রাজাপাকসেদের ঘনিষ্ঠ বলেই বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ!

শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে চলমান বিক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশানাল পার্টির নেতা রানিল বিক্রমাসিংহেকে।

প্রবীণ বিরোধী দলীয় এমপি রানিল বিক্রমাসিংহে শপথ গ্রহণ করেছেন এবং একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে তিনি নেতৃত্ব দেবেন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশা তার পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেন।

সোমবার তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে সঙ্ঘাতে ৯ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে দুইশ মানুষ।

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশা বলেন সংসদে এবং নতুন মন্ত্রিসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাবেন এমন যোগ্য ব্যক্তিকে তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করবেন।

বিক্রমাসিংহে কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে জড়িত আছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী পদে তার ষষ্ঠবার নিয়োগ। তবে কোনোবারই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি।

তাকে রাজাপাকশাদের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে তাকে নিয়োগ করা হয়েছে কারণ রাজাপাকশা পরিবারের সদস্যদের তিনি নিরাপত্তা দেবেন সে সম্ভাবনা বেশি এবং রাজপাকসেরা অনুরোধ করলে তাদের নিরাপদে দেশত্যাগের ব্যবস্থাও তিনি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বিরোধীদের মধ্যে বিক্রমাসিংহের ব্যাপক সমর্থন নেই এবং জনসাধারণও তাকে খুব একটা সমর্থন করে না।

রানিল বিক্রমাসিংহের নিয়োগে প্রতিক্রিয়া
রানিল বিক্রমাসিংহেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার খবরকে বেশিরভাগই অবিশ্বাস্য এবং হতাশাজনক বলে মনে করছেন।

বিক্রমাসিংহে একসময় রাজনীতিতে চতুর খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার প্রতি জনসমর্থন দ্রুত কমেছে। একসময় ক্ষমতাসীন তার ইউনাইটেড ন্যাশানাল পার্টি গত নির্বাচনে মাত্র একটি সংসদীয় আসন পেতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সংসদে তিনিই একমাত্র তার দলের প্রতিনিধি।

তার রাজনৈতিক ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয় বিরোধী দলের সদস্য হবার পরেও রাজাপাকসে পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা।

অনেকে মনে করেন, রাজাপাকসে ভাইরা যখন ২০১৫র নির্বাচনে ক্ষমতা হারান তখন বিক্রমাসিংহে তাদের আড়ালে থাকতে সাহায্য করেছিলেন। এখন আবার প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করাকে দেখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশার পদত্যাগের যে দাবিতে জনগণ তাকে অগ্রাহ্য করে সেটা ঠেকিয়ে রাখার একটা প্রচেষ্টা হিসাবে।

অনেকেই মনে করছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনসাধারণ যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে এই নিয়োগ তা বন্ধ করতে উদ্ধত একটা জবাব।

রানিল বিক্রমাসিংহের নিয়োগের পরপই লেখক ও সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ফিডেল ফার্নান্ডো এক টুইট বার্তায় বলেন, এই পদক্ষেপ 'আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পচনের পরিচয়।'

মাহিন্দা রাজাপাকসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীলঙ্কায় দেশজুড়ে কারফিউ বলবৎ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলেও বিকেলে তা পুর্নবহাল করা হয়েছে। দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য ও অফিস বন্ধ রয়েছে।

দেশটিতে খাদ্য ও জ্বালানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চরম অভাব ও দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।

কারফিউ শিথিল করার আগেই কলম্বোর বাসিন্দাদের পেট্রল স্টেশনের বাইরে লাইন দিতে দেখা যায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন, এরকম গুজবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার আদালত মাহিন্দা রাজাপাকশা, তার ছেলে এবং ১৫ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

তাদের দেশত্যাগ নিয়ে এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল বুধবার রাতে। কিন্তু কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন বলছে, খবরটি সত্য নয়। পদত্যাগের পরপরই মাহিন্দা রাজাপাকসে ত্রিঙ্কোমালির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।

শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, রাজাপাকসে এখনো সেই নৌ ঘাঁটিতেই আছেন। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কায় অনেক বিক্ষোভকারী সেই নৌঘাঁটিতে জড়ো হয়ে আছে।

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় এখনও বিক্ষোভকারীরা

এদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, দেশকে নৈরাজ্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য তার ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।

কিন্তু সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তিনি শ্রীলঙ্কার আসল সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছেন, তাকে যেতেই হবে।

প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে বলেন, তারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সব দলের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেছেন, প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির সরকারে পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার যে দাবি উঠেছে, সেটি নিয়েও কাজ করা হবে, তবে কখন এটি করা হবে, তার সময় সীমা সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

কিন্তু সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের এই ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা প্রেসিডেন্টের আশু পদত্যাগের দাবিতে এখনো অটল আছেন।

সূত্র : বিবিসি