০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তৃতীয় নয়ন

মঞ্চ ভেঙে পড়া

মঞ্চ ভেঙে পড়া - নয়া দিগন্ত

অনেক আগের কথা। এরশাদবিরোধী প্রচণ্ড আন্দোলন চলছে। ঢাকার ধামরাইতে বিএনপির জনসভা। প্রধান অতিথি বিএনপি নেত্রী ও ৭ দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। বংশী নদীতে আমরা খোলা হাওয়া খেতে খেতে নৌকায় গেলাম। সাথে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’র সিনিয়র সাংবাদিক কাজী জাওয়াদও ছিলেন। তিনি পরে লন্ডনে বিখ্যাত বিবিসিতে যোগ দেন। আর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিএনপির বড় নেতা। তিনিও ছিলেন ওই বিরাট জনসভায়। মওদুদ আহমদ সাহেব কিছু দিন পরে এরশাদ সরকারে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পরে ভাইস প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন।

আমরা বেগম জিয়াকে নিয়ে হিন্দু বাড়ির আঙিনা দিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দু মহিলারা হঠাৎ ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম শুরু করে দেয়। আমাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, এর কারণ হচ্ছে, হিন্দু মহিলারা অত্যন্ত সুন্দরী মহিলাকে তাদের দেবী দুর্গার প্রতিভূ বলে বিশ্বাস করেন। শর্টকাট পথ অবলম্বন করতে আমাদেরকে হিন্দু বাড়ির আঙিনা দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেক কষ্টে বেগম জিয়া মহিলাদের থেকে তার পা ছাড়িয়ে নেন। আমরা এগিয়ে চলেছিলাম। হিন্দু মহিলারা যেভাবে বেগম জিয়ার পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন, তা অবাক ব্যাপার।

ধামরাই-এর একটি স্কুল মাঠে দলীয় জনসভা। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি। সবাই ‘আপসহীন জননেত্রী বেগম জিয়াকে দেখতে চায়। স্কুল ঘরের লম্বা টিনের চালেও বহু মানুষ উঠেছে। তখন ঠিক দুপুর বেলা। প্রচণ্ড রোদ, মানুষ হুড়মুড় করে চালা ভেঙে পড়ল। আমার মনে পড়ে যায়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে তার ঘাতক, মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের সপরিবারে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় আশ্রয় গ্রহণ এবং তাকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়ে মধ্যরাতের আঁধারে বিরাট গাছের ডাল আমাদের সামনেই পানিতে ভেঙে পড়া। যা হোক, ধামরাইয়ের টিনের চালা ভেঙে পড়ার ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি।

এ দেশের আরেক বড় দল, আওয়ামী লীগের ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে মঞ্চ করে মিটিং হচ্ছিল। কাঠের তৈরি বেশ উঁচু মঞ্চ। মঞ্চের ভেতরে বসে ‘কলরেডি’র লোক মাইক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ, ব্যাপার কী? খবর হলো, মঞ্চ ভেঙে গেছে। এ দলের অনেক বিখ্যাত নেতা-নেত্রী এতে আটকা পড়েছেন।

বিএনপির জনসভায় বিরাট জনতার চাপে টিনের চালা ভেঙে যায়। আর আওয়ামী লীগের জনসভায় নেতাদের ভিড়ে মঞ্চ ভেঙে যায়।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মরহুম মোহাম্মদ হানিফের পুত্র মোহাম্মদ সাঈদ (খোকন) তখন ঢাকার একক মেয়র। তিনি ঢাকার পরীবাগে সমাবেশ ডেকেছেন গুরুত্বপূর্ণ মশকনিধন কর্মসূচি উপলক্ষে। কিন্তু সেখানে তার উপস্থিতিতে তার মঞ্চও ভেঙে পড়েছিল। কারণ, দলীয় নেতাদের ভিড়।

পত্র-পত্রিকার খবরে আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ছাত্রলীগের দাওয়াতে। কিন্তু সমাবেশের মঞ্চ হঠাৎ ভেঙে বিপত্তি বাধায়। ক্ষুব্ধ নেতা ওবায়দুল কাদের সে দিন বলেন, ‘এত নেতার দরকার নেই, সবাই মঞ্চে উঠবেন কেন? চেহারা দেখানোর দরকার নেই; কাজ করেন। প্রধান অতিথি বক্তৃতা দেয়ার সময় সবাই দাঁড়াতে হবে কেন? যারা ফটো তুলতে চান, তাদের দরকার নেই।’ উল্লেখ্য, তিনি নিজেও সে দিন আহত হয়েছিলেন।

আগেও এমন ঘটনা ঘটত, তবে কম। এখন বেশি ঘটে। কারণ বক্তার চেয়ে নেতা বেশি; নেতার চেয়ে কর্মী বেশি। সবাই মঞ্চ দখল করতে চায়। আর সবার ভারে মঞ্চ ভেঙে পড়ে। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। এখন দেখা যায়, (হয়তো কেন্দ্র থেকে) আগত প্রধান অতিথি বা প্রধান বক্তা বক্তব্য রাখার সময় মঞ্চের সবাই দাঁড়িয়ে যায় এবং নেতা বা নেত্রীর দুই পাশে ওরা দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ এগুলো নিষ্প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement