-গোলামীর জোঁয়াল কাঁধ থেকে ছুড়ে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে হামাস। যদি সমগ্র মুসলিম দুনিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গ দেয় এবং নিজেদের জন্য আত্মরক্ষার যৌথ পলিসি গ্রহণ করতে, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি আমেরিকা বৃটেন ও পশ্চিমাশক্তি আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কারণ, প্রভুত্ব আমেরিকার নয়, প্রভূত্ব একমাত্র আল্লাহর। সুপার পাওয়ার আমেরিকা নয়, আল্লাহই একমাত্র সুপ্রিমপাওয়ার ।
কাজেই যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, পেটে পাথর বাঁধার প্রয়োজন পড়লে আমরা পেটে পাথর বাঁধব, যেকোনো ত্যাগ ও কোরবানির প্রয়োজন পড়লে আমরা সে। কোরবানি দেব। গুলি ও কামানের সামনে আমরা বুক চিতিয়ে দাঁড়াব, তা হলে আমেরিকা বা দুনিয়ার কোনো শক্তি নেই আমাদের পরাজিত করতে পারে। আল্লাহ তাআলা এই হাকীকত ও বাস্তবতা বোঝার আমাদের তাওফীক দান করুন। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে নিজেদের দাসবৃত্তির কালো অধ্যায়ের ইতি টানার তাওফিক দান করুন। আমীন!!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা