২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খোলা দরকার

-

কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সব কিছুকেই তছনছ করে দিয়েছে এবং এখনো এর তাণ্ডব চলছে। বিশ্বের আরো অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও এর শিকার। মানুষের রুটি-রোজগার, কাজকর্ম থেকে শুরু করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই আমরা অনুভব করছি। কিন্তু আমাদের দেশে এই মহামারীর সবচেয়ে বড় আঘাতটা লেগেছে শিক্ষা খাতে। করোনা সঙ্কটের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দেশের ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণীবন্ধুদের সাথে স্বাভাবিক মিথষ্ক্রিয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এটি কার্যত তাদের জন্য এক ধরনের মানসিক আঘাতও। বন্ধ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল প্রত্যাশার দিন গুনছেন, কখন শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে।

সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অব্যাহতভাবে বন্ধ থাকায় প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে জানায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এটি করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকার ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম। রিপোর্টে বলা হয়, যত বেশি সময় ধরে শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকবে সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের ঝুঁকি ততই বেড়ে যাবে। সেই সাথে তাদের স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়বে। রিপোর্ট মতে- ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ৭৯ শিক্ষাদিবসে স্কুলগুলো পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে মহামারী শুরুর পর বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলগুলো পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এখনো অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি টোমো হুযুমি বলেছেন, স্কুলে সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নেয়া বন্ধ থাকার কারণে, শিশুরা শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সাথে সাথে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক সুস্থতার ওপরও গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ক্ষেত্রে প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি। তার পরামর্শ হচ্ছে- ‘নিরাপদে স্কুল আবার খুলে দেয়া ও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

স্কুল বন্ধ থাকার বিরূপ প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বাংলাদেশের সরকার টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, রেডিও ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দেশী-বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চালু করা হয়েছে অনলাইনে ক্লাস নেয়া। কিন্তু এই দূরশিক্ষণ বা অনলাইন শিক্ষায় সবার, বিশেষ করে গ্রাম এলাকার ও গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীদের সে সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অংশ নেয়ার হার খুবই কম। ৫-১৫ বছর বয়সী শিশুদের ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোট শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশ রেডিও, কম্পিউটার টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। এদের প্রায় সবার সুযোগ রয়েছে মোবাইল ফোনে, তবে এদের অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহারে এরা অভ্যস্তও নয়। সমীক্ষাসূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের ধনী ও গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে ডিজিটাল বিভাজন। সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর ৯০ শতাংশের যেখানে টেলিভিশনের প্রাপ্যতা রয়েছে, সেখানে সবচেয়ে গরিব শ্রেণীর ৯.২ পরিবার পাচ্ছে সেই সুযোগ। বিকল্প শিক্ষা মাধ্যমের প্রশ্নে একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে আরেকটি জরিপ প্রতিবেদনে। সে প্রতিবেদন মতে, ২১ শতাংশ পরিবারের সুযোগ রয়েছে অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার, কিন্তু বাস্তবে অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে মাত্র ২ শতাংশ পরিবার।

এ ধরনের আরো অনেক সমীক্ষা প্রতিবেদনের উদাহরণ তুলে ধরে দেখানো যাবে, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে নানাভাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার প্রতিফলন রয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল চরম উদ্বিগ্ন। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বেশ কয়েকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সফল হতে পারেনি। বরং বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষিত তারিখ পেছানো হয়েছে। এক পর্যায়ে বেশ জোর দিয়েই বলা হয়েছিল চলতি বছরের ১২ জুনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আংশিকভাবে খুলে দেয়া হবে। সে প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি। বরং ৩০ জুন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি নতুন এক ঘোষণায় তার পূর্বপ্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সময় আরো বাড়িয়ে দেন। বলা হয়, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জীবন থেমে থাকেনি, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। অবশ্য সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় হামলার ধাক্কা সামলাতে প্রায় সব খাতে আমাদের লকডাউন বা শাটডাউনের পদক্ষেপে যেতে হয়েছে। এই সময়টায় এখন দেশে সে লকডাউন-শাটডাউন কার্যকর নেই। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এর ফলে করোনার প্রভাব এখন কিছুটা কমে এসেছেই বলে মনে হয়।

এমনি প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ আগস্ট সচিবদের সাথে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিয়ে দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিবেচ্য এই দুটি বিষয় হলো : করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নয়ন ও টিকাদান পরিস্থিতি। তা ছাড়া তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো না খোলা পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষাকর্মসূচি অবশ্যই চালু রাখতে হবে। এ বৈঠকে তিনি আরো বলেন, ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের টিকাদান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও জনমনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিগগিরই খুলে দেয়া নিয়ে সংশয় কাটেনি। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার তার এই ঘোষণা ছিল শর্তসাপেক্ষে। তাছাড়া, তার এই বক্তব্যের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, ‘উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত স্কুল খোলা হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেয়া হবে। যদি করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকে, তবে সরকার গত বছরের মতো স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের ওয়ার্কশিট মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মহলের উদ্বেগের পারদ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। এই উদ্বেগ ধারণ করেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি তুলেছে। গত ২৪ আগস্ট আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়াসহ তাদের ১১ দফা দাবির কথা জানিয়েছে। তাদের ১১ দফার মধ্যে অন্যতম দাবি হলো : সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তা না হলে, প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নিতে শুরু করবেন। তাদের দাবি : আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দিতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম থেকে পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আবাসিক হলে প্রথমে শুধু শিক্ষাজীবনের শেষদিকে থাকা অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষে পরবর্তী ব্যাচগুলোর পরীক্ষা ধাপে ধাপে নিতে হবে।

তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : ভবিষ্যতে যেকোনো আবাসিক হলে গণরুম নামে কোনো ব্যবস্থা যেন না থাকে সেজন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে টিকাদান ও করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোর মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, আইসোলেশন ও অসুস্থ হলে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষাকার্যক্রম শেষ হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানকার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এখনো করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে ও ৫০ শতাংশ অফলাইন চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, তাদের সশরীর ক্লাস নিতে হবে। যারা আসতে পারবে না, তারা অলাইনের ক্লাসে অংশ নেবে। শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং-লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রচুর মানুষ গুরুতর মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অনলাইনে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের জন্য কম দামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের একাদশ দাবি হলো : ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারকে মাথায় রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পিছিয়ে নেয়ার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতিটা হচ্ছে, তা আর চলতে দেয়া যায় না। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে দীর্ঘতম সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার রেকর্ড করে বসে আছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চরম সময়। এ কথা সত্যি- ক্যাম্পাস লার্নিং সব সময়েই সর্বোত্তম শিক্ষাপদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। এ পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের আরো অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা সামাজিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবিক মিথষ্ক্রিয়ার অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ ঘটছে না। দেশে দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষা চালু হয়েছে সত্য, তবে সারা দেশে তা চালু হয়নি এবং তা করাও বাস্তবে সম্ভব নয়। অপর সত্যিটা হচ্ছে- স্কুলের শিশুদের জন্য দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষা তেমন কার্যকর নয়। তা ছাড়া দেশে এখন যে দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চলছে, তা থেকে উপকৃত হচ্ছে সমাজের সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরাই। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের যেভাবে অটোপ্রমোশন দেয়া হচ্ছে, তাতে তাদের শিক্ষামানের ভিত কতটুকু নড়বড়ে করে তোলা হচ্ছে- তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? স্কুলের শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন দেয়া আত্ম প্রবঞ্চনার এক চরম উদাহরণ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার সিদ্ধান্ত কোনোমতেই যৌক্তিক হতে পারে না। এখনো আমরা সরকারের কাছ থেকে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা পাইনি : কত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পন্ন করা হবে। আবার সাধারণভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য যে দুটি পূর্বশর্ত দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কিন্তু বলা হয়নি পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। প্রশ্ন আসে, সরকার কি মনে করে দেশে সংক্রণের হার ৫ শতাংশে নেমে এলে সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে? আর সে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে আমাদের? সরকার এ পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় আমলানির্ভর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে আসছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের মতামত সেখানে আমলে নেয়া হয়নি। মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের একসাথে ডেকে, মতামত নেয়া ও করণীয় ঠিক করা উচিত, যাতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই খুলে দেয়ার চরম সময় এটি। এখন শুধু প্রশ্ন- কী করে কত তাড়াতাড়ি খোলা যায়, সে পথটি বের করা। এই বছর দেড়েক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে হযবরল ও জটিল জট সৃষ্টি করা হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খোলা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। 

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক; কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement