ঔপনিবেশিকতা এমন কোনো বাস্তবতা নয়, যা শেষ হয়ে গেছে। আধিপত্যবাদী দেশগুলো এখনো নিজেদের কর্তৃত্বকে জারি রাখছে, নানা মাত্রায় তা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং আরো অধিক কর্তৃত্বের উপায় সন্ধান করছে। ভূমি ও মানচিত্রের ওপর তা হয়তো দৃশ্যমান নয়, কিন্তু সংস্কৃতিতে, শিক্ষায়, চিন্তায়, রাজনীতিতে, প্রশাসনব্যবস্থায়, বুদ্ধিবৃত্তিতে, জ্ঞানপরিসরে ঔপনিবেশিকতা ক্লান্তিহীন। অন্য দেশের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্য দেশ ও জনগণকে শোষণ ও লুণ্ঠন করার ব্যবস্থাপনা নানা উপায় ও প্রকরণে এখন বিস্তৃত। নিজ দেশের সীমানা সম্প্রসারণের চেয়ে নিজের স্বার্থের সীমানা সম্প্রসারণ এবং অন্যকে নিজের স্বার্থের দাস বানানোর প্রকল্পসমূহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নীতি এবং চর্চার ওপর সওয়ার রয়েছে। যা টার্গেট দেশ ও জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সে দেশ এবং সেখানকার মানুষকে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ প্রকল্পের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা সম্প্রতি আমরা দেখেছি নাইজারে কিংবা এক অক্ষ থেকে অন্য অক্ষে বাঁক ফেরার নজির দেখেছি মালদ্বীপে। দেশে দেশে এরকম প্রতিরোধের উদ্যম ও প্রয়াস নানাভাবে সক্রিয়। কিন্তু কী অর্থ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তিপ্রয়াসের? কী হবে এর উপায় ও প্রক্রিয়া? ব্যাপারগুলোকে আমরা কয়েকটি দিক থেকে বিচার করতে পারি।
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ
ঔপনিবেশিকতার রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। যাকে বোঝা জরুরি। ঔপনিবেশিকতা ছিল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শক্তিশালী ইউরোপীয় দেশগুলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা এবং ওশেনীয় অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তা বজায় রেখেছিল। উপনিবেশিত অঞ্চলগুলো শোষণ, নিপীড়ন, লুট-মার এবং সাংস্কৃতিক উচ্ছেদের শিকার হয়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসনের দৃশ্যত অবসান হয় জনতার অব্যাহত আত্মত্যাগ ও তীব্র প্রতিরোধে। কিন্তু দেশে দেশে থেকে যায় তার বিপজ্জনক অবশেষ। ঔপনিবেশিকতার ফলে শাসিত অঞ্চলসমূহে স্থায়ী হওয়া গভীর অনাচার ও অসাম্য থেকে বি-উপনিবেশায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তা হয়ে উঠে মুক্তি ও উত্তরণকামী মানুষের প্রবল চাহিদা। এই চাহিদাগুলোকে বুঝার জন্য কয়েকটি দিক চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন-
ক. পরিচয় ও সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার : ঔপনিবেশিত জনগণ দেখেছে, উপনিবেশ তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্যকে অবদমিত করেছিল, বিকৃত করেছিল বা নির্মূল করেছিল। বি-উপনিবেশায়ন এই আদিসত্তা, পরিচয় ও অবস্থাগুলোর পুনরুদ্ধার করতে চায়, তাদের উদযাপন করতে চায়।
খ. ভূমি এবং সম্পদের মালিকানা : উপনিবেশ প্রায়ই ভূমি কেড়ে নিয়েছে। জনগণের সম্পত্তির ওপর নিজেদের অন্যায্য কর্তৃত্ব আরোপ করত সে। ঔপনিবেশিক শক্তির সুবিধার জন্য তার ব্যবহার করা হতো। বি-উপনিবেশায়নের লক্ষ্য হলো যেসব জাতি ও জনগোষ্ঠীকে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যাদের সম্পদ ও কর্তৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে, তার পুনরুদ্ধার, তার ক্ষতিপূরণ।
গ. রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন : উপনিবেশগুলো স্থানীয় জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল বিদেশীদের জবরদস্তির শাসন। এটি করেছিল তাদের সম্মতি বা অংশগ্রহণ ছাড়াই। প্রত্যক্ষ উপনিবেশ বিদায় হলেও যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে, সেই জাতিসমূহ এখনো নিজেরা নিজেদের শাসন করতে পারছে না, নিজেদের ইচ্ছা প্রয়োগ করতে পারছে না। এটা পারছে না অপ্রত্যক্ষ উপনিবেশের কারণে। বি-উপনিবেশায়ন চায় রাষ্ট্র ও জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং শাসন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও স্বাধিকার।
ঘ. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার : ঔপনিবেশিকতা অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে স্থানীয়দের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে। নতুন শ্রেণী ব্যবস্থার জন্ম দেয়। উপমহাদেশে যেটা করেছে মুসলিমদের অর্থনীতিকে বরবাদ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে। তাদের থেকে সবকিছু কেড়ে নেয়া হয়েছিল। নতুন সমাজ ও শ্রেণী গঠন করা হয়েছিল। বি-উপনিবেশায়ন চায় এই জাতীয় ব্যবস্থার অবসান। সম্পদ ও সুবিধার সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতাবস্থা তৈরি করতে হবে।
ঙ. উপনিবেশ নিজের প্রয়োজনে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বয়ানসমূহকে আকার দিয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীসমূহের অতীতে পুঁতে দিয়েছে শত্রুতার এমন বীজ, যা থেকে তাদের নিষ্কৃতি মিলবে না অনাগত কালেও। এই সব শত্রুতার অধিকাংশই উদ্দেশ্যমূলক অতিরঞ্জন ও ফুলানো-ফাঁপানো ব্যাপার। এর মধ্য দিয়ে জাতিতে জাতিতে সহাবস্থান বিনাশী ঘৃণার দাবানল জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কাউকে দেখানো হয়েছে খাদক আর কাউকে খাদ্য হিসেবে। যেন অতীতে যারা খাদ্য হয়েছিল, তারা এখন খাদক হবার চেষ্টা করবে। অন্যকে খাদ্য বানাতে সচেষ্ট হবে। এসবের ফলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কোন স্তরে পৌঁছেছিল এবং তা নব পর্যায়ে কেমন চরিত্র লাভ করেছে, তার নজির হলো উপমহাদেশ। ইতিহাস ও সংস্কৃতির বয়ানে এই সব উদ্দেশ্যমূলক জ্বালামুখকে যদি মোকাবেলা না করা যায়, ঔপনিবেশিক প্রকল্প থেকে মুক্তি মিলবে না। বি-উপনিবেশায়ন তাই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বয়ানসমূহের নবনির্মাণ কামনা করে।
বি-উপনিবেশায়নের পদ্ধতি
বি-উপনিবেশায়ন একটি বহুমুখী জটিল প্রক্রিয়া। যার হাতে ও বাস্তবায়নে থাকা প্রয়োজন উপনিবেশিত সমাজের জটিল চাহিদাগুলোকে মোকাবেলার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে বহুমুখী পদ্ধতিসমূহের সমন্বয় প্রয়োজন। এই পদ্ধতিগুলোর পরিসর নানা খাতে বিস্তৃত। তাকে এভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে :
১. আইনি এবং রাজনৈতিক কাঠামো
ক আন্তর্জাতিক চুক্তি : বি-উপনিবেশায়ন প্রকল্পকে সহায়তা করেছে কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং রেজুল্যুশন। নমুনা হিসেবে বলা যেতে পারে বিশ শতকের মাঝামাঝি ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতা প্রদানের ঘোষণার (১৯৬০) কথা। এই রেজুল্যুশনের মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘ বি-উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য কিছু আইনি পথ পরিষ্কার করেছে। এ জাতীয় আইন ও রেজুল্যুশনের সহায়তা নিতে হবে নানা ধাপে। প্রয়োজনে তা তৈরি করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
খ. সাংবিধানিক সংস্কার : যাদেরকে উপনিবেশিত করা হয়েছিল, সেই জনতার অলঙ্ঘনীয় অধিকার, হারানো স্বত্বের মালিকানা এবং রাজনৈতিক আত্মশাসনের স্বীকৃতির জন্য আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কার অপরিহার্য। এই সংস্কারগুলো নতুন সংবিধান তৈরি করবে বা সংবিধানে তার প্রতিফলন ঘটবে। যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে।
২. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন
ক শিক্ষা সংস্কার : বি-উপনিবেশায়নের জন্য জরুরি হলো শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন। সংশ্লিষ্ট জাতি ও জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে এমন শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া বি-উপনিবেশায়ন অসম্ভব। পাঠ্যক্রম সংস্কারের নামে অধীনস্থ জনগোষ্ঠীর জ্ঞানসম্পদকে মুছে ফেলা হয়েছে, বিকৃত করা হয়েছে। বিশেষত এটা ঘটেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। তাদের জ্ঞানসম্পদকে অস্বীকার করা হয়েছে, লিগ্যাসিকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং মুসলিমদের গর্বকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা কম হয়নি। বি-উপনিবেশায়নের জন্য শিক্ষার পুনর্গঠন এবং নিজস্বতার প্রতিস্থাপন জরুরি।
খ. সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন : সাংস্কৃতিক চর্চা, নিজস্বতার অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠা, শিল্প এবং ভাষার ও ভাষিক রূপের পুনরুজ্জীবন জরুরি। এটা বি-উপনিবেশায়নের অপরিহার্য উপাদান। ভাষিক এই নবনির্মিতি এমন হবে, যা জনগোষ্ঠীকে তাদের ঐতিহ্য এবং পরিচয়ের সাথে সংযোগের নবায়নে সাহায্য করবে।
৩. অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন
ক. রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট : ন্যায্য রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং পুনর্বণ্টননীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থনৈতিক অবিচার মোকাবেলার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা যদি না ঘটে, বি-উপনিবেশায়ন গন্তব্যে যেতে পারবে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পদ, স্বত্ব এবং পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর নিজস্বতা নিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদ; মেধা ও শ্রম সম্পদের লুণ্ঠন মোকাবেলার মতো বিষয়ও এতে যুক্ত রয়েছে। মানবসম্পদের যথাযথ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সুযোগগুলোতে সবার ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা বি-উপনিবেশায়নের দাবি।
খ. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন : মানবকল্যাণের উদ্যোগের সম্প্রসারণ, ধনীর সম্পদে গরিবের অংশ আদায়, সমবায় এবং ক্ষুদ্র সহায়তার মতো উপায়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতার অনুকূল বাস্তবতা তৈরি করতে হবে। নিজেদের সম্পদ, শক্তি ও সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগানোর টেকসই বিকল্প অনুসন্ধান করতে হবে, যা রাষ্ট্র ও জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করতে পারে।
৪. রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
ক প্রতিনিধিত্ব : রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোতে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা বি-উপনিবেশায়নের একটি মৌলিক দিক। ইতিবাচক কর্মনীতি, বৈষম্যমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি এবং কোটার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
খ. আত্মশাসন : বৃহত্তর রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আত্মশাসনের অনুকূল ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। যা তাদেরকে নিজেদের আকাক্সক্ষার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের জান, জবান, জমি ও জিন্দেগির জরুরতের সুরাহা করার পথ খুঁজবে নিজেরাই।
৫. সত্যের স্বীকৃতি এবং পুনর্মিলন
ক. ঐতিহাসিক ভুল স্বীকার করা : ঔপনিবেশিকতার সময় সঙ্ঘটিত ঐতিহাসিক অন্যায়কে কবুল করতে হবে। সমস্ত অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে ঔপনিবেশিক শক্তিকে। এটা বি-উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সত্যকে স্বীকার করা এবং বহুমুখী বিনাশের দায় মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক দায়মুক্তি ঘটতে পারে। এর মধ্য দিয়ে পুনর্মিলন ও পারস্পরিকতার আন্তরিক প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত হবে।
খ. ক্ষতিপূরণ এবং পুনরুদ্ধার : ঔপনিবেশিক নৃশংসতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের ক্ষতিপূরণ ন্যায়ের দাবি। হয় ক্ষতিপূরণ করতে হবে নতুবা তারা যা হারিয়েছে, এর পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে হবে। এটি ঐতিহাসিক ভুলগুলো মোকাবেলার ন্যায়সঙ্গত উপায়।
৬. চ্যালেঞ্জ এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপট
বি-উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়া বিশ্বের অনেক অংশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে। তবে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের কবলে সে দাঁড়িয়ে আছে। যেমন-
ক. নব্য ঔপনিবেশিকতা : অনেক আগে যে অঞ্চলগুলো উপনিবেশিত ছিল, তাদের অনেকেই এখন নব্য ঔপনিবেশিক অনুশীলনের সম্মুখীন। বহিরাগত অভিনেতারা সেসব অঞ্চল ও দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সম্পদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এই পরিস্থিতি ও নির্ভরতা থেকে মুক্ত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
খ. সাংস্কৃতিক ক্ষয় : বিশ্বায়ন এবং আধুনিকীকরণ দেশীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে অবক্ষয়ের কবলে ফেলেছে। যা সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
গ. রাজনৈতিক অস্থিরতা : কিছু সরকার ন্যায়ের শাসনে বিশ্বাস করে না। তারা দেশকে নিজেদের জমিদারি তালুক মনে করে। জনগণকে তারা অধিকার দেয় না। ফলে অস্থিরতা হয় দেশের নিয়তি। কিছু সরকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন বা ক্ষমতায়নকে বাধা দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদি অসন্তোষ, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে।
ঘ. অর্থনৈতিক বৈষম্য: ভূমিপুত্র ও অন্যান্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার। যা স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
ঙ. ভূ-প্রকৃতিগত উদ্বেগ : উপনিবেশিত দেশ ও অঞ্চলসমূহে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদ আহরণ নিয়ে বহুমুখী শক্তির খেলা অব্যাহত থাকে। প্রাকৃতিক সুবিধাসমূহকেও নিজেদের পক্ষে ব্যবহারের রাজনীতি চলে বড় শক্তিদের মধ্যে। একে মোকাবেলা করে এর সুষ্ঠু ও স্বাধীন ব্যবহার গুরুতর এক চ্যালেঞ্জ। অপর দিকে পরিবেশগত অবক্ষয় ও হুমকিসমূহ উপনিবেশিত অঞ্চলসমূহকে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। এর মোকাবেলায় যথোচিত সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
চ. সাম্প্রদায়িকতা : উপনিবেশ বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে সহায়তা করেছে। যার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াসমূহ সুদূরপ্রসারী। উপমহাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা হয়ে উঠেছে প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ভারতের মতো দেশে যা জাতিগত বিদ্বেষের এমন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে, যার ফলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিপন্নতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কী নোয়াম চমস্কি, কী বারাক ওবামা! এ জাতীয় পরিস্থিতি বি-উপনিবেশায়নের জমি তৈরি করবে না কখনো।
আমাদের পথ আমরা তৈরি করবো
বি-উপনিবেশায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা ঐতিহাসিক অন্যায় মোকাবেলা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে চায়। এতে আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামো, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন, অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের সমাহার ঘটেছে। যদিও বি-উপনিবেশায়নের আওয়াজ জোরালো হচ্ছে, তবুও তা নব্য ঔপনিবেশিকতা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার মতো হুমকির দ্বারা রক্তাক্ত। কিন্তু একে মোকাবেলা করে বি-উপনিবেশায়নকে এগিয়ে যেতে হবে। অধিকতরো ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য এটি অপরিহার্য। যেখানে আমরা আমাদের শর্তে আমাদের উন্নতির পথ গড়ব, সে পথে এগিয়ে যাবো।
লেখক : কবি, গবেষক
71alhafij@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা