২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না

মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না - ফাইল ছবি

আমাদের দেশের রাজনীতিতে কিছুকাল থেকে অদ্ভুত ও ভীতিকর সব তত্ত্ব, তথ্যের সম্মিলন দেখা যাচ্ছে। যারা এসব তত্ত্ব-তথ্যের জানান দিচ্ছেন, তারা এসবের কোনো ব্যাখ্যা এবং এ বিষয়ের কোনো উৎস সূত্র সম্পর্কে কিছুই বলেন না। অতি সম্প্রতি এমন দুটো তত্ত্ব ও তথ্যের কথা প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে। আরো ভীতিকর যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা হচ্ছে, ‘এখন খুব খারাপ সময়, ঝুঁকিপূর্ণ সময়।’

এসব কথার কোনো ভিন্ন ব্যাখ্যা করা থেকে এখন বিরত থাকছি। তবে সময়টা সত্যিই খুব খারাপ, এ কথা বাংলাদেশের কারোই আর অনুভব করতে বাকি নেই। কারণ সময়ের প্রভাব প্রতিক্রিয়া, সেটা প্রায় প্রতিটি নাগরিকের গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। হাটে, বাটে, ঘাটে, দোকানে, মলে, বাজারে গেলেই তার উত্তাপ গা পুড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে মানুষের মনের শান্তি স্বস্তি যেটুকু ছিল সেটাও উবে গেছে।

সেই সাথে রাজনৈতিক অঙ্গনের খবরও পীড়াদায়ক। প্রশাসন কিছুই সামাল দিতে পারছে না, রাজনৈতিক নির্বাহী তথা মন্ত্রী-মিনিস্টাররা এখন কোন পথে চলতে হবে, তার দিশা দিতে সক্ষম হচ্ছেন না। তবে এটা সত্য তারাও এই সমাজেরই মানুষ, তাদের গায়েও এই সময়ের তাপ, উত্তাপ, উত্তেজনা কিছুটা অবশ্যই লাগছে। কিন্তু সত্যিকার ভয় অন্যত্র। ষড়যন্ত্র চক্রান্তের যে কথা বলা হয়েছে, সেটা অবশ্যই ভীতিকর এবং উপেক্ষণীয় নয়। এ নিয়ে এখন কোথায় কী হচ্ছে জানি না, তবে অতীতে দেশে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে সেটা শতভাগ সত্য। এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশে দু’দুজন মহান রাষ্ট্রপতিকে জীবন দিতে হয়েছে।

এমন পীড়াদায়ক ঘটনা না ঘটলে জাতির বিধিলিপি ভিন্নভাবে রচিত হতো। তারা যদি ঘুণাক্ষরেও এসব ষড়যন্ত্রের তথ্য জানতে পারতেন, তবে এমন দুঃসহ বেদনা জাতিকে সইতে হতো না। কিন্তু আজকে ষড়যন্ত্র চক্রান্তের খবর তারা জানতে পেরেছেন বলে সেটা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার বিহিত ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন, জানি না। মানুষ কিন্তু জানতে চাইবে কোথায় এমন জঘন্য কার্যক্রম চলছে। যাক, এই স্পর্শকাতর বিষয়ের আলোচনা আপাতত এখানেই স্থগিত রাখছি। আমরা খারাপ সময় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির একটা সরল বর্ণনা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতার চিন্তা-চেতনায় ভিন্ন কোনো গূঢ় কথা বা তথ্য আছে কিনা সেটা আমরা জানি না।

তবে আজ পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে প্রযুক্তির সুবাদে। বিশ্বের একপ্রান্তে কোনো ঘটনা বা ঘটনাপ্রবাহের জের, ঢেউ, অন্যপ্রান্তে দ্রুত ছড়ায় এবং প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের যে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো অশুভ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশের ওপর কোনো কৃষ্ণ ছায়া ফেলছে কিনা, তার আদ্যোপান্ত কিছুই বলা হচ্ছে না। দেশবাসী আঁধারের মধ্যে রয়েছে, জনগণকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়তো কর্তৃপক্ষের পক্ষে অসম্ভব নয়, কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে সমূহ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছে।

