০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দারিদ্র্য মোকাবেলা এবং টিকাদান কর্মসূচি

দারিদ্র্য মোকাবেলা এবং টিকাদান কর্মসূচি - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক মা-বাবা সন্তানদের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দূরের কথা, এমনকি ক্ষুধা নিবারণ করার মতো প্রয়োজনীয় প্রতিদিনের খাবারটুকুও জোগাড় করতে পারছেন না। অথচ আমাদের এই পৃথিবীতে সবার পেটপুরে খাওয়ার মতো খাদ্যপণ্য আমরা প্রতি বছরই উৎপাদন করছি। এর পরও এই কোভিড-১৯ মহামারীর আগের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের দিকে বিশ্বের ৮১ কোটি ১০ লাখ মানুষকে প্রতিদিন না খেয়ে কিংবা অর্ধাহারে রাতে বিছানায় যেতে হয়েছে। ৫৫টি দেশের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ ২০১৯ সালটি কাটিয়েছে খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতার মাঝে। এমনকি বিশ্বের প্রতি তিনজনে একজন মানুষ ভুগছে কোনো না কোনো মাত্রার পুষ্টিহীনতায়।

কোভিডপীড়িত ২০২০ ও ২০২১ সালে এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা নিশ্চিত অনেক বেড়ে গেছে- বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক অনেক রিপোর্টে এমনই অবস্থার প্রতিফলনই রয়েছে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা আজকের এই সময়টায়, বিশেষ করে এই করোনাপীড়িত সময়ে বিশ্বের জন্য, বিশেষত আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৫ সালে আজকের তুলনায় বিশ্বের দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো ছিল। তবু ভুক্তভোগীদের জন্য তা ছিল দুর্বিষহ। তখন বিশ্বসমাজ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ‘১৭ দফা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ গ্রহণ করে, যা এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) নামে সমধিক পরিচিত। এর দ্বিতীয় দফাটি ছিল : ‘জিরো হাঙ্গার’। এই লক্ষ্যমাত্রায় ঘোষণা করা হয় ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি উন্নয়ন ও টেকসই কৃষির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। সে প্রতিশ্রুতির অর্জন সাফল্য কোন পর্যায়ে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে সহজেই। এই ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি উন্নয়ন ও টেকসই কৃষি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রথম শর্ত যে একটি যুদ্ধবিগ্রহমুক্ত পৃথিবী, বিশ্বনেতারা সে কথাটি বেমালুম ভুলে গেছেন। বরং উল্টো দিকে এই ঘোষণার পর থেকে বিশ্ব নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বের নানা দেশে যুদ্ধবিগ্রহের মাত্রাটাই বাড়িয়ে চলেছেন। তাদের প্ররোচিত যুদ্ধে লিপ্ত অনেক দেশেই এখন চলছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এসব দেশে মানুষ প্রতিদিন মরছে না খেয়ে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর পুষ্টিহীনতা যেন এসব দেশে স্থায়ী বাসা বেঁধে ফেলেছে।

এরই মধ্যে ২০২০ ও ২০২১ সাল দুটিতে চলছে করোনাভাইরাসের অভিঘাত- যা বিশ্ব ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং তুলছে। এ সম্পর্কিত যেসব প্রতিবেদন এই সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে, তা রীতিমতো আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। গত মাসে প্রকাশিত অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণে বিশ্বে যখন প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে সাতজন, সেখানে ক্ষুধার কারণে প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে ১১ জন। এ পরিসংখ্যান বলছে, কোভিডের চেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ক্ষুধার প্রভাব।

এই দাতা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ এখন ভুগছে খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতায়। গত বছরের তুলনায় এবার এই সংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি। অতএব, ক্ষুধাই এখন হয়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার মহামারী। গত বছরের তুলনায় এখন ক্ষুধার প্রাবল্য বেড়েছে ছয় গুণ। উল্লিখিত এই সাড়ে ১৫ কোটি ক্ষুধাপীড়িত মানুষের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষুধার শিকার হয়েছে সামরিক সঙ্ঘাতের কারণে। যুদ্ধ বা সামরিক সঙ্ঘাত চলছে, এমন সব দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি হারে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে।

গত মধ্য-জুনের হিসাব মতে, এখন সবচেয়ে চরম দুর্ভিক্ষ চলছে ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেনে। এসব দেশে ক্ষুধার শিকার মানুষের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫ গুণ বেড়েছে। অক্সফামের রিপোর্ট মতে- ইয়েমেন, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, আফগানিস্তান ও ভেনিজুয়েলাসহ আরো কয়েকটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এর প্রধান কারণ অর্থনীতির ওপর কোভিডের ক্ষতিকর প্রভাব। এসব তথ্য রয়েছে অক্সফামের ‘গ্লোবাল ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক রিপোর্টে। তবে যুদ্ধের প্রভাবও যে এর সাথে লেপটে আছে তা বলাই বাহুল্য। অক্সফামের রিপোর্টেও এরই প্রতিফলন পাই। অক্সফাম বলেছে, এই চরম মাত্রার ক্ষুধার প্রধান কারণ তিনিটি : করেনা মহামারী, পরিবেশ সঙ্কট ও দেশে-দেশে কিংবা অভ্যন্তরীণ সামরিক সঙ্ঘাত। যুদ্ধ এককভাবে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষুধা আর দারিদ্র্য বাড়িয়ে তুলেছে। করোনা মহামারীর শুরুর পর থেকে যুদ্ধরত ২৩টি দেশের ১০ কোটি মানুষকে ঠেলে দেয়া হয়েছে ক্ষুধার মুখে। এসব দেশে খাদ্য-ঘাটতির পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে।

দুর্ভাগ্য, করোনা মহামারী মেকাবেলার পরিবর্তে যুদ্ধরত পক্ষগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধেই সমধিক ব্যস্ত। এসব দেশে পরিবেশ সমস্যা ও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, তা অবসানে মন দেয়ার সুযোগ এসব দেশের সরকারগুলোর নেই। বরং উল্টো, এসব দেশে ক্ষুধাকে ব্যবহার করা হচ্ছে কৌশলী যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে। বেসামরিক লোকজনের খাদ্য, পানীয় ও ওষুধের টাকা চলে যাচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র কেনার পেছনে। এর করুণ পরিণতি হচ্ছে দুর্ভিক্ষ। এর পরও মানুষ থাকতে পারছে না নিজেদের বাড়িঘরে। কেউ পালিয়ে দেশ ছেড়েছে, আবার কেউ হচ্ছে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। ক্ষুধা আর দারিদ্র্য নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের সামনে। বিশ্বমোড়ল দেশগুলো এর জন্য শতভাগ দায়ী। কারণ, এসব যুদ্ধ আর দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছে তাদের। তাদের প্রকাশ্য ঘোষণা ‘জিরো হাঙ্গার’, আর কৌশলী প্রয়াস ক্ষুধাসৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের দেশগুলোকে দুর্বলতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের মোড়লিপনা আরো জোরদার করে তোলা। বিশ্ব মোড়লদের এই চরম প্রয়াসটি চলছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও এই মহামারীর সময়েও এসব দেশের সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। বিশ্বের মানুষের ক্ষুধা দূর করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ জাতিসঙ্ঘের প্রয়োজন, এই অর্থ এর চেয় ছয় গুণেরও বেশি বলে উল্লেখ রয়েছে অক্সফামের রিপোর্টে। তাই অক্সফাম যুদ্ধরত দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এই যুদ্ধ-সঙ্ঘাত পরিহার করতে, যাতে মানুষ ধ্বংসকর ক্ষুধা থেকে মুক্তি পেতে পারে। সংস্থাটি দাতা দেশগুলোর প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছে, জাতিসঙ্ঘের ক্ষুধামুক্তির উদ্যোগে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করার জন্য। একই সাথে করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। গত এক দশকের মধ্যে এটি খাদ্যের দাম সর্বোচ্চ হারের বৃদ্ধি। ফলে নতুন করে অতিরিক্ত এক কোটি মানুষ ক্ষুধার মুখে পড়েছে বলে অক্সফামের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ দিকে আইএমএফ সম্প্রতি এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে অতিরিক্ত আরো আট কোটি মানুষ কোভিডের কারণে ২০২০-২১ সময়ে চরম দারিদ্র্য শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষও অন্তর্ভুক্ত। সপ্তাহ দুয়েক আগে আইএমএফ প্রকাশ করেছে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) আপডেট’। এতে উল্লেখ করা হয়, স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে শ্লথগতির ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ও দারিদ্র্য অবসানে গতি আসেনি।

আইএমএফের ওয়াশিংটন ডিসির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইকোনমিক আউটলুক আপডেট প্রকাশের সময় আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেন, ২০২১ সালের স্বল্প আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে দেখা গেছে, এসব দেশে টিকা দেয়ায় গতি ছিল না।

এই আউটলুকে বলা হয়, টিকা দেয়ায় ধীরগতির কারণে ২০২১ সালে বিশ্ব জিডিপির হার হবে ৬ শতাংশ, আর ২০২২ সালে ৪.৯ শতাংশ। ২০২১ সালে এপ্রিলে ঘোষিত আউটলুক আপডেটে একই প্রবৃদ্ধি হার ঘোষিত হয়েছিল। তবে এই আউটলুকে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য জিডিপির প্রবদ্ধি হার প্রকাশ করেনি।

এই আপডেট অনুযায়ী, নতুন ধরনের ভাইরাস ২০২১ সালের শেষের দিকে বিকাশমান বাজার ও উন্নয়শীল দেশগুলোতে দ্বিতীয় আরেকটি সংক্রমণের ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন জাতের এই ভাইরাস সেসব দেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যেগুলোতে টিকা দেয়ার হার নিচু। এমনকি অনেক উন্নত দেশেও এ ঝুঁকি রয়েছে। সর্বশেষ আউটলুক আপডেটে উল্লেখ করা হয়, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরদার করা হলেও এই সময়ে তেলে দাম ২০২০ সালের নিম্ন ভিত্তির তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। তেলবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়তে পারে ৩০ শতাংশ। এই প্রবণতা উল্টোদিকে প্রবাহিত করতে চাইলে দ্রুত প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী সমান্তরালভাবে টিকাদান কর্মসূচি গতিশীল করে তোলা।

আমরা সম্প্রতি প্রকাশিত নানা রিপোর্টগুলো থেকে একটি মুখ্য তাগিদ পাই। করোনা মহামারীর শুধু বিপুল মানুষের প্রাণ কেড়েই নিচ্ছে না, সেই সাথে থামিয়ে দিচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবদ্ধির চাকাও। দেশে দেশে বাড়িয়ে তুলছে গরিব মানুষের সংখ্যা। বাড়িয়ে তুলছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মাত্রাও। তাই এই সময়ে করোনা মোকাবেলা জোরদার করে তোলার তাগিদটাই আসছে সবার আগে। আর এ ক্ষেত্রে প্রধান করণীয় হয়ে উঠেছে যথাসম্ভব দ্রুত ভ্যাক্সিন দেয়া সম্পন্ন করা। এ পর্যন্ত পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, যেসব দেশ লকডাইন আর শাটডাউন কড়াকড়ি কার্যকর করার চেয়ে টিকা দেয়ার ওপর বেশি জোর দিয়েছে, সেসব দেশ এখন এর সুফল ভোগ করছে। টিকা দানে শিথিলতা প্রদর্শন করা দেশগুলো এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

অতীতে বাংলাদেশেও আমরা লক্ষ করেছি টিকাদানের ধীরগতি। তবে সুখের কথা, দেরিতে হলেও এখন অন্য আরো বেশ কয়েকটি দেশসহ বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি গতিশীল করে তোলা হয়েছে। দেশে টিকা পৌঁছানোর আগে এ নিয়ে জনমনে বিরাজ করছিল নানা সংশয়। মানুষ সংশয় নিয়ে অপেক্ষা করছিল কখন আসবে তার নিজের টিকা নেয়ার পালা। কিছু মানুষের আশঙ্কা ছিল টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। যা হোক, এখন টিকাদানের জন্য নিবন্ধন ব্যাপক বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে করোনা মোকাবেলা প্রসঙ্গে সরকারের ভাবমর্যাদার নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে যখন বাংলাদেশে করোনার সূচনা ঘটে, তখন করোনা মোকাবেলায় সরকারের অসচেতনতা ও অদক্ষতা প্রবলভাবে সরকারকে সমালোচনার মুখে ফেলে। কারণ, তখন করোনা মোকাবেলায় সরকারের যথাযথ প্রস্তুতির অভাব সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তখনই চরমভাবে ধরা পড়ে এ ক্ষেত্রে আমাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবটি। সেই সাথে ধরা পড়ে হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বেড, ইমারজেন্সি রুম, আইসিইউ ইউনিট, ভেন্টিলেটরসহ যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও নার্সের অভাবও। তখন প্রয়োজন অনুভূত হয় স্বাস্থ্যসেবায় অধিকতর মানবসম্পদ নিয়োগের ও আরো বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের।

সে যা-ই হোক, এখন পরিস্থিতি জানিয়ে দিচ্ছে, বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচিতে শিথিলতা প্রদর্শনের আর কোনো সুযোগ নেই। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পুরো জনগোষ্ঠীর টিকাদান সম্পন্ন করে লকডাউন আর শাটডাউনের অবসান ঘটাতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে পাঠাতে হবে। স্কুল-কলেজ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। ২০২০ ও ২০২১ সালে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের জীবনে যে অভাবনীয় মাত্রার ক্ষতি হয়ে গেছে, তা আর বাড়তে দেয়া যায় না। অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, হতদরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া থামানো, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা মোকাবেলা ও খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও মানুষের আয়-রোজগারের পথ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে টিকাদান কর্মসূচি আরো জোরদার করে তুলতে হবে। আপাতত এর বিকল্প নেই।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement