০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুশাসন

প্রবাসীদের রাজনৈতিক ভাবনা

প্রবাসীদের রাজনৈতিক ভাবনা - নয়া দিগন্ত

প্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষ অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সমৃদ্ধ ছিল। ভারতবর্ষের এ সমৃদ্ধির কারণে প্রথম সহস্রাব্দের কিছুকাল পূর্ব হতে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাম্রাজ্য বিজয়ীদের দ্বারা ভারতবর্ষ আক্রান্ত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাম্রাজ্য বিজয়ীদের ভারতবর্ষ আক্রমণের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের সম্পদ লুণ্ঠন। উপমহাদেশে বারবার সাম্রাজ্য বিজয়ীরা আক্রমণ করলেও ভারতবর্ষের শাসকরা সাম্রাজ্য বিস্তারে কখনো বাইরে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি।
ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা ব্রিটিশদের হস্তগত হলে তারা এ দেশে রেল ও নৌ-যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলে। তবে এ কাঠামো গড়ার পেছনের উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ থেকে সম্পদ আহরণের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশ সুদূর ব্রিটেনে প্রেরণ।

ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায় অধ্যুষিত। ভারতবর্ষ তিন দিকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় সমুদ্রপথে এখান থেকে পৃথিবীর অন্যত্র যাওয়ার পথ উন্মুক্ত। কিন্তু হিন্দু ধর্মে সমুদ্র পাড়ি দেয়া নিষিদ্ধ থাকায় এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের আগমন পূর্ববর্তী ভারতবর্ষ থেকে হিন্দু বা মুসলিম কোনো সম্প্রদায়ের লোক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর অন্যত্র যেতে উদ্যোগী হয়নি। তা ছাড়া উদ্যোগী না হওয়ার পেছনের কারণ ছিল সে যুগে এ দেশের মানুষের জীবনধারণে যেসব উপকরণের প্রয়োজন হতো তা এখানকার উৎপন্নসামগ্রী দিয়ে পূরণ করা যেত।

ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের শাসনাধীন থাকাবস্থায় পৃথিবীর সর্বত্র তাদের উপনিবেশ ছিল। সে সময় পৃথিবীর বিভিন্ন উপনিবেশে কৃষি কাজে শ্রমিক নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে উপমহাদেশ থেকে অনেকটা জোর করে কৃষি শ্রমিকদের পৃথিবীর অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সূচনা করে। সে সময় আমাদের এতদঅঞ্চল অর্থাৎ বাংলা ও আসাম থেকে পৃথিবীর অন্যত্র কৃষিশ্রমিক নেয়ার নজির নেই। যদিও বাংলা ও আসামে চা-বাগান প্রতিষ্ঠায় ভারতের তামিলনাড়– ও বিহার থেকে প্রচুর কৃষিশ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছিল। সেসব কৃষিশ্রমিক এখনো বংশপরম্পরায় বাংলা ও আসামে বসবাস করছে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভাজিত হয়ে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া নামে দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে পূর্ববাংলা পূর্বপাকিস্তান নাম ধারণকরত পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের শাসনাধীন থাকাবস্থায় এ অঞ্চলের সিলেট জেলা ছাড়া অন্য কোনো জেলা থেকে সাধারণ জনমানুষের ব্যাপক হারে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি। বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে সিলেট জেলায় সাধারণ জনমানুষ উন্নত জীবন ধারণের উদ্দেশে ব্রিটেনের পথে পাড়ি জমাতে শুরু করে। তাদের সে যাত্রা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ পাকিস্তানের শাসনাধীন থাকাবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ যে হারে বিদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছিল তার তুলনায় এ দেশ থেকে কমসংখ্যক লোক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। যা হোক, বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী এ দেশের সব অঞ্চলের জনগণের জন্য বিদেশে যাওয়ার অবারিত দ্বার উন্মোচিত হয়।

বাংলাদেশের যেসব জনগণ বিদেশে বসবাস করেন তাদের প্রবাসী বলা হয়। প্রবাসী দু’ধরনের। একশ্রেণীর প্রবাসী বিদেশী নাগরিকত্ব অর্জনের মাধ্যমে সেখানে বসবাস করছেন, আর অপর শ্রেণীর প্রবাসী কর্মসংশ্লেষে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অস্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে শেষোক্ত শ্রেণীর প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। ধারণা করা হয়, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উভয় শ্রেণীর প্রবাসীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটি বাংলাদেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার ৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে। বর্তমানে বাংলাদেশের এমন কিছু প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন যাদের প্রজন্ম দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবধি বিস্তৃত হয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, যেকোনো দেশে অবস্থানরত দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রবাসীরা চাল-চলন ও কথা-বার্তায় সম্পূর্ণভাবে নিজেদের ওই সব দেশের উপযোগী করে তোলেন। কিন্তু বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে নাড়ির টান বেশি হওয়ায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের প্রবাসীরা যতই নিজেদের ভিনদেশী কৃষ্টি ও সভ্যতার সাথে সম্পৃক্ত করুক না কেন; তারা নিজ দেশের পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে সচেষ্ট। এদিক থেকে আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের একই শ্রেণীর প্রবাসীদের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা প্রবাসী হিসেবে যে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন নিজেদের সম্পূর্ণরূপে সে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেছেন। এ ধরনের ভারতীয় প্রবাসীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কি ঘটছে তা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত নন। এমনকি ভারতের যেসব প্রবাসী অস্থায়ীভাবে জীবিকার উদ্দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন তারাও যে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে খুব বেশি তৎপর; এমনটি পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উভয় শ্রেণীর প্রবাসীদের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বর্তমানে উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবং ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে প্রভৃতিসহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানে যেসব বাংলাদেশী প্রবাসী বসবাস করছেন, তাদের অধিকাংশ ওইসব দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। কিন্তু এদের অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব রক্ষা করে চলেছেন। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যেসব বাংলাদেশী প্রবাসী বসবাস করছেন; এদের প্রায় শতভাগ বাংলাদেশের নাগরিক। এরা ন্যূনপক্ষে বছরে একবার দেশে এসে বেশ কিছু দিন মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজনের সাথে সময় কাটিয়ে আবার প্রবাসে নিজ কর্মস্থলে ফিরে যান।
যেকোনো কারণে হোক, বাংলাদেশের উভয় শ্রেণীর প্রবাসী নিজ দেশের রাজনীতি নিয়ে খুব সচেতন। পৃথিবীর যেসব দেশে ও শহরে বাংলাদেশী প্রবাসীর সংখ্যা সহস্র অতিক্রম করেছে; সেসব দেশ ও শহরে বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টির সংগঠন রয়েছে। যেসব দেশ ও শহরে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা কয়েক সহস্র বা লাখ অতিক্রম করেছে সেসব দেশ বা শহরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- এ দু’টি দলের একাধিক কমিটির অস্তিত্ব বিদ্যমান। মূলত নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল এ দু’টি কারণে একাধিক কমিটির আবির্ভাব।

আমাদের দেশ থেকে বড় দু’টি দলের নেতৃস্থানীয়রা যখন বিদেশ সফরে যান; তখন উভয় দলের বিদেশস্থ সংগঠন তাদের উপলক্ষ করে সভা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। আর যখন এ দু’টি দলের প্রধানের আগমন ঘটে তখন দেখা যায়, বিমানবন্দরে তাদের আগমন ও প্রস্থানের সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি। তা ছাড়া বিদেশে অবস্থানকালীন তারা যে হোটেলে অবস্থান করেন ওই হোটেলটির লবিতে দেখা যায়, সার্বক্ষণিক নেতাকর্মীর সরব উপস্থিতি। আমাদের বড় দু’টি দলের নেত্রীদ্বয়ের একাধিকবার করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এ দু’টি দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন তখন দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দলের নেতাকর্মীরা কালো পতাকাসহকারে বিমানবন্দর ও তাদের সম্ভাব্য আলোচনার স্থানগুলোতে উপস্থিত হয়ে আপত্তিকর স্লোগানের মাধ্যমে আগমনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে বিদেশীদের সামনে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। এ ধরনের একাধিক ঘটনায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির উপক্রম হলে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ধারাটি এখনো অব্যাহত রয়েছে।

আমাদের বড় দু’টি দলের নেত্রীর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরকালীন নিজ দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার ঘটনাও বিরল নয়।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রবাসী বাংলাদেশী যারা বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তারা কেন নিজেদের সে সব দেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না করে নিজেদের বা পূর্বপুরুষদের আবাসভূমির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করছেন? এ ক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের চীনসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক স্থায়ীভাবে য্ক্তুরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এ সব দেশের নাগরিকরা নিজেদের ওই সব দেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং কদাচিৎ তাদের দু’-একজনকে নিজের আগের দেশের রাজনীতির ব্যাপারে মাথা ঘামাতে দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলনয় রাজ্যের শিকাগো শহরে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামে একটি সড়ক উদ্বোধন করা হয়। সড়কটির বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির নামে নামকরণ করা হলেও এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পৃথিবীর একটি পরাক্রমশালী দেশে শুধু জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নয়; বরং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ এবং দেশটির জনগণের মর্যাদা ও সম্মান বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের জনপ্রতিনিধিদের এ মহতী উদ্যোগকে আমাদের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর যুক্তরাষ্ট্রস্থ সমর্থকরা সঙ্কীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অভিনন্দন তো জানায়নি; বরং এটি যেন কার্যকর করা না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে কূটনৈতিকসহ অন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ ও তার যুক্তরাষ্ট্রস্থ দলীয় সমর্থকদের এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সে দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি সম্মান বা শ্রদ্ধা কতটুকু বৃদ্ধি বা হ্রাস করেছে সেটি উপলব্ধি করার বোধশক্তি কি তাদের মধ্যে নেই! স্মরণযোগ্য, ইতঃপূর্বে একই শহরে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। কিন্তু এবার জিয়াউর রহমানের নামে সড়কটি উদ্বোধনকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত দলীয় আশীর্বাদপুষ্ট বাংলাদেশীরা শিকাগোতে এসে যেভাবে এটিকে প্রতিহত করার ব্যর্থ প্রয়াস নেন তা অগ্রহণযোগ্য। একই শহরে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে যখন একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছিল তখন যক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের একই রাজ্যের একটি শহরে বাংলাদেশের দু’জন সাবেক রাষ্ট্রপতির নামে দু’টি সড়কের নামকরণ বাংলাদেশ ও প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য গর্বের ব্যাপার। কিন্তু সঙ্কীর্ণ দলীয় মনোবৃত্তির কারণে আমরা এ গর্বকে ম্লান করে দিচ্ছি।

আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের নাগরিকরা যেসব দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তাদের অনেকে সেসব দেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী পদে এবং সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে নিজেদের ঠাঁই করে নিতে সমর্থ হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন নারী যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের এ নারীর এমপি হওয়ার সাফল্যটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলে ভবিষ্যতে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীরা সেসব দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সমর্থ হবেন। আর এর মাধ্যমে দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের সম্মান ও মর্যাদা বহির্বিশ্বে বাড়বে।

প্রবাসে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে যেসব বাংলাদেশী বসবাস করছেন তারা কেন নিজ দেশ থেকে বিদেশে অবস্থানের পরও নিজেদের স্বদেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রাখছেন; এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অবলম্বন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানসে তাদের এ প্রয়াস। তা ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতৃস্থানীয়দের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এসব প্রবাসী যখন দেশে আসেন তখন স্থানীয়রা এদের যোগাযোগের পরিধি দেখে এদের অনেকটা সমীহ করে চলেন। স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাসরত যেসব বাংলাদেশী ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশে সরকারি দলের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেশ ও বিদেশ উভয় স্থানে ব্যবসার উৎকর্ষসাধনে সহায়ক।

আমাদের প্রবাসীরা বিশেষত বিভিন্ন দেশে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত শ্রমিকরা বিদেশে কায়ক্লেশে জীবনযাপন করে তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ৯০ শতাংশের বেশি দেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শুধু স্ফীত করছেন না; বরং দেশের অর্থনীতিও সচল রাখছেন। বিদেশে যারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তাদেরও অনেকে ইতোমধ্যে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন এবং আশা করা যায়, অনুকূল পরিবেশ দেয়া গেলে তারা আরো বড় ধরনের বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। কিন্তু দেশ ও বিদেশে প্রবাসীদের অবদান ম্লান হয়ে যায় তখন, যখন দেখা যায়; এরা নিজ দেশের সরকারি ও বিরোধী দলের নেতৃস্থানীয়দের বিদেশে সম্মান জানানোর পরিবর্তে কালো পতাকা প্রদর্শন, আপত্তিকর স্লোগান ও জুতা দেখিয়ে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করছেন। এ ধরনের অসম্মান ও অশ্রদ্ধা তাদের এবং দেশের মর্যাদার হানিকর। তাই আর যাই হোক স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাসরত প্রবাসীদের রাজনৈতিক ভাবনা যেন সঙ্কীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির আবদ্ধতায় দেশের মর্যাদার হানি না ঘটায়- এটি হোক আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
আরো ২ দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে গাজীপুরে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে নিহত ২ মুন্সিগঞ্জে লরিচাপায় এক পরিবারের ৩ জন নিহত আড়াইহাজারে মুরগি রান্নাকে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ চীন কিভাবে ইরানকে নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সাহায্য করছে হবিগঞ্জে এপেক্স শো-রুমে আগুন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দল ঘোষণা পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলো সরাসরি সম্পৃক্ত হলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ তীব্রতর করতে পারে চলমান তাপপ্রবাহের শেষ দিন আজ! ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে বিবেচনা করছে হামাস

সকল