০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেশ জাতি রাষ্ট্র

ইলেকশন ইলেকশন খেলা

ইলেকশন ইলেকশন খেলা - নয়া দিগন্ত

সরকার সব বিরোধী বংশকে নির্বংশ করে ইলেকশন ইলেকশন খেলায় মেতে উঠেছে। অবশেষে দেখা গেল ময়দান খালি। খেলা খেলবে কার সাথে? নির্বাচন খেলার প্রাক্কালে প্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্কট। সবকিছু করেও এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে পারছে না তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের খেলা শেষ হয়ে গেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দেয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সম্মিলিত সমাবেশে তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ তোষামোদ করে ক্ষমতায় থাকতে চায় না। কারণ জনগণই তার শক্তি। এ মাটি আমাদের। এখানে কারো খবরদারি বরদাশত করা হবে না। আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছরে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় জনগণ শান্তিতে রয়েছে। দেশের জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার মেয়ে হিসেবে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে সভায় অবহিত করেন। তার দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর একজন গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন- ইহা সত্য! ইহা সত্য! ইহা সত্য! আসলেই এসব সত্য কথা। তিন সত্যের পর আর তো কোনো কথা থাকে না। আসল কথায় আসি। ওবায়দুল কাদের এই নির্বাচনকে স্বভাবসুলভ ভাষায় খেলা বলে অভিহিত করে আসছিলেন। তিনি সেমিফাইনাল, ফাইনাল ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ করে খেলার ধারাবাহিক বিবরণ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এখন খেলতে খেলতে খেলার মাঠ খালি করে ফেলেছেন। হঠাৎ করে তাদের খেয়াল হলো ২০১৪ সালে খোলা মাঠে গোল দিয়ে তারা বিপাকে পড়েছিলেন। বিদেশের লোকেরা নির্বাচন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এখন প্রার্থীবিহীন খেলা যাতে আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধরদের কাছে দৃষ্টিকটু না হয়, সেজন্য তারা ডামি প্রার্থীর কথা বলছেন।

গ্রামদেশে আগে খেলা হতো। গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবাঁধা, হাডুডু, ফুটবল আরো কত কী। প্রতিটি খেলারই কিছু নিয়ম-কানুন সবাই মেনে চলত। আবার কিছু কিছু দুষ্টলোক সুন্দর খেলাকেও অসুন্দর করে ফেলত। যেমন ধরুন হাডুডু খেলায় মাঠে ব্লেড পুঁতে রাখত, ফুটবলে হারলে মারামারি বাধিয়ে দিতো। কোনোক্রমেই পরাজয়কে মেনে নিত না। আমাদের সরকারি রাজনীতির খেলোয়াড়দের কোনোক্রমেই হারলে চলবে না। তাই খেলার মাঠ উজাড় করে খালি মাঠে গোল দেয়ার বাসনা। ২০১৪, ২০১৮ তারা একই কাজ করেছে। অবাক লাগে এটা ভাবতে যে, গাঁও গেরামের দুষ্ট লোকদের মতো তারাও দুষ্টবুদ্ধি আঁটছে।

গত ২৮ অক্টোবর ঘটনার কথাই ধরুন না কেন। এর আগের সমাবেশগুলো হতে দিয়েছে এই কারণে যে বিদেশে চাপ ছিল। আর দেশের লোকদের দেখানো দরকার ছিল যে, তারা কত ভালো হয়ে গেছে। যখন তারা দেখেছে যে ওবায়দুল কাদের কথিত ফাইনাল খেলায় সাধারণভাবে স্বাভাবিকভাবে জেতা যাবে না, তখনই তারা ওই গ্রামের ব্লেড পেতে রাখার মতো খারাপ কাজটি করেছে। সেদিন একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলছিলেন যে, আওয়ামী লীগের লোকেরা সারা দেশের লোকদেরই বোকা মনে করে? অথবা জেনেশুনেই কি তারা বিষপান করে? বিএনপির ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলছিলেন আর একজন। সেটির উত্তরে ওই প্রবীণ ব্যক্তি বললেন যে, যারা সাধারণভাবে স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করে তাদের পক্ষে কি অসম্ভব অথবা অন্যায্য চিন্তা করা সম্ভব! ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির পর রাজনীতির ইতিবাচক ধারাটি নেতিবাচকে পরিণত হয়েছে। বিএনপির সব শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অফিসটি পুলিশ দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন চিঠি দিতে এসে তালাবদ্ধ অফিস দেখেছে। কাউকে চিঠি দেয়ার মতো না পেয়ে চেয়ারে রেখে গেছে।