এদিকে এটা এখন স্পষ্টই বোঝা যায়, ক্ষমতাসীন দল আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ব্যাপারে এখন পুরোপুরি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। আসলেই দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি দ্রুত নির্বাচন দাবি করে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে, এটাই গণতান্ত্রিক দেশের রেওয়াজ। তবে অবশ্যই সে নির্বাচনের সাথে যুক্ত হতে হবে কিছু বিশেষণ, সেই বিশেষণগুলো হলো- প্রশ্নমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ-সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য। এমন নির্বাচন হলে সবাই খুশি হবে, দেশে শান্তি স্থিতি আসবে। আর নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবশ্যই পরিষ্কার ও উচ্চকণ্ঠেই সব কথা বলতে হবে। নিছক কথা দিয়ে মালা সাজানোর সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার সংরক্ষণের মতো নির্বাচনের আয়োজনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করার লক্ষ্যে পায়ের মাপ মতো জুতো পরুন, ছোট হলে সেটা পা কাটবে, আর বড় হলে পায়ে ঢল ঢল করবে, পায়ের আগে জুতো চলে যাবে। হাঁটা আর সম্ভব হবে না। সময় কিন্তু অনেক ক্ষেপণ হয়েছে, তার পরও কাঁধের ঝুলিতে এখনো আপনাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই যোগ হয়নি। সংলাপ সংলাপ ‘ড্রামার’ আর কী প্রয়োজন?

কিভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়, সেটা রপ্ত করুন। আর সংলাপ থেকে যে ‘সাজেশন’ সেটা বহু পূর্বে পেয়ে গেছেন। এখন কর্মের রোডম্যাপ তৈরি করুন। তা না হলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। রকিব ও হুদা কমিশনের যে জিল্লতি হয়েছে, আপনাদেরও তা থেকে পৃথক কিছু হবে না। মনে রাখা দরকার, আপনাদের প্রতি নজর শুধু দেশবাসীর নয়, বিশ্বের অনেক দেশ আপনাদের কার্যক্রম ‘কিনলি অবজার্ভ’ করছে। কারণ আমাদের এখানকার গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা, মানবাধিকার নিয়ে দেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে। বৈদেশিক সাহায্য সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় পশ্চিমের উন্নত বিশ্ব এখন অনেক কিছুই অবলোকন করতে শুরু করছে। কারো ব্যর্থতায় জাতি ভুগবে, এমনটা কারো জন্যই মঙ্গলের নয়।

নির্বাচন কমিশনে এখন যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা হয়তো গভীর ডিপ্রেশনে আছেন, কেননা আপনারা ইদানীং চতুর্মুখী সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাছাড়া ক্ষমতাসীনরা সবকিছুর পালস বুঝে ভালো নির্বাচনের জন্য ইসিকে সহায়তা দেবে, এমনটা হয়তো সম্ভব নয় বলে ইসি বিষণ্ণ। সবার সাথে একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও ইসির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ইসি সকালে এক কথা বলে বিকেলে অন্য কথা বলছে।’ তার (মন্ত্রীর) এই অবজারভেশন অমূলক নয়। ইসি আসলে এ কথাই বলছেন, তারা শুরু থেকে এক লাইনে কথা বলেনি, ধরুন কুমিল্লার কথা। গোড়া থেকে আপনাদের কথার কেমন বৈপরীত্য ছিল সেটা একবার ভেবে দেখুন। আপনাদের সামনে সংবিধান, নির্বাচনী বিধিবিধান ও আপনাদের দূরের পূর্বসূরিদের কাজের পথ-পদ্ধতি রয়েছে। সেসব আপনাদের পাথেয় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তার ধারেকাছে আপনারা নেই। আপনারা যুদ্ধে জেতার জন্য এসেছেন, রণে ভঙ্গ দেয়ার জন্য নয়। অতীতে যারা দৃঢ় রুজু ছিলেন তারা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।

সাবেক সিইসি বিচারপতি আবদুর রউফ, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে, সে সময়ে দায়িত্বে থাকা প্রতি জেলার ডিসি ও এসপিদের একটা যৌথ সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানে বক্তব্য দেয়ার সময় বিচারপতি রউফ বলেছিলেন বিচার কার্য সম্পাদনের সময় যখন দেখা যায় বিবাদীর অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় তখন দোষীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে, আমরা বিচারকরা এতটুকু দ্বিধাবোধ করি না। এবার নির্বাচনে যদি দেখা যায় এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, আপনারা দায়িত্ব পালনকালে অনুরাগ বিরাগের অনুশীলন করেছেন, পক্ষপাতিত্ব করেছেন সে ক্ষেত্রে সংবিধান আমাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তার আলোকে সংশ্লিষ্ট দোষী ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুত করতে দ্বিধা করা হবে না। এভাবে প্রথম রাতেই কালো বিড়াল মারা পড়েছিল। অতীতের এসব কথা আজকে ইসিকে স্মরণে নিতে হবে।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের নির্বাচনী জোটের শরিকরা ইতোমধ্যে নির্বাচন মোকাবেলার জন্য কার্যক্রম ও কৌশল স্থির করে পরোক্ষভাবে নির্বাচনী প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য আগামীতে আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার, অর্থাৎ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতার উষ্ণ পরশ পেতে হবে এবং যা ২০৪০ সাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে তারা ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসেবে পদ্মা সেতুকে নির্বাচনী ময়দানে ফেলবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য এটা হয়তো শুধু দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ বরিশালের বেশ কয়েকটি জেলায় নিঃসন্দেহে ভালো কাজ দেবে। কিন্তু রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ক্ষেত্রে খুব কাজ দেবে বলে মনে হয় না।

তা ছাড়া এই একটি মাত্র ইস্যু দিয়ে সর্বত্র হয়তো বাজিমাত করা সম্ভব হবে না। ক্ষমতাসীনদের হাতে আর তো কোনো ইতিবাচক বিষয় নেই। সব অঞ্চলের মানুষ এখন নানা সমস্যায় দিশেহারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু এই জনপদের সর্বস্তরের মানুষের মন সুখানুভূতিতে নেই, দুঃসহ অভিজ্ঞতায় তারা ভারাক্রান্ত। এটা ক্ষমতাসীনদের হয়তো অজানা নয়। তাই তারা নতুন কী কৌশল আঁটে, সেটা বলা মুশকিল। বিজয়ের জন্য তারা অতীতের মতোই ইসির পিঠেই সওয়ার হবে, ইভিএম নিয়ে ‘নাছোড় বান্দা’ হওয়া এবং আরো সব নতুন কৌশল খুঁজে বের করে নেবে। তাদের বক্তব্য, বিবৃতিতে এ কথা পরিষ্কার, বিজয় তাদের অর্জন করতেই হবে।

অপর দিকে, সরকারের প্রতিপক্ষকে মনে রাখতে হবে, নিকট অতীতের সব নির্বাচনের হাল হকিকৎ বোঝা, এই ইসির যত ভূমিকা পর্যালোচনা করা। তাদের স্মৃতি অভিজ্ঞতা এখনই ফিকে, ধূসর হয়ে যাওয়ার কথা নয়, সেই নৈশভোটের কথা, ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনের নির্বাচিত হওয়ার যত ঘটনা। ইতোমধ্যে ইসির ভূমিকা নিয়ে কথা উঠেছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার নয়। এসব নিয়ে প্রতিপক্ষ শক্তি এখন সোচ্চার বটে, তবে এসব বিষয় সর্বসাধারণের মধ্যে বদ্ধমূল করতে কাজ করা দরকার, যা এখনো কিন্তু সম্পন্ন হয়নি। জনগণের মধ্যে এসব প্রোথিত করতে হবে, তাদের ভোটাধিকারের জন্য গণতন্ত্রের সবাইকে হাতে হাত ধরে অগ্রসর হতে হবে। জাতীয় সংসদকে প্রতিনিধিত্বমূলক করতে হবে। ক্ষমতা হাত বদল একমাত্র এবং শুধু একমাত্রই, জনঅভিপ্রায়ের মাধ্যমেই হতে হবে। তাতে যে সংসদ গঠিত হবে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সব জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারী হতে হবে।

বিএনপি এবং তাদের সমমনাদের মনে রাখতে হবে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই তাদের হাতে ম্যানডেট পাওয়া। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত অবাধ সুষ্ঠু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেনারেল (অবঃ) এমএজি ওসমানীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এরপর বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৯৮১ সালে ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডক্টর কামাল হোসেনকে পরাজিত করেন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বিএনপি সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যায়। তখন বিএনপি ভাঙাচোরা একটি দল, জেনারেল এরশাদ সে সময় এই কাজটি করে গিয়েছিলেন। এরপর অষ্টম সংসদের নির্বাচনে বিএনপি আবার দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এসব নির্বাচনের কোনোটি নিয়েই অনিয়ম-কারচুপি বা অন্য কোনো অভিযোগই ছিল না।

তবে বিএনপি ও তার শরিকদের এখন এ কথা মনে রাখা দরকার, অতীত ভালো ছিল বলে গা এলিয়ে দিলে চলবে না, পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখুন। তাছাড়া আপনাদের প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীনদের মনোভাব সাধারণের চেয়ে নিশ্চয়ই আপনারা ভালো জানেন। আজ অবশ্যই বিএনপি একটি কাণ্ডারীবিহীন রাজনৈতিক সংগঠন। সেজন্য তাদের বহু সমস্যা পোহাতে হবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তাদের অনেক কিছুই বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন না ঘটলে, নির্বাচনের প্রচার কাজ চালাতে কে তাদের প্রধান ‘ক্যাম্পেইনার’ হিসাবে কাজ করবেন, দেশব্যাপী চরকির মতো কে ঘুরে বেড়াবেন? জে. এরশাদ বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে দলচ্যুত করে স্বীয় দল গঠন করেছিলেন। এখন কি তার ‘রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে? এখনই এসব ঠিক করে নিতে হবে। নানা বিষয়ে দলের নিজস্ব একদল বিশেষজ্ঞদের এখনই তৎপর হয়ে উঠতে হবে যারা দলকে তথ্য, তত্ত্ব, উপায়-উপাত্ত দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন।

তাদের বলয়ে বুদ্ধিজীবী পেশাজীবীদের এখন থেকে সক্রিয় হতে হবে। সম্মুখে যে নির্বাচনী সময় তা এতটা কঠিন, সে সম্পর্কে চিন্তা করা যায় না। ভোটের সময় কিন্তু দেখতে দেখতে চলে আসবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে দেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশটা তৈরি হবে কিনা। ইসির এ পর্যন্ত যে পারফরম্যান্স তাতে কোনোক্রমেই এমন প্রত্যয় তৈরি হচ্ছে না যে, তারা ভালো নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারবে। আজকে যে ক্রান্তিকাল চলছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় কিন্তু অংশগ্রহণমূলক একটা ভালো নির্বাচন।

দেশের রাজনীতি থেকে ‘বিতর্কিত নির্বাচন’ যত দ্রুত দূর করা যায় সেটাই মঙ্গল, রাজনীতি শুদ্ধ ও সুষ্ঠু ধারায় ফিরে আসুক, সংসদ অভিমুখী হোক রাজনীতি, সংসদ জীবন্ত প্রাণবন্তু হোক, উত্তাপ উত্তেজনাহীন প্রাণবন্ত একটি উচ্চতর বুদ্ধিদীপ্ত তর্কে কোরাম হয়ে উঠুক, জাতির গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে সংসদের ভেতরে গৃহীত হোক। সংসদীয় সরকারব্যবস্থা, তার রাজনৈতিক শৈলী এমনই হয়ে থাকে। আমাদের যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন বিদ্যমান তাকে কোন শ্রেণীতে ফেলা হবে তা আদৌ আমাদের জানা নেই। এই সময়ে রাজনীতির প্রকৃত ঠিকানা, গন্তব্যের নির্দিষ্ট কোনো ডেসটিনি যেন নেই।

অথৈ সমুদ্রে পাল ভাঙা তরীর যেমন অবস্থা হয়, আমাদের ঠিক তেমনি অবস্থা। যখন যে প্রধান ব্যক্তি তাকে ঘিরে দেশ টেনেহিঁচড়ে চলছে, ব্যক্তি বিশেষের প্রশাসন পরিচালনার শৈলী, সেটা রাষ্ট্র পরিচালনা স্টাইলে পরিণত হয়েছে। অথচ দেশের সংবিধানে রয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র কোন নীতি ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে চলবে, সেই আদর্শিক পথের ওপর ফেলে বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রে অনুসৃত পথকে বিচার করুন, দেখবেন সব কিছুই আকাশপাতাল পার্থক্য। তদানুরূপ সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুসরণ ব্যতিরেকে সংসদ যেভাবে হেলেদুলে দুলকি চালে চলছে, সেই সংসদকে কোন নামে অভিহিত করা হবে। সেটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার হয়তো হবে। এখন রাষ্ট্রব্যবস্থার চলন বলন আর সংসদীয়ব্যবস্থার দুর্দশা মিলিত ফল হলো- দুর্নীতি, অপচয়, অর্থপাচার, দুরাচারীদের মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘোরাফেরা, নীতি-নৈতিকতার চরম দুর্ভিক্ষ, সে এক ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থা।

যে বক্তব্য দিয়ে বক্ষমান এই নিবন্ধের সূচনা করা হয়েছে, তার জের ধরেই কথা বলে লেখার ইতি টানতে চাই। সূচনায় চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ইস্যু নিয়ে কথা বলা হয়েছে। যদিও বিষয়টি স্পর্শকাতর। তার পরও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া ভালো বলে মনে করছি না। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত কোনোক্রমেই এবং কখনো অনুমোদনযোগ্য বিষয় হতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন ভয়ঙ্কর ডিসক্লোজার দিয়ে এখন কর্তৃপক্ষের সবাই নীরব নিশ্চুপ কেন! জানি না সেটা ছায়া বা আলেয়া কিনা। তবে রাজনৈতিক ময়দানে কারোই ছায়ার সাথে যুদ্ধ করা ঠিক নয়। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মাত্রা বহুদূর বিস্তৃত। সেখানে এমন কিছু ডিসক্লোজ করা যথার্থ নয় যা মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে। রাজনৈতিক নেতারা অন্যসব কাজের পাশাপাশি মানুষকে ‘অ্যানলাইটেন্ট’ করবেন, আশাবাদী করবেন। উজ্জীবিত করুন, বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement