০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতের হিন্দুরা অভিশাপ দিয়েছিল দানিশ সিদ্দিকিকে?

সিদ্দিকি ও তার কিছু ছবি - ছবি : সংগৃহীত

একটি বিরাট বড় ফাঁকা জমি। যেখানে পরের পরে লাশ। সকলেই কোভিডে মৃত। দাউ দাউ করে জ্বলছে চিতাগুলো। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বার্ডস আই ভিউতে এই ছবি তুলে আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিলাভ করেছিলেন দানিশ সিদ্দিকি। শুক্রবার কান্দাহারে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে সেই ছবি। যা নিয়ে এবার রম্যরচনা লিখলেন তসলিমা নাসরিন। কটাক্ষের সুরে তসলিমা লিখেছেন, হিন্দুদের সৎকারের ছবি তোলার জন্যই হয়তো দানিশের এই পরিণতি। এটাকেই হয়তো বলে 'কার্মা'।

কার্মা অর্থাৎ কৃতকর্মের ফল। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে 'কার্মা' বলাই এখন নয়া ট্রেন্ড। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দানিশ সিদ্দিকির ক্যামেরাবন্দি হিন্দু দেহগুলোর সৎকারের ছবি দেখে নাক সিঁটকেছিলেন অনেকেই। এই ছবি নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এনেছিল। সেইসময় দেশের অন্যতম এই সেরা চিত্রসাংবাদিককে মনে মনে 'অভিশাপ' দিয়েছিলেন অনেক হিন্দুই। ধর্মপ্রাণ সেই ব্যক্তিদের অভিশাপেই কি তবে দানিশের এই 'কার্মা'? এই নিয়েই কটাক্ষের সুরে ফেসবুক পোস্ট করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। রম্যরচনার মাধ্যমে দানিশের তোলা সেই ছবির তাৎপর্য বোঝাতে চেয়েছেন লেখিকা। সঙ্গে ঠুকেছেন গোঁড়া হিন্দুদেরও। কী লিখলেন তসলিমা?

বিতর্কিত লেখিকার কথায়, 'হোয়াট ইজ কার্মা কার্মা? কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভের সময় দিল্লিতে যে অসংখ্য চিতা জ্বলছিল, ও সেই চিতার, আর শশ্মানের ছবি তুলে বিদেশে বিক্রি করেছে।' তার আরো সংযোজন, 'হিন্দুদের ক্রিমেশানের আর ফিউনারেলের ছবি তুলেছে। এর কর্মফল হাতে নাতে পেয়ে গেছে। মরেছে। হিন্দুদের অসম্মান করা হয়েছে।' আবার প্রশ্ন তুলেছেন লেখিকা। বলেছেন, 'অসম্মান কেন হবে? বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন দানিশ। রয়টার্সে যখন চাকরি করছেন, কোথায় কী হচ্ছে তা দেখানো তার দায়িত্ব। আর আপনারাই বা কেন মনে করছেন চিতার ছবি তুললে হিন্দুদের অসম্মান করা হয়?'

দানিশ সিদ্দিকিকে বিশ্বের সেরা চিত্র সাংবাদিকদের মধ্যে গণ্য করা হতো। তিনি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কভারেজের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন সিদ্দিকি। সম্প্রতি, নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কয়েকটি ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করেছিলেন দানিশ। কান্দাহারের স্পিন বোলডাক এলাকায় সংঘর্ষের সময় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আরো সাংবাদিকদের মতোই নিজের কর্তব্যের পালনের জন্যই আফগানিস্তানে গিয়ে কভারেজ করছিলেন দানিশ। আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গার সংঘর্ষের ছবি তুলে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে আনাই ছিল তার কাজ। সাম্প্রতিক সময়ে তার ক্যামেরায় বারেবারে উঠে এসেছিল দিল্লির অক্সিজেন সঙ্কট, লকডাউন, করোনা ভাইরাস সংকটের নানা ছবি। দেশের বিভিন্ন স্থানের সেই ছবিগুলোতে সকলকে চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন প্রকৃত পরিস্থিতি।

ফেসবুকে একজন লিখেছেন, জামিয়া মিল্লিয়ার ছাত্র দানিশ সিদ্দিকীর বেশ জনপ্রিয় কিছু কাজ আছে। কিছুদিন আগে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভের পর গঙ্গার তীরের যে সারি সারি লাশের ছবি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তার পেছনে দানিশ সিদ্দিকীর বড় রকমের অবদান আছে। এছাড়াও ভারতে দাঙ্গার সময়ে তার তোলা বেশ কিছু ছবি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

তিনি আরো লিখেছেন, দানিশ মোটামুটি লিবারেল ধাচের ছিলেন (লিবারেল বলতে মানুষ এখন যেমনটা চেনে)। এরপরও দাঙ্গা আর ভারতের লাশের ছবি প্রচার করায় ওপারের গেরুয়াপন্থীরা তার ওপর বেশ ত্যাক্ত বিরক্ত ছিলো। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গেরুয়া শিবিরে মোটামুটি ঈদের আমেজ চলছে। তার মৃত্যু নিয়ে বিজেপির আইটি সেলের মিম, ট্রল আর হাসি ঠাট্টা চলছে হরদম।

সূত্র : এই সময় ও অন্যান্য


আরো সংবাদ



premium cement