তালা কে দিয়েছে? পুলিশ বলছে তারা দেয়নি। প্রশাসন বলছে তারা দেয়নি। বিএনপি তো নিজের অফিস নিজেরাই তালা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তাহলে সেখানে রাজনীতির ভূত এসে তালা লাগিয়ে গেছে। বিএনপির অফিস এখনো তালাবদ্ধ আছে। নেতাদের নামে করা এক যুগের পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে যারা যোগ্য প্রার্থী তারা যাতে অযোগ্য হয়ে যায় সে ব্যবস্থা সরকার করেছে। ভাবলে অবাক হতে হয় যে, এই মামলাগুলোর মীমাংসা হয়েছে সুপারসনিক গতিতে। বিএনপি আগেই বলেছিল যে, তাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী হাজার হাজার মামলায় অভিযুক্ত। নির্বাচনের পূর্বক্ষণে পুলিশ তাদের নিত্যদিন খুঁজছে। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ধানক্ষেত থেকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। মুখোশধারীরা বাড়ি বাড়ি হামলা করছে। প্রকাশ্যে মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা। এমনকি নেতাকর্মীদের আত্মীয়স্বজনকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির ৫০ লাখ লোক মামলার আসামি। জামায়াতেরও একই অবস্থা। জেলে আর জায়গা নেই।

২৮ অক্টোবর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির ৯ হাজার ৭১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রতিদিনই মফস্বলে, জেলায় জেলায় নতুন নতুন আজব গজব মামলা হচ্ছে। পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য অতীতের রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। এই যখন প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থা তখন এই সেদিন প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের খেলা শব্দটিকে ব্যবহার করে বললেন, ‘আসুন খেলায়, দেখা যাক কে কত দৌড়াতে পারে।’ খেলার উদাহরণটা এমন এসেছিল যে, খেলোয়াড়দের হাত-পা বেঁধে এমনকি চক্ষু বেঁধে আপনি বলছেন খেলুন! দৌড় দেন। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে শেষের দিকের একটি সংলাপ ছিল এরকম, ‘আপনাদের এই উপহাস নির্মম কিন্তু নিরর্থক নয়’।

প্রকৃত বিরোধী দলকে এভাবে নাস্তানাবুদ করার পর রাজকীয় বিরোধী দলকেও যেন তাদের প্রয়োজন নেই। সেই গৃহপালিত বিরোধী দলকে ও মহাজোটের নেত্রীবৃন্দকেও তারা এখন আর পাত্তা দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মহাজোটের মহামহিম নেতাদের বাদ দিয়ে মাত্র দুটো আসন তাদের জন্য খোলা রেখেছে। মহাজোট ভিতরে ভিতরে মহাগোস্যা। এসব নেতা উল্টোপাল্টা বলছেন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গী খোঁজার দরকার নেই। তার মানে এখন আর মহাজোটের মহাসহযোগিতার তাদের আর প্রয়োজন নেই। ওবায়দুল কাদেরের উল্টা বলছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলছেন, জোটের সঙ্গেই নির্বাচন। খুব মজার কথা গৃহপালিত বিরোধী দল কারা হবে- তা নিয়েও ভেতরে ভেতরে প্রতিযোগিতা চলছে। রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টি বুদ্ধি করে বাগিয়ে নিয়েছে জিএম কাদের। নির্বাচন প্রতিযোগিতায় রওশন এরশাদ হারাধনের একটি মেয়ে হয়ে গেছে। এদিকে তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএফের মধ্যে তাঁবেদারির প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সদ্য যোগদানকারী জেনারেল (অব:) ইব্রাহিমও বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান বলে খায়েশ প্রকাশ করেছেন। এদিকে হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জোটগতভাবেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল। জাতীয় পার্টি ২৮৭ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জিএম কাদেররা বড় চাপ দিতে চান। অবশেষে সমঝোতা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আওয়ামী লীগ নিজ ঘর, মহাজোট ও জাতীয় পার্টি নিয়ে ত্রিশঙ্কু সমস্যায় রয়েছে। সেখানেও খেলা জটিল ও কুটিল হয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা।

এবার দেখা যাক নিজ ঘরানার দিকে। প্রতিটি আসনে গড়ে নৌকার প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১১ জন। নৌকা পেয়েছেন একজন। বাকি ১০ জন এখন কী করবেন? বিগত দু’টি নির্বাচন এদের ষোলআনা লোভী বানিয়ে দিয়েছে। এমপি মানেই শতকোটি টাকা। করমুক্ত গাড়ি। উন্নয়নের লাখো কোটি টাকা। সামাজিক মর্যাদা। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। সুতরাং ‘তারা সবাই রাজা হতে চান তাদের রাজত্বে’। ঐ দুটো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিশ্চিত করলেই অনিবার্য বিজয়। শেষ সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতিকে সরকারি প্রার্থীর বিপরীতে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হয়ে যেত বিদ্রোহী। এসব বিদ্রোহী অবশ্য স্থানীয় সরকারের পর্যায়ে বেশি হতো। তবে বিদ্রোহী হয়েও যদি কেউ জিতে আসত তাহলে সাত খুন মাফ। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এবং ক্ষমতাকেই মূল্য দেয়। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে গাজীপুরের বিদ্রোহী বীর জাহাঙ্গীরের মতো অনেককেই আবার লুফে নেয়া হয়েছে। কারণ ক্ষমতা বারবার দরকার। এখন আওয়ামী লীগ প্রধান উল্টো কথা বলছেন।

আগেই বলেছি, খেলা অতিমাত্রায় খেলতে গিয়ে মাঠ শূন্য হয়ে গেছে। অতীতের ঐতিহ্য অনুযায়ী আওয়ামী প্রার্থীরা অন্য প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী বিদায় করে বিজয়ী হতেন। খোলা মাঠের এই বিজয় এবার তাদের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পাশ্চাত্য বলেছিল নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এই বদনাম ঘোচাবার জন্যই শেখ হাসিনার অনন্য ঘোষণা : ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ডামি প্রার্থী দিয়ে শূন্যতা পূরণ করতে হবে। যেকোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন- বিগত নির্বাচনগুলোর বিপরীতে এই ঘোষণা আওয়ামী শিবিরে চাঞ্চল্য এনে দিয়েছে। ডামি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে। অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, তাদেরও নাকি ডামি মনোনয়ন পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করতেও নৌকার প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া বেশ কিছু নেতা ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে মনোনয়ন হারানো কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। এখন পর্যন্ত দুই ডজন সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, বর্তমান সংসদের ৭১ জন সদস্য নৌকার মনোনয়ন হারিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন নৌকার বিপক্ষে লড়েও জয় পেতে পারেন তারা। তাছাড়া নতুন নতুন মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন যেসব জনপ্রিয় ও মাঠে ময়দানে উল্লেখযোগ্য তারাও প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটির সুবিধা নিতে চাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা অনেক হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এছাড়া যে ৩০ জন উপজেলা ও জেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছিলেন তাদের অধিকাংশই মনোনয়ন পাননি। প্রধানমন্ত্রীর স্বতন্ত্রের ধারণায় এখনো তারাও উজ্জীবিত হয়েছেন।

এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগই অবশেষে আওয়ামী লীগের বিপরীতে প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। প্রতিটি আসনে যে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তারা এখন মাঠ ছাড়তে নারাজ। দীর্ঘদিন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা এমপিদের বিরুদ্ধে লড়তে অনড় অনেক প্রার্থী। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্রও কিনেছেন অনেকে। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এ নিয়ে টেনশনে আছেন দলের অনেক প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যতই এখন বলুন যে, এটা তাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত। প্রকারান্তরে এটি তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ সারা দেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী যে হাওয়া বইছে নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটতে পারে। বিশেষ করে সরকার যদি সত্যি সত্যি এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নির্বাচনকে নমনীয়ভাবে দেখে এবং ভোটার সংখ্যা যদি বেড়ে যায় তাহলে বিপরীত ভোটের জোয়ার আসতে পারে। তবে আদৌ নির্বাচন হবে কি না সেটি বিবেচ্য বিষয়। বিরোধী দলগুলো অবশেষে আন্দোলনে যদি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে এবং পারিপাশির্^ক চাপ যদি আরো তীব্র হয়, তাহলে হিসেব-নিকেশ উল্টে যাবে। সরকারের কোনো কৌশলই টিকবে না।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement