২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব

ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব - ফাইল ছবি

ধর্ম ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতির গঠন, নীতি-নির্ধারণ, নির্বাচন ও সামাজিক গতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। জাতিগত, ধর্মীয় ও আঞ্চলিক পরিচয় মানুষের রাজনৈতিক পছন্দকে প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দেখা গেছে, ভোটাররা প্রায়ই এমন প্রার্থীদের সাথে একত্র হয়েছেন যারা তাদের ধর্মীয় পটভূমি বা মূল্যবোধ ভাগ করে নিয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়া ধর্মীয় পরিচয়কে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখে।
এবারের নির্বাচনের সময় সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরও উদ্ভব ঘটেছে, যেখানে প্রার্থীরা নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে সবসময় ধরনা দেয়। প্রার্থীরা সমর্থন পেতে ধর্মীয় নেতা বা গোষ্ঠীর সাথেও যুক্ত হয়েছে। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদমূলক প্রচারণা এবং উত্তেজনাও দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার সমাজে ইসলাম গভীরভাবে প্রোথিত। ইসলামী সংগঠন ও নেতারা উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। কিছু দল ইসলামী আচরণবিধি বাস্তবায়নের মতো ইসলামপন্থী নীতির পক্ষ সমর্থনে রাজনীতি করে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ও এখানে বেশ সক্রিয়।

‘ভিনেকা তুংগাল ইকা’ বা ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় নীতিবাক্য। এ দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি দেখার মতো। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সুকর্ন বেশ তৎপর ছিলেন। ইন্দোনেশিয়ার সমাজে কট্টরপন্থী ইসলামী দল প্রাধান্য পেয়েছে। তারা কঠোর ধর্মীয় রীতিনীতি ও নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পেরেছে। মধ্যপন্থী মুসলিম নেতা ও পণ্ডিতরা সহনশীলতা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসব নেতা একটি বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দোনেশিয়ার পক্ষে।

ইন্দোনেশিয়ায় কোনো কোনো সময় খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার খবর শিরোনাম হয়েছে। তবে দেখতে হবে, বিশাল একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কোনো ভয় ও হস্তক্ষেপ ছাড়াই তারা বসবাস করছে, ধর্মপালন করছে এবং ধর্মীয় রূপান্তর কখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি। ধর্মীয় স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় সরকার সক্রিয়। স্থানীয়রা খ্রিষ্টান গির্জা নির্মাণের বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ যে, গির্জাগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের গরিবদের ধর্মান্তরিত করার মিশন পরিচালনা করে।

গত ১৫ বছরে খ্রিষ্টান ও মূলধারার মুসলিমদের মধ্যে সম্পর্কের ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে। ৪০ বছর আগে, খ্রিষ্টানরা সমস্যা দেখা দিলে সুরক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীর দিকে তাকিয়ে থাকত, এখন তারা ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম মুসলিম সংগঠন নাহদাতুল উলামার দিকে ঝুঁঁকছে, কেবল সুরক্ষার জন্য নয়, জনগণ এখন দেখছে যে তৃণমূল পর্যায়ে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক এখন কত শক্তিশালী ও সম্প্রীতির। অনেক জায়গায় স্থানীয় পর্যায়ে খ্রিষ্টান ও মূলধারার মুসলিম নেতাদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্বের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং পেসানট্রেন, ‘ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল’-এ থাকে। কিছু জায়গায় নাহদাতুল উলামার যুব মিলিশিয়ারা ক্রিসমাস ও ইস্টার পরিষেবার সময় গির্জা রক্ষা করেন। বিদ্যমান আন্তঃধর্মীয় বন্ধন কত শক্তিশালী তা বিবেচনার জন্য এসব উদাহরণ যথেষ্ট।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার সফল হলেও সংখ্যালঘুদের হুমকির মুখে পড়লে সরকারি ব্যবস্থা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ধর্মীয় নাজুক বিষয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায় আঘাত করলে বিরাট মুসলিম জনসাধারণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভারতীয় ধর্মীয় নেতা মির্জা গোলাম আহমদ প্রতিষ্ঠিত দলের সদস্য তিনজন আহমদি তাকে, নবী মুহাম্মদ সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী করা প্রতিশ্রুত মসিহ বলে দাবি করেছিলেন- এতে বিক্ষুব্ধ জনগণ সিকুসিক শহরে তাদের হত্যা করে। পশ্চিমা মিডিয়া ওই ঘটনাকে আইএস পরিচালিত সন্ত্রাস হিসেবে প্রচার করে।

সুকর্ন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি। দেশটির ইতিহাসে তিনি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গেছেন। ডাচ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তার আলাদা কদর ছিল। সুকর্ন ‘গাইডেড ডেমোক্র্যাসি’ নামে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালু করায় সংসদীয় ব্যবস্থা কোণঠাসা হয়। তিনি কমিউনিজম ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। তবে তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল আগ্রাসী। তার ক্যারিশমা, বক্তৃতা দক্ষতা এবং বিপ্লবী ভাবমর্যাদা জনগণের আনুগত্য ধারণ করেছিল। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির পরও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। স্বৈরশাসক হিসেবে তার ৩০ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব ছিল এবং তার হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। তখন ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি কিছুটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ইরিয়ান জায়া, আচেহ ও পূর্ব তিমুরের মতো অঞ্চলে সীমান্ত বিরোধ দেশটিকে জর্জরিত করে।

সুকর্নর জোট নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ এবং উপনিবেশবিরোধী অবস্থানকে কেউ কেউ হুমকি হিসেবে দেখেছেন। চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ব্রিটেনসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য ও গবেষণা বিভাগের মতে, কমিউনিস্টবিরোধী গণহত্যা উসকে দিতে সুকর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন, ফলে কয়েক হাজার লোক মারা যায়। প্রোপাগান্ডা অপারেশনগুলো গোপনে সুকর্নর উৎখাতকে সমর্থন করেছিল, যার ফলে জেনারেল সুহার্তোর অধীনে ৩২ বছরের সামরিক একনায়কতন্ত্রের উত্থান ঘটে। ১৯৬৬ সালে সুহার্তোর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সুকর্নকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

সুকর্নের সাথে ধর্মের সম্পর্কটি বেশ জটিল। তিনি মনে করতেন আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম নিয়ে মানুষ, তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল ছিলেন, কেউ কেউ বলছেন তিনি বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীও ছিলেন। তার আধ্যাত্মিক প্রবণতা ইসলাম ও ‘জাভানিজ রহস্যবাদ’ উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত। তিনি মাঝে মধ্যে নিজেকে ‘ঈশ্বর-রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ‘ওয়াহিউ’-এর জাভানিজ ধারণায় বিশ্বাস করতেন, যা প্রজাশাসনের জন্য ‘ঐশ্বরিক আদেশ’ পেতেন বলে মনে করা হতো ও প্রচার করা হতো। এই বিশ্বাস ও কর্ম তাকে সর্বধর্মতত্ত্বে ভালোবাসার দিকে পরিচালিত করে। তার প্রণীত পঞ্চশীলা দর্শনের প্রথম নীতি হলো- ‘কেতুহানন ইয়াং মহা এসা’, যার অর্থ- ‘এক এবং একমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস’। তিনি সব ইন্দোনেশীয়কে একীভূত করতে চেয়েছিলেন। সুকর্নর মেয়ে সুকমাবতী সুকর্নপুত্রী ২০২১ সালে ‘সুধি ওয়াদানি’ নামে একটি রীতিতে ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। ওই সময় হিন্দুত্ববাদীরা সেখানে বিরাট শোডাউন করে।

কিছু পণ্ডিত সুকর্নকে সর্বেশ্বরবাদী-একেশ্বরবাদী বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সর্বেশ্বরবাদ, ‘প্রকৃতিতে দেবত্ব দেখা’ বা ‘সব কিছুতে ঈশ্বর দেখা’ এবং একেশ্বরবাদ ‘এক ঈশ্বরে বিশ্বাস’ উভয় উপাদানকে একত্র করেছিলেন। অনেকে এটিকে ভণ্ডামি বলে আখ্যায়িত করেছেন ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার মিশ্রণকে ক্ষমতায় থাকার কারণ বলে মনে করেছেন। সেখানের আলেমরা ইসলামের বিরুদ্ধে ওই প্রচেষ্টাকে বড় আঘাত মনে করেন ও সুহার্তোর আগমনকে জোর সমর্থন দেন।

সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা সুহার্তো ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ‘নিউ অর্ডার রেজিম’ নামে পরিচিত তার প্রশাসনে বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। সুহার্তোর তিন দশকের শাসনামলে তিনি ইন্দোনেশিয়াকে অতি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দান করেন। সুহার্তোর প্রশাসন অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করে বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। ফলে এই সময়ের মধ্যে দেশটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। সুহার্তোর সরকার রাজনৈতিক বিরোধিতা, ভিন্নমত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করেছিলেন।

সেন্সরশিপের কাঁচি, নির্বিচারে গ্রেফতার ও দমননীতি সাধারণ বিষয় ছিল। সমালোচকরা দেখেছেন, সুহার্তোর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা উল্লেখযোগ্য সম্পদ অর্জন করেছিলেন; দুর্নীতি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী মহলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর সুহার্তো কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেন। নৃশংস অভিযানে প্রাণ হারায় লাখ লাখ মানুষ। সুহার্তো দেশকে কঠিন হাতে পরিচালনা করে উন্নতির মহাসড়কে তোলেন। তিনি ইসলামী ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলতে জনগণকে উদ্বুুদ্ধ করেন। স্ত্রীসহ হজব্রত পালন করেন এবং সৌদি শাসকগোষ্ঠীর সাথে সখ্যতা গভীরতর করেন।

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল অঞ্চল এবং ইন্দোনেশিয়ার একমাত্র প্রদেশ যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে শরিয়াহ আইন প্রচলিত। প্রাদেশিক সরকার ইসলামী আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেমন- সমকামিতায় লিপ্ত যুগলদের গ্রেফতার করতে পারলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এক হাজার গ্রাম স্বর্ণ বা এর সমপরিমাণ ৩৮ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কারের বরাদ্দ রয়েছে। আচেহর সবখানে ব্যভিচারের অপরাধে পাথর মেরে হত্যার আইন অনুমোদিত। অপরাধে শাস্তি হিসেবে বেত্রাঘাতও দেয়া হয়। প্রাদেশিক শরিয়াহ পরিষদের সেক্রেটারি ফয়সাল আলী জানান, আইন অমান্যকারীদের সতর্ক করাই জনসমক্ষে বেত্রাঘাতের উদ্দেশ্য। সাধারণ আইনে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর অপরাধীদের কারাগারে পুরে রাখার চেয়ে এটি একটি ভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি শাস্তি। তিনি বলেন, ইসলামী শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করা গেলে অপরাধ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। অন্যান্য প্রদেশের সাথে আচেহর তুলনা সেটি প্রমাণ করে। আচেহ প্রদেশ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসসহ যথেষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ।

পুরো ইন্দোনেশিয়ায় তাবলিগ জামাত কাজ করে। অনেক ইসলামী দল রাজনীতির সাথে জড়িত। এবারের নির্বাচনে পৃথকভাবে উম্মত পার্টি (চরম মৌলবাদী ইসলামী দল) অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও নাহদাতুল উলামা (এনইউ), ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম পার্টি (পারমুসি), ইন্দোনেশিয়া ইসলামিক শরিয়াহ পার্টি (পিএসআইআই) ও ইউনিয়ন অব ইসলামিক এডুকেশন পার্টি (পার্টি), পৃথক ও যৌথভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়ে থাকে।
১৯৯৮ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় শরিয়াহ ও গণতন্ত্রের রাজনৈতিক অর্থনীতি ভালোভাবে কাজ করছে এবং জনসাধারণের অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা বাড়ছে। ইন্দোনেশীয় সরকার ইসলামী ব্যাংকিং এবং হালাল পণ্যের নিশ্চয়তাসহ শরিয়াহ প্রভাবিত অনেক রাষ্ট্রীয় আইন চালু করেছে। শরিয়াহ অর্থনীতি গতিশীল এবং বিকশিত ধারণা বলে প্রমাণিত হয়েছে। শরিয়াহ অর্থনীতির প্রবক্তারা মুসলমানদের জন্য আরো অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার চান, তবে এটি ইসলামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক দৃঢ়তাকেও প্রতিফলিত করেছে।

মারুফ আমিন, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট (২০১৯-২০২৪), শরিয়াহ অর্থনীতি উদ্যোগের পেছনে মূল ব্যক্তিত্ব। সামাজিক ন্যায়বিচার ও শরিয়াহ অর্থনীতির লক্ষ্য ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়িয়েছে, এটি এখন বিশ্বাস করা হচ্ছে। অমুসলিম ইন্দোনেশীয়রা এখন নিজেদের ধর্ম প্রচার ছাড়া কোনো বিরোধী অবস্থানে নেই। শরিয়াহ অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং বৈষম্য তৈরি করতে পারে বলে কিছু কিছু সমালোচক বলছেন। যেমন- হালাল অর্থনীতির ধারণাটি অজান্তেই অমুসলিমদের বাদ দিতে পারে। শরিয়াহ অর্থনীতির প্রতি রাষ্ট্রের সমর্থন ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামীকরণের একটি নতুন প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে। শরিয়াহ-প্রভাবিত আইনগুলো প্রাধান্য পাওয়ার সাথে সাথে ইন্দোনেশিয়াকে অবশ্যই ধর্মীয় নীতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে বলে মনে করি।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement