২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অন্য দৃষ্টি

গ্রাম উন্নয়নের ভিত্তিহীন দাবি

গ্রাম উন্নয়নের ভিত্তিহীন দাবি - নয়া দিগন্ত

উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। সরকারি মহল থেকে উচ্চকণ্ঠে বলা হচ্ছে- গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন অগ্রাধিকার। উন্নয়নের কারণে গণতন্ত্র ব্যাহত হলেও সেটি মেনে নিতে হবে। জনগণ এই মনোভাবকে গ্রহণ করুক বা না মানুক, সরকার তার কথিত উন্নয়নের ছকে এগিয়ে চলেছে। এখানেও বিতর্ক জমে উঠেছে। বাংলাদেশে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের যে হিড়িক, সেটিকে উন্নয়ন বলা যায় কি না। রড ইট সিমেন্ট সুড়কির মিশ্রণে নির্মিত দৈত্যাকার স্থাপনাই উন্নয়ন, ভিন্ন কোনো যুক্তি মানতে নারাজ সরকার। এর সাথে শহরের কিছু উচ্চ ভবন, বিদ্যুতের চোখধাঁধানো রশ্মি দিয়ে পুলকিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অদূরে অবস্থিত বস্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে সরকার বিব্রত হয় না। পাল্টা বলা হয়, গ্রামগঞ্জে গিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের আসল চিত্র পাবেন। সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এভাবে যুক্তি দিয়ে বোঝানো হয়।

মূলত বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে যোগাযোগ খাতে বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তার অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে মেগা প্রকল্প উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, বৃহৎ সেতু, টানেল নির্মাণ ঠিকমতো চলছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে হাজারো প্রশ্ন আছে। সাধারণত আমাদের ব্যয় হওয়ার কথা ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের মতো। দেখা গেছে, এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। এর বেশির ভাগ হয়েছে চীনা ঋণে। ওই দেশটির ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ আছে। সারা বিশ্বে চীনা ঋণকে ফাঁদ হিসেবে দেখা হয়। নীতি-নৈতিকতার কোনো ধার তারা ধারে না। কেবল লাভই তাদের কাছে বিবেচ্য। এই দেশে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত একটি শ্রেণী ধনী হয়ে উঠে এবং বিদেশে সীমাহীন মুদ্রাপাচারের সাথে এসব অবকাঠামো নির্মাণের সম্পর্ক পাচ্ছেন গবেষকরা।
এর ফলাফল হিসেবে মানুষের আনুপাতিক হারে জীবনমানের কোনো উন্নতি আসেনি। জনসাধারণের বৃহত্তর অংশ কেবল খাদ্য কিনতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য, আগের মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি ধসে গেছে। সমাজব্যবস্থা দুটো শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে বিত্ত-বৈভবের মালিক, অন্যদিকে গরিব নিঃস্ব হয়ে যাওয়ারা। শহুরে চোখধাঁধানো অট্টালিকার পাশে বস্তির করুণ জীবন অসংখ্য মানুষের নিয়তি এখন। উন্নয়ন দেখার জন্য গ্রামে যাওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে সেটি পুরোই ফাঁকিবাজি। গ্রামের অবস্থা শহরের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। সেখানেও মানুষ দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্তরা এখন অর্থ-বিত্তের মালিক।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামে বেকারের সংখ্যা দ্বিগুণ। দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এর মধ্যে গ্রামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার, শহরে সাত লাখ ৬৯ হাজার। অবশ্য বিবিএসের জরিপ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা যেসব মানদণ্ড অনুসরণ করে বেকারত্ব নির্ধারণ করে, বিবিএস সেটি অনুসরণ করে না। এর সাথে রাজনীতির সংশ্রব রয়েছে। তারা সরকারের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যায়। সাধারণত রাজনৈতিক নেতারা যেই বক্তব্য দেয় তারা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সেটি সমর্থন করার চেষ্টা করে। সে জন্য নিশ্চিত করে বলা যায়, দেশে প্রকৃত বেকারত্বের হার বিবিএসের প্রদর্শিত হারের চেয়ে অনেক বেশি।

২০১৯ সালে বিবিএসের করা অন্য একটি জরিপে গ্রামে বেকারত্বের সংখ্যা বলা হয়েছে ৭৭ লাখ। এরপর উপর্যুপরি করোনা সংক্রমণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে সাথে দেশে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে বেকারত্ব পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এই সময় শহর থেকে গ্রামে একটি অভিবাসন ঘটেছে। কিন্তু সেখানে আয় উপার্জন করার সুযোগ বাড়েনি। কৃষিই গ্রামীণ অর্থনীতির একমাত্র অবলম্বন। একজন মানুষের বিপরীতে পৃথিবীতে সবচেয়ে কম কৃষিজমি বাংলাদেশে। এ অবস্থায় গ্রামীণ বেকার তরুণদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিচ্ছিন্নভাবে সেখানে একটি শ্রেণী তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে প্রবাসে গিয়ে। এর সাথে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে বেকার বিপুল গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আবার শহরের দিকে ফিরছে।

সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে শহরে যেটুকু সুযোগ আছে, গ্রামে সেটি নেই। একজন গর্ভবতী নারী বিশেষ অবস্থায় বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি সংস্থা থেকে সাহায্য পান। বৃদ্ধ অসহায়দের ক্ষেত্রে এই সুযোগ কিঞ্চিৎ শহরে রয়েছে। একই কথা বলা যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সন্ধানের ক্ষেত্রেও। শিক্ষা-প্রশিক্ষণের কিছুটা সুযোগ শহরে পাওয়া যায়, সেটুকু গ্রামে নেই। সরকারি তত্ত্বাবধানে ঘর নির্মাণের একটি প্রকল্প নেয়া হয় গ্রামে। নিঃস্ব দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের দেয়ার কথা। ওই প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের কোনো শেষ নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি দলের লোকেরা মিলে তা করছে। রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণের যে অভিনব দুর্নীতি আমরা শিখেছি, এখানেও তার প্রয়োগ দেখা গেল। বহু ঘর বসবাসের উপযোগী হয়নি। অনেকগুলো এখন ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়েছে ঘরে উঠার আগেই। এ ছাড়া এসব ঘর দরিদ্র শ্রেণীর বদলে সচ্ছল লোকদের দখলে চলে যাওয়ার ঘটনাও বহু ঘটেছে। গ্রামীণ উন্নয়নের যে দাবি সরকারের শীর্ষ মহল থেকে করা হচ্ছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের মতোই তা আসলে স্বপ্ন ভাঙার গল্পই হয়েছে।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
বার্লিনে ফিলিস্তিনিপন্থী ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে জার্মান পুলিশ সেভ দ্য চিলড্রেনে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বনশ্রীতে কিশোরী গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার সৌদি আরবে আরব ও ইইউ কূটনীতিকদের গাজা নিয়ে আলোচনা ইউক্রেনকে দ্রুত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩

সকল