২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওয়াগনার গ্রুপ ‘অপরাধী সংগঠন’

লেখক মো: বজলুর রশীদ - ফাইল ছবি

রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের কাজকর্মে ওয়াশিংটন বিরক্ত ও উদগ্রীব হয়ে ওই গ্রুপ এবং রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য এটিকে অপরাধী সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে। এর পথ ধরে ওয়াশিংটন ওয়াগনারকে অবরোধ ও বিবিধ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে, কোনো সংগঠনকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা গেলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার আইনি সক্ষমতা লাভ করে থাকে। ওয়াগনার গ্রুপ রুশ সেনাদের সহযোগী ও ভাড়াটে বাহিনী, এখন ইউক্রেনে যুদ্ধরত রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এই দলকে ‘অপরাধী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই গোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধা ইউক্রেনে সক্রিয় রয়েছে। এই দলে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি থেকে ভাড়াটে খুনিরাও রয়েছে। তা ছাড়া অভিজাত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরাও কাজ করছে দেদার।

এই দল ইউক্রেন ছাড়াও রাশিয়ার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক দেশে কাজ করছে। অপরাধী সংগঠন ঘোষিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র আরো অনেক অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা দিতে সক্ষম হবে। ইউরোপ ও পশ্চিমা শক্তি ইতঃপূর্বে রাশিয়ার শক্তি খর্ব করতে তেল ও জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পুতিন সফলভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করতে সক্ষম হন এবং এই তেল কূটনীতি পশ্চিমাদের কোনো সুবিধার পরিবর্তে দুর্দশা ডেকে আনে এবং ডলারের পরিবর্তে রাশিয়ার রুবল আরো শক্তিশালী হয়। বিভিন্ন দেশ তাদের মধ্যকার আর্থিক লেনদেন ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রার মাধ্যমে শুরু করে, নগদ মুদ্রায় লেনদেন হয়। ইরান, রাশিয়া, চীন ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেনে সম্মত হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী একক ডলারের মান কমতে থাকে। পুতিনের জন্য তেল ও ডলারের পরে ওয়াগনার গ্রুপকে কোণঠাসা করার ঘোষণা বড় ধরনের সমস্যা। প্রচলিত সামরিক বাহিনীর পর এই গ্রুপের ওপর পুতিন অনেক দায়িত্ব অর্পণ করে থাকেন।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে, পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুট ও সোলেডার শহর দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপ বড় ভূমিকা পালন করে। ওয়াগনার গ্রুপের জন্য উত্তর কোরিয়া থেকে বিপুল অস্ত্র আনা হয়েছে। এর আগে গুজব ছড়ায়, উত্তর কোরিয়ার দুই হাজার যোদ্ধা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যোগ দিচ্ছে। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপ মূল ভূমিকা পালন করেছিল।

২০১০ সালের পর থেকে রাশিয়া আবার বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়করণ শুরু করে। এর পেছনে রাশিয়ান মার্সেনারি বা ভাড়াটে সেনাদের দলের ‘দ্য ওয়াগনার গ্রুপ’ বিশাল ভূমিকা আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাশিয়া প্রক্সিওয়্যার বা ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুভাবাপন্ন শক্তির সাথে লড়াই করেছে, যেখানে ওয়াগনারের মতো সশস্ত্র গ্রুপের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।

পুরো বিশ্ব দ্য ওয়াগনার গ্রুপকে রাশিয়ার পুতিন সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাপ্রাপ্ত সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করলেও রাশিয়া বরাবরই সেটি অস্বীকার করে এসেছে। এর কারণ দ্য ওয়াগনার গ্রুপ ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত একটি সংগঠন এবং রাশিয়ার সংবিধানে এরকম কোনো সংগঠনকে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ব্যবহার করার কোনো অনুচ্ছেদ নেই। সংবিধানে না থাকলেও সম্প্রতি অনেকবার রাশিয়ান পার্লামেন্টে প্রাইভেট মিলিটারি সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি, পিএমএসসিসি বা ওয়াগনার গ্রুপের মতো সশস্ত্র বেসামরিক সংগঠনগুলোকে একটি আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখলের পর থেকেই পুতিন সরকারের কাছে ওয়াগনার গ্রুপের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। অবশ্য ইউক্রেনের সাথে সামরিক সংঘর্ষের আগেই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ওয়াগনার গ্রুপের ওপর তার আস্থার কথা জানান। ২০১৩ সালে রাশিয়ান পার্লামেন্ট ডুমায় একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জাতীয় স্বার্থে প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ব্যবহারের জন্য পুতিনকে অনুরোধ করলে তিনি ইতিবাচক উত্তর দেন, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেন।

ইউক্রেনের ঘটনার পর থেকে রাশিয়ান স্বার্থের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশের প্রাইভেট মিলিটারি গ্রুপগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এরা যুদ্ধের সময় কখনো একেবারে সামনের দিকে থাকে না বা আক্রমণে অংশ নেয় না। এদের মূল কাজ বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু রাশিয়ান মার্সেনারি দ্য ওয়াগনার গ্রুপ একেবারে সামনে থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি সামরিক সঙ্ঘাতে অংশগ্রহণ করে। প্রয়োজনে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। সে জন্য ওয়াগনার গ্রুপের ক্ষয়ক্ষতির হারও অনেক বেশি।

রাশিয়ার সরকার মূলত ওয়াগনার গ্রুপের মাধ্যমে সেসব দেশেই তৎপরতা চালিয়েছে, যেসব দেশে স্বৈরশাসন কায়েম রয়েছে এবং সেসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য আছে। এ জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতেই রাশিয়া বেশি করে বিভিন্ন সঙ্ঘাতে যুক্ত হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের সরকারকে শুরু থেকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ, সিরিয়ার তেলের ব্যবসায় বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। লিবিয়ায় হাফতারের অধীনে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে অস্ত্র, সামরিক উপদেষ্টা ও মার্সেনারি গ্রুপ পাঠিয়ে সহায়তা করছে রাশিয়া, এর পেছনেও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রেও বেসরকারি বা প্রাইভেট মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে; বরং বলতে হয় ওয়াগনার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাকওয়াটার গ্রুপ থেকে আইডিয়া নিয়েছে। এরিখ ডি প্রিন্স এমন একজন ব্যক্তি। তিনি মনে করেন, আফগান যুদ্ধ আমেরিকার নিয়মিত সেনাবাহিনীর কাজ নয়, ব্লাকওয়াটারের কাজ, দুই দশকের সুদীর্ঘ সময়ের যুদ্ধ বহু আগেই ফায়সালা হওয়া উচিত ছিল। তিনি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ব্লাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা, ১৯৯৭ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠান ডিনকর্প ইন্টারন্যাশনাল, যার মালিক স্টিফেন ফিনবার্গ। এসব প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করে।

আমেরিকার স্বার্থে কাজ করা ব্লাকওয়াটারের আরেক নাম ‘জিসার্ভিস’। ২০১১ সালে ‘একাডেমি’ নামেও পরিচিতি পেয়েছিল। বড় ধরনের অপারেশন, সিক্রেট সার্ভিস অপারেটরদের বেসরকারি সেবা ও সহযোগিতা, সেনাবাহিনীর পক্ষে গুপ্ত অভিযান- এসব কাজ করে ব্লাকওয়াটার সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করলেও নিষ্ঠুরতার জন্য এটি বিশ্বে কুখ্যাত। এরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের নিরাপত্তা সেবাও দিয়ে আসছে ২০০৩ সাল থেকে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ব্লাকওয়াটার ২০১৩ সালে সিকিউরিটি সংক্রান্ত ৯২ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি পেয়েছিল। পরে আরো অনেক সেনা-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের সাথে একীভূত হয়। প্রিন্স ক্যারোলিনা ভার্জিনিয়া সীমান্তে সাত হাজার একর জলাভূমি কিনেছেন দফতর স্থাপনের জন্য। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখানে সব ধরনের মোটরযান ও ট্যাংক পরিচালনা, অস্ত্র পরিচালনা, মিসাইল ছোড়া ইত্যাদি ছাড়াও গোয়েন্দাগিরি এবং তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজার ঠিকাদারিও ব্লাকওয়াটার পেয়েছিল। ইরাক যুদ্ধে অনেক স্থান ও স্থাপনা পাহারার ঠিকাদারিও এই সংস্থা সফলতার সাথে পরিচালনা করে। এরপর তাদের আফগানিস্তানে একই কাজে নিয়োগ করা হয়। তারা এমন সব চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যেখানে কাজের জন্য কোনো কৈফিয়ত দেয়ার কথা উল্লেখ থাকে না। মূলত এরিখ প্রিন্স একজনই ঠিকাদারির মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এই পদ্ধতি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের জাপান শাসন করার মতো।

জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান সেনা ও বেকার আমেরিকানদের কয়েক দিনের নোটিশে রিক্রুট করা হয়। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন থেকে হাজার হাজার সেনা সংগ্রহ করা হয়। ওই সব দেশে যুদ্ধের ফলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। খাবার, পানীয়, ওষুধ ও নিরাপত্তার অভাব-পিষ্ট এসব ভুখা-নাঙ্গাকে ভালো বেতন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করে যুদ্ধের ময়দানে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক দলকে মিশন দেয়া হয়- ‘মারো অথবা মরো’। মারলে পাবে বেশি বেতন, সম্মান ও র‌্যাংক। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো- আফগান যুদ্ধে আফগানদেরই একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। যারা মিশন ঠিকমতো পরিচালনা করত, তাদের জন্য ছিল অর্থ, বিত্ত ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। যে যত দাসত্বের পরিচয় দেবে তার তত উন্নতি। তার সেনারা বাগদাদ স্কোয়ারে জনসমাগমে গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল, সে মামলার আজো সুরাহা হয়নি।

প্রিন্স মনে করেন, ঠিকাদার দিয়ে শাসন ও যুদ্ধ করার উত্তম উদাহরণ হচ্ছে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত শাসনের মতো। রানীর নাম দিয়ে পুরো ভারত উপমহাদেশে কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠা। ঠিকাদারির মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার এই পদ্ধতি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের জাপান শাসন করার মতো। প্রাইভেট ফোর্স দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করলে সে যুদ্ধ যদি ‘অনন্তকাল’ও চলে, সমস্যা নেই। প্রিন্স বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আফগান যুদ্ধের মাত্র ৩০ শতাংশ খরচ দিয়ে তিনি যুদ্ধের সফল সমাপ্তি টানতে পারতেন।

ব্লাকওয়াটারের অফিস রয়েছে আরব আমিরাতেও, সেখান থেকে বৈশ্বিক বিষয় নজরদারি করা হয়। প্রিন্স আফগানিস্তানে ফ্রন্টিয়ার সার্ভিস গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন। তাই তার বক্তব্য ও পরিকল্পনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আফগানিস্তানে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিপালিত ও অনুসৃত হয়ে থাকে। মানুষের মনে ও মগজে ইসলামী ভাবধারা লালিত ও পালিত। সোজা কথা, আফগানদের মগজ ধোলাই করা আমেরিকানদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ২০ বছর নিয়মিত সেনার পরিবর্তে ঠিকাদারের সেনারা রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। ট্রাম্প মাদার অব অল বম্ব মেরে তালেবান হত্যা করলেও বিজয় হয়নি। ব্লাকওয়াটার হিরোশিমার মতো পরমাণু বোমা মারার পরামর্শ দিয়েছিল কিন্তু এতে আফগানিস্তানের মূল্যবান খনিজসম্পদ ধ্বংস হবে বিধায় মার্কিনিরা পছন্দ করেনি, শেষ পর্যন্ত আফগান ছাড়ো পন্থাই সফল হয়।


ইউক্রেন আক্রমণের প্রেক্ষাপটে কুখ্যাত ব্লাকওয়াটার ভাড়াটে গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা এরিখ প্রিন্স ফক্স নিউজের উপস্থাপক কার্লসনকে বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বন্ধ করতে পারতেন, যদি মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন তাকে এটি করতে সম্মতি দিতেন।

মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক সিল কর্মকর্তা প্রিন্স দাবি করেছেন, বাইডেন তার পাইলটদের ১৪০টি বিমান ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রিন্সের মতে ‘এই সেই ব্যক্তি যার কর্মকাণ্ড এক দশকেরও বেশি সময় আগে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার নোংরা যুদ্ধের রহস্য উন্মোচন করেছিল।’

২০০৭ সালে বাগদাদে দুই শিশুসহ ১৪ জন ইরাকি বেসামরিক নাগরিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্লাকওয়াটারের চার ভাড়াটে সেনাকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমা করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাই হোক, ব্লাকওয়াটারকে কখনো আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। জেরেমি স্ক্যাহিল তার বই ‘ব্লাকওয়াটার : দ্য রাইজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট পাওয়ারফুল মার্সেনারি’তে লিখেছেন- ‘বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ইরাক দখলের প্রথম পাঁচ বছরে তাদের মারাত্মক ক্রিয়াকলাপের জন্য কোনো আইনি পরিণতির মুখোমুখি হয়নি। ২০০৮ সালের বসন্ত পর্যন্ত, ইরাকির বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য একজনেরও বিচার করা হয়নি।’

পুতিনের ঘনিষ্ঠ বিশ্বস্ত ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি ওয়াগনার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটিকে ব্লাকওয়াটারের রাশিয়ান সংস্করণ বলা যায়। ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের পর পশ্চিমারা যে সব প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার মধ্যে এই বেসরকারি মিলিশিয়া গ্রুপ অন্যতম। ইউক্রেন, লিবিয়া ও সিরিয়ায় ভাড়াটে সেনাদের অর্থায়নে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ‘ইউক্রেন, সিরিয়া, লিবিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান ও মোজাম্বিকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ওয়াগনার গ্রুপ দায়ী।’ প্রিগোজিন পুতিনের চিন্তাধারাকেই বাস্তব রূপ দেন।

পুতিন বলেন, বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের বিশ্বের যেকোনো জায়গায় কাজ করার এবং তাদের স্বার্থরক্ষার অধিকার আছে যতক্ষণ না তারা রাশিয়ার আইন ভঙ্গ করে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ মস্কোর প্রতিনিধিত্ব করে না এবং সরকার তাদের বেতনও দেয় না। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ওয়াগনার গ্রুপকে পুতিনের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী বলেও অভিহিত করেছেন।

ওয়াগনারের ভাড়াটে সেনারা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং রাশিয়ান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ ও কেজিবির সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করে। জাতিসঙ্ঘ ও পশ্চিমা সরকারগুলো ওয়াগনার গ্রুপকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং লিবিয়া ও মালির সঙ্ঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছে। এর আগে, রাশিয়া দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য দনবাসে তাদের যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপকে মোতায়েন করেছিল। দেখা যায়, ওয়াগনার ও ব্লাকওয়াটার একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত

সকল