২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রশ্নবিদ্ধ ময়নাতদন্ত

প্রশ্নবিদ্ধ ময়নাতদন্ত - নয়া দিগন্ত

সাপুড়ে সাপ নিয়ে চর্চা করে, আইন নিয়ে চর্চা করে আইনজীবী। অসতর্কতার কারণে সাপের ছোবলে মরে সাপুড়ে; আইনজীবী যায় কারাগারে। আইনপেশা শুরু করেছিলাম ফৌজদারি শাখায়। তাই কল্পনাতীত বিশ্রী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি বহুবার। বিশ্রী, অসহনীয়, বিয়োগাত্মক ও হাস্যরসাত্মক অভিজ্ঞতা নিয়েই ‘বিচারের বাণী’ গ্রন্থ। এক সময় মনে করতাম, আদালতে বিচারকই সব কিছু। বিচারক পবিত্র, সব ঠিক। ইতিহাসও তাই বলে। হাজার বছর থেকে পবিত্র বিচারকের জন্য চেষ্টার অন্ত নেই। প্লেটোর ভাষায়, ‘যিনি সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তার যুক্তি প্রজ্ঞাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম তিনিই হচ্ছেন পবিত্র ও জ্ঞানী। পবিত্র জ্ঞানী ব্যক্তিই প্রকৃত দার্শনিক।’

ধর্মের দৃষ্টিতে প্রতিটি আত্মাই পবিত্র। আত্মা নিষ্কলুষ ও পবিত্র হয়েই জন্মায়। পবিত্র আত্মাকে কলুষিত করে ‘রিপু’। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ছয় রিপুর এক বা একাধিক রিপুর প্রভাবেই পবিত্র আত্মা প্রভাবিত বা কলুষিত হয়। প্লেটোর দর্শনের সাথে ধর্মের মিল নেই। কিছুটা মিল রয়েছে বিচারব্যবস্থার সাথে। যেমন- ‘যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে আছে যারা সঠিক পথ দেখায় ও ন্যায়বিচার করে (সূরা আরাফ, আয়াত-১৮১) ‘একদল লোক’ বলতে গাঁয়ের পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে আদালতের বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ ও চিকিৎসককে বোঝায়। আদালতে এই তাদের এক বা একাধিক নড়চড় হলে বিচারকের পক্ষে সম্ভব নয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

এর আগে আইনজীবী ও পুলিশের ভুলের পরিণাম কী হতে পারে আলোচনা করেছি। চিকিৎকের ভুলের কারণেও প্রকৃত দোষী ব্যক্তি রেহাই পাওয়াসহ নির্দোষ ব্যক্তি ঝুলতে পারে ফাঁসিকাষ্ঠে। ১৬৪ ধারার জবানবন্দীর পরই সাক্ষ্য হিসেবে অগ্রাধিকার পায় ময়নাতদন্ত। ১৬৪ ধারা জবানবন্দীর পর আদালত যে ময়নাতদন্তের ওপর নির্ভর করেন সেই ময়নাতদন্ত সন্দেহাতীত নয়। সন্দেহাতীত না হওয়ার দায় একা চিকিৎসকের ওপর নয়, প্রকৃতি এবং পদ্ধতিরও। ওয়ান-ইলেভেনের সময় চিকিৎসকের মিথ্যা রিপোর্টের কবলে পড়েছিল আমার এক কাজিন। তখন কিছু চিকিৎসকের ওপর ভক্তি-শ্রদ্ধা নষ্টসহ চিকিৎসাজগতের ভাগাড়ে নাড়া পড়েছিল। গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০০৭ এই সময়ের মধ্যে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় যেসব অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছিল তা নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ নয়া দিগন্তে ‘পরিশেষে একটি জাতির অবলুপ্তি’ শিরোনামে একটি আর্টিক্যাল প্রকাশিত হয়েছিল। কাজিনের স্ত্রীর ভাষায়, ‘আমার এখন সোনার সংসার। সুখের দিন। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণীতে আর ছেলেটা বাপের কাঁধে চড়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে।

এখন বাবা-মা, ভাইবোন সবাই খোঁজখবর নেয় আমার। পালা করে বেড়াতে আসেন নিজের মা আর পালক মাও। যা-ই কাজকর্ম করি, নজর থাকে স্বামীর দিকে। ছেলেটার খৎনা। খৎনার পর চিঁড়ামুড়ি, পিঠা-পুলি নিয়ে আসে আত্মীয়স্বজন। রাত-দিন ভর্তি থাকে ঘর। দুই মা, বোন-ভগ্নিপতি আগের দিন চলে এসেছেন। রাতে ঘরভর্তি লোক। শোয়ার বিছানা নেই। খড়কুটোর ওপর কাঁথা বিছিয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে কেউ কেউ। ডিসেম্বর মাস। বাইরে তীব্র শীত। স্বামী ঘরে নেই। ঘরে শুয়ে থাকলেও মন পড়ে রয়েছে বাইরে। আমাকে অন্যমনস্ক দেখে, ‘বেটা মানুষ; হয়তো কোথাও ঘুমিয়ে পড়েছে’ বলে সান্ত্বনা দেয় মা ও বোন।

কুয়াশাসহ ভোর হয়। ঘন কুয়াশা কাটতেই উত্তরের ভিটির ঘরের পেছনে আমগাছে চোখ যায়। ভেসে ওঠে স্বামীর ঝুলন্ত দেহ। আর্তচিৎকারে লোকজন আসে। তড়িঘড়ি করে নামিয়ে আনা হয়। নামানোর আগেই লাশে পরিণত হয়েছে দেহ। আমার দিকে আঙুল তোলে কেউ কেউ। দুই ছেলেমেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। গ্রামপুলিশ থানায় যায়। পুলিশ অনুমতি দিলেই জানাজাসহ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা হবে। দুপুরের দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কয়েকজন পুলিশসহ হাজির। দাফন-কাফনের অনুমতি চাইলে পুলিশ বেঁকে বসে। ওয়ান-ইলেভেনের সময়। ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন-কাফন নয়। অনুনয় বিনয় উপেক্ষা করে লাশ নিয়ে যায় সদরে। সপ্তাহখানেক পর রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট ‘মাথায় আঘাতজনিত কারণে নরহত্যা।’ নড়ে-চড়ে বসে পুলিশ। সাধুমোহন্ত সেজে যারা তড়িঘড়ি দাফন-কাফন করতে চেয়েছিল, তাদের মধ্যেই রয়েছে স্বামীর খুনি। খুনি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেয়া হয় সাব ইন্সপেক্টর সুকান্ত চক্রবর্তীকে। প্রকৃত বিষয় তাকে বোঝানো সম্ভব হলেও এসপি সাহেবকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। এসপি সাহেবের সন্দেহ, বিশাল অঙ্কের টাকায় খুন ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। সরেজমিন নিজে আসেন তদন্ত করতে। এসপি সাহেবের তদন্তকালে উকিল ভাসুরও উপস্থিত ছিলেন। চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে জীবন থেকে শেষ হয় স্বামীর অধ্যায়।’

সাম্প্রতিক প্রশ্নবিদ্ধ আরো কয়েকটি ঘটনা
‘২০ নভেম্বর ২০১৬ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা: জাহিদুল হাসান ময়নাতদন্ত করেন। রিপোর্টে তিনি ছাড়াও ওই বিভাগের আরো দুই চিকিৎসকের স্বাক্ষর রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। পরে আদালতের নির্দেশে ১০ ডিসেম্বর কবর থেকে দিয়াজের লাশ তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পর লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ তার মৃত্যুকে শ্বাসরোধজনিত নরহত্যামূলক বলে জানান চিকিৎসকরা।’

‘নিহত সিফাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ২৯ মার্চের সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার।... সিফাতের প্রথম ময়নাতদন্তের চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে আত্মহত্যা বলে প্রতিবেদন দেন। পরে পরিবারের আবেদনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় তদন্তে আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন। (প্রথম আলো, ২৩ মার্চ ২০১৬)

একই কারণে সুরাহা হয়নি কুমিল্লার তনু হত্যাও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। তনু হত্যার ১০ দিন পর দ্বিতীয় ময়নাদতন্তে যৌন সংসর্গের প্রমাণ পাওয়া গেলেও নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা হয় প্রথম ময়নাতদন্ত রপোর্টে ধর্ষণ বা যৌন সংসর্গের তথ্য পাওয়া গেল না কেন- এ প্রশ্ন করা হলে ডা: কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তিনি আরো বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অপরাধী শনাক্ত করতে হবে। ১০ দিনের পচা বডি থেকে কোনো ক্লু দিতে পারি না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মনে করুন ছয় মাস আগে কোনো লোককে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করা হলো। ছয় মাস পর নিহত ব্যক্তির হাড়গোড় তুলে ময়নাতদন্ত করা হলো। এখন হাড়গোড়ে তো ছুরির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল না। এখন প্রশ্ন হলো, তা হলে এর বিচার হবে না? চিকিৎসকদের যুক্তি অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘একজন মৃত ব্যক্তির চরিত্র হননের ধৃষ্টতা দেখিয়ে ঘৃণ্য কাজ করেছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ।’ তিনি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের চাকরিচ্যুত করে বিচারের মুখোমুখি করার দারি জানান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার সাবেক কমান্ডার মোতাহার হোসেন বাবুল বলেন, ‘কামদা প্রসাদ সাহাকে জাতি ঘৃণার সাথে মনে রাখছে। তিনি যা করেছেন তা বিবেকবান মানুষ গ্রহণ করবে না।’

প্রশ্নবিদ্ধের তালিকায় যেন বিশ্বের ময়নাতদন্ত। বিশ্বকাপে নবাগত আয়ারল্যান্ডের কাছে পাকিস্তানের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই ১৮ মার্চ ২০০৭ কিংস্টোনের পেগাসাস হোটেলের নিজ কক্ষে উলমারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। উলমারের ময়না তদন্ত করেন জ্যামাইকায় বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্যাথলজিস্ট ডা: ইরি মিশাইয়া। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি ‘উলমারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে মন্তব্য করেন। এর ওপর ভিত্তি করে উলমারকে হত্যার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তাও দেয় জ্যামাইকার পুলিশ। দ্বিতীয়বারের মতো ময়নাতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিনিয়র প্যাথলজিস্ট ডা: ন্যাট ক্যারির ওপর। তিনি গলা টিপে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রয়াত কোচ বব উলমারকে হত্যা করা হয়নি।’

পরিশেষে ‘বব উলমারের হত্যা প্রহসন’-এর শেষ দৃশ্যের যবনিকাপাত হয় ১২ জুন ২০০৭ তারিখে। ওই দিন জ্যামাইকার পুলিশ কমিশনার লুসিয়াস টমাস এক সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে- ‘বব উলমারের মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে।’

এর পর আসে বিপর্যয়ের ব্যাপার। পাকিস্তান ক্রিকেট দল ঘটনার ৮৬ দিন পর খুনের দায় থেকে বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেনি বিপর্যয়ের হাত থেকে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর সপ্তাহখানেক গৃহবন্দী ছিলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা। সহকারী কোচ মোস্তাক আহমদের নাকে কাটা দাগ কেন? অন্য কারো শরীরে কাটা-ছেঁড়া দাগ কিংবা আঁচড়ের কোনো চিহ্ন আছে কি না। এ সব বিষয় নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল তাদের। অনেক ক্রিকেটার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন ইনজামাম। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসিম আশ্রাফ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পাকিস্তান দলের ভাবমর্যাদা আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিনষ্ট হয়।

প্রথমে খুন, পরে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে যে বিভ্রান্তির জন্ম হয়েছিল, তা শেষ করতে চেয়েছিল জ্যামাইকান পুলিশ; কিন্তু বাধ সাধলেন প্রাথমিক ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি জানান, তিনি নিশ্চিত, উলমারকে খুন করা হয়েছে। এরপর জ্যামাইকান পুলিশ নতুন করে তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছে। ১৬ অক্টোবর ২০০৭ নতুন করে শুরু হবে উলমারের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত। নতুন করে প্রদত্ত তদন্ত রিপোর্ট হাতে পৌঁছার আগে পৌঁছে যায় আগে দেয়া ফরেনসিক রিপোর্ট। জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টোনের সরকারি ফরেনসিক ল্যাবরেটরির চিফ ফরেনসিক অফিসার ফিৎজমোর কোটস তার রিপোর্টে বলেন, ‘উলমারের রক্ত ও মূত্রের নমুনাসহ পাকস্থলীর নমুনায় প্রতি মিলিলিটারে ৩.৪ মিলিগ্রাম সাইপার মেথ্রিন নামের কীটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আরো বলেন, যে পরিমাণ বিষ পাওয়া গেছে সে পরিমাণ বিষে একজনের মৃত্যু হতে পারে। বিষ পানের বিষয়টি আত্মহত্যাও হতে পারে।

প্রথমে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্যাথলজিস্ট ডা: ইরি মিশাইয়া, মাঝে জ্যামাইকান সিনিয়র প্যাথলজিস্ট ডা: ন্যাট ক্যারি পরে ফিৎজমোর কোটস তদন্ত করে পরস্পর পরস্পরের বিপরীত রিপোর্ট দেয়ার পর সর্বশেষ অপেক্ষায় রয়েছে ব্রিটিশ প্যাথলজিস্ট ড. নাথানিয়েলকে। ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে প্রথমে ছিল জ্যামাইকান পুলিশ, মাঝে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের খ্যাতিসম্পন্ন ব্রিটিশ সংস্থা, সর্বশেষ দায়িত্ব পান বিচারক প্যাট্রিক মারফি। সর্বশেষ তদন্ত রিপোর্ট ‘হত্যা’ আত্মহত্যা’ কিংবা ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ এ তিন অবস্থার বাইরে যাওয়া জো নেই। যা-ই আসুক তাতে ‘স্বাভাবিক’ নয়তো ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর পাল্লা ভারী হবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হবে না কখনো। তিনজনের রিপোর্ট সত্য ধরে নিলে যা দাঁড়ায় তা হলো, ‘উলমারের দল ক্রিকেট খেলায় নির্মমভাবে হেরে গেলে প্রচণ্ড শোক সামাল দিতে না পেরে উলমার আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে বিষ পান করে। বিষক্রিয়া শুরুর পর পরপারে গমনের জন্য যখন ছটফট করছিল তখন যে কেউ একজন উলমারের গলা টিপে ধরে তাকে পরপারে যেতে সাহায্য করছিল। উলমার ও তার সাহায্যকারী উভয়ের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়ে সৃষ্টির অমোঘ নিয়ম তার নিজ হাতে স্বাভাবিকভাবে বব উলমারকে ইহকাল থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।’ বিস্ময়ের কী আছে! একই বিষয়ের ওপর তিন দেশের তিন স্পেশালিস্টের ময়না রিপোর্ট সত্য ধরে নিলে তো তাই হয়।

জাতীয় চিকিৎসকরা যদি অর্থের টানে টলতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক টানে টলবে না কেন? মতের ভিন্নতা হতে পারে টলে যাওয়ার কারণে, ভুলের কারণে, কিংবা হয়ে থাকতে পারে সীমাবদ্ধতার কারণেও। চার দেশের চার প্যাথলজিস্টের রিপোর্ট চার রকম না হোক, এক রকম হবে না কোনো দিনও। ডা: ইরি মিশাইয়ার ময়না রিপোর্ট ও তৎভিত্তিতে জ্যামাইকান পুলিশের তৎপরতার ওপর নির্ভর করে থাকলে এত দিন পাকিস্তানের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা কিংবা জুয়াড়ি কারো না কারো গলায় ফাঁসির রশি লেগে যেতে পারত। (বিচারের বাণী ১৮৪ থেকে ১৮৭)

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail : adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement