০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বাইডেন, ইমরান খান ও তালেবান আমিরাত

ইমরান খান ও জো বাইডেন -

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘হিলালে পাকিস্তান’ তকমা পাওয়া ব্যক্তিত্ব এবং ৫০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত। ওবামার সময় ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুইবার ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। পাকিস্তানের সাথে বাইডেনের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ট্রাম্পের মতো নয়। পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের জন্য বাইডেন উৎসাহিত করতেন। সিনেট বিদেশ সম্পর্ক কমিটিতে কাজ করার সময় তিনি ২০০৮ সালে পার্টনারশিপ অ্যাক্ট করেন যা ২০০৯ সালে কেরি-লুগার-বার্গম্যান অ্যাক্টে পরিণত হয়। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরালো করা হয়। এই বিধির বলে বেসামরিক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেয়া হয় ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাইডেন বেশ কয়েকবার পাকিস্তান সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা জিলানী, নওয়াজ শরীফ ও আসিফ আলী জারদারির সাথে একান্তে কথা বলেছেন। পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে বাইডেনের স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে। পাকিস্তান সম্পর্কে বাইডেনের ‘ইনসাইট’ ট্রাম্পের চেয়ে অনেক প্রখর। তিনি ‘কাশ্মির ইস্যু’ এবং আফগানিস্তানের ‘ইনটিগ্রিটি’ নিয়ে আন্তর্জাতিক মজলিসে কথা উঠিয়েছিলেন। এসব কারণে বাইডেনকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘হিলালে পাকিস্তান’ বা ‘পাকিস্তানের চাঁদ’ উপাধি দেয়া হয়। ২০১১ সালে বাইডেনের পাকিস্তান সফরের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ, আমি মনে করি, পাকিস্তানের জন্যও বিষয়টি তেমন।’ মিডিয়ার সাথে বলতেন, ‘আপনারা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সার্বভৌম মর্যাদায় আঘাত করে, আপনাদের প্রতি সম্মান ও আস্থা রেখেই বলছি, এসব চরমপন্থীরাই করছে এবং পাকিস্তানের সুনাম নষ্ট করছে। যারা মনে করে আমরা ভারতের স্বার্থই দেখছি, সেটি সঠিক নয়।’

ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে বিশাল চীন অন্য দিকে রাশিয়া ও ইরান। চীনের সাথে ভারতের চিরন্তন বিরোধ থাকায় ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের বিশেষ মর্যাদা। ভারত কোয়াডের অন্যতম সদস্য। সম্প্রতি জি-৭ জোটের চীনবিরোধী প্রকল্পে ভারত যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। অপর দিকে, পাকিস্তান হাতছাড়া হয়ে গেলে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এবং ইরানের সাথে পাকিস্তান জোটবদ্ধ হবে, যা ওয়াশিংটনের কাছে কৌশলগত দিক দিয়ে লাভজনক হবে না। ট্রাম্প পাকিস্তান সম্পর্ককে যতটুকু ক্ষতি করেছেন বাইডেন সেগুলো কাটিয়ে উঠতে চান। ট্রাম্পের আমলে কাশ্মির পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। কিন্তু কাশ্মির বিষয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, ভারত তা বুঝতে পারে। তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদি কাশ্মির বিষয়ে কিছু একটা ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ককে সঠিক রাখতে চান।

বাইডেন পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলেছেন অনেকবার, আঞ্চলিক শান্তি ও অর্থনৈতিক প্রগতির বিষয়েও কথা বলেছেন। ২০০৭ সালে তিনি ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তান দুনিয়ার সবচেয়ে সম্ভাব্য বিপদসঙ্কুল দেশ।’ ২০০৮ সালে বলেন, ‘আমি শপথ করে বলছি, যদি আপনাদের ওপর কোনো আক্রমণ হয়, সেটি হবে আফগানিস্তানের পাহাড়ে বসে থাকা আলকায়েদার কাছ থেকে। কোনো ড্রোনের আক্রমণে নয়।’ ওবামা প্রশাসনের সময় পাক সীমান্তের অভ্যন্তরে ড্রোন আক্রমণ ৬৩১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানি জনগণ ও সেনাবাহিনী ড্রোন আক্রমণে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে পড়ে। অথচ এই ড্রোন আক্রমণ নির্দেশনা-ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জো বাইডেন! পরিস্থিতির পরিহাস, আজ বাইডেনের পালা পাকিস্তানে নিরাপদ ড্রোন ঘাঁটি বানানোর জন্য ইমরানকে অনুরোধ করায়। পাকিস্তান ঘাঁটি বানাতে না দিলে যদি সেটি মধ্য এশিয়ার কোনো দেশে পেন্টাগন বানায় সেটিও আঞ্চলিক সমস্যা ও বিরোধের নতুন দুয়ার খুলে দেবে; ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া ও চীন সবাই বিপক্ষে যুক্ত হয়ে পড়বে। তবে ভারত সীমান্তে ড্রোন ঘাঁটি করা যাবে কি না এবং কতটুকু সুবিধা হতে পারে সেটি নয়াদিল্লি, কাবুল ও ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

আর কোনোটিই সম্ভব না হলে আমেরিকা সব সেনা কাবুল থেকে উঠিয়ে নেবে বলে মনে হয় না এবং তুরস্কও সেনা প্রত্যাহার করবে না। ২০২০ সালের চুক্তি অনুযায়ী ন্যাটোর সব সেনা প্রত্যাহার করতে চাপ দিচ্ছে তালেবানরা। তুরস্ক প্রস্তাব দিয়েছে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আফগানিস্তানে থেকে যেতে। আফগানিস্তানে কোনো সমুদ্রপথ সংযুক্ত না থাকায় বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক বিমানবন্দর পাহারা দিতে পারলে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কাছে আরো মর্যাদা পাবে। আফগানিস্তানে সার্বিক শান্তির জন্য তুরস্ক পাকিস্তানের সহায়তাও চেয়েছে। ইরাকেও তুর্কি সেনাদের বড় ঘাঁটি রয়েছে এবং বিদেশী সেনারা চলে গেলেও তুর্কিরা থেকে যাবে।

তালেবানরা চায় আফগানিস্তানে ‘প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হোক। তারা মনে করে, একটি প্রকৃত ইসলামী শাসন আফগানদের সব সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। তালেবান নেতা মোল্লøা আবদুল গনি বারাদার উল্লেখ করেন, প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে নারী ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত করা হবে এবং কূটনীতিক ও এনজিওকর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে সক্ষম হবে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় বিধি অনুসারে নারীদের অধিকারের বিধান তৈরি করা হবে।
এখন তালেবানরা বুঝে ‘শান্তি’ কী জিনিস। শান্তি আলোচনার ধীরগতি নিয়ে কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলছেন, তালেবানরা এখনো কোনো লিখিত শান্তি প্রস্তাব জমা দেয়নি। আফগান সরকার তালেবানের সাথে আলাপ করে সুবিধা করতে পারছে না। সেনা প্রত্যাহারের পর যদি কাবুলে ‘ইসলামী আমিরাত’ প্রতিষ্ঠিত হয় তবে পাকিস্তানি তালেবানরা রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করে তুলবে। ইমরান সরকারের জন্য সেটি আরো একটি বড় ধরনের ঝুঁঁকি। কয়েক বছর ধরে এমনিতেই পাকিস্তানি তালেবানরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারকে বিব্রত করে আসছে এবং চীন পাকিস্তান করিডোরের কাজে বাধা দিচ্ছে।

সুপার পাওয়ার আমেরিকা ২০ বছরের যুদ্ধ ফেলে চলে যাওয়াকে পরাজয় বলছে না। তারা বলছে, ‘আরো বড় সমস্যা’ দেখভাল করার প্রয়োজন হচ্ছে; তা ছাড়া এই দীর্ঘ সময়ে ধ্বংস ছাড়া কিছু অর্জিত হয়নি। সেনা চলে গেলেও বাইডেন প্রশাসন চায় কোনো না কোনোভাবে কাবুল প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব রাখতে। প্রসঙ্গত, বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বই লিখেছিলেন ‘ডটার অব দ্য ইস্ট’। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদ ছাড়া পাকিস্তানে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা সম্ভব নয়।’ তবে এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কাছাকাছি কোনো সামরিক ঘাঁটি ছাড়া কাবুলের ওপর ক্ষমতা চালানো সম্ভব নয়। এ রকম সেনা ঘাঁটির জন্য সিআইএর প্রথম পছন্দ পাকিস্তান। এমন কি যুক্তরাষ্ট্র যদি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ঘাঁটিও ব্যবহার করে সেগুলোকেও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে হবে। এই জরুরি প্রয়োজনে সিআইএ ডাইরেক্টর উইলিয়াম বার্নসকে পাকিস্তানে পাঠায় বাইডেন প্রশাসন। ইমরান খান এমন সাহসী যে, তিনি বার্নসকে সাক্ষাৎকার দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তান সরকার তাদের মাটিতে সিআইএর কোনো ঘাঁটির অনুমোদন দেবে না। এইচবিওর টেলিভিশনে জোনাথন সোয়ানের সাথে সাক্ষাৎকারে ইমরান খান এ কথা বলেন। তিনি আরো জানান, আফগানিস্তানে পাকিস্তান শান্তি চায় তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান সমস্যায় পাকিস্তান নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে। এটা পাকিস্তানের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। পাকিস্তানের জনগণ খানের এই মনোবলকে বিজয় হিসেবে ধরে নিয়েছে। বলা হচ্ছে, সব জয়ের জন্য যুদ্ধের দরকার পড়ে না।

সামরিক ও বিমানঘাঁটি করার এমন প্রস্তাব একেবারে নতুন নয়। ১৯৬০ সালে পেশোয়ার বাদাবের বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করেছিল গোপনে। একটি নজরদারি বিমান রাশিয়ানরা গুলি করে ভূপাতিত করার পর ঘাঁটির কার্যক্রম আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। এসব ঘাঁটি থেকে ন্যাটোবাহিনী পরিচালিত আক্রমণে ২৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার পর ২০১১ সালে পাকিস্তান শামসি বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বন্ধ করে এবং শামসি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈমানিক ও ক্রুদের বের করে দেয়। পাকিস্তান এয়ার ফোর্স বেজ নূর খান, শাহবাজ, এমন কি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর পাসনিও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর অপারেশনের জন্য দেয়া হয়েছিল। অথচ এসব ঘাঁটি দেয়ার পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে, সীমান্তে ও বেলুচিস্তানে সারা বছর ধরে সিআইএ ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে। বারবার অনুরোধ-হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেও কোনো লাভ হয়নি। আফগানিস্তানে সিআইএর ড্রোন ঘাঁটি থেকে এসব আক্রমণ পাকিস্তানে চালানো হতো। ২০০৮-২০১৩ সালে ৩৪০টি এবং ২০১৩-২০১৭ সালে ৬১টি ড্রোন আক্রমণ হয়। ২০১৮ সাল থেকে কোনো আক্রমণ হয়নি।

ঘাঁটি দেয়ার বিনিময়ে পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে মোটা দাগে সহায়তা হিসেবে ২৫.৯১ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল। তা ছাড়া প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে। কোনো কোনো বছর অনুদান ৬৯১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠে। মার্কিন সহায়তার তালিকায় ইসরাইলের পর পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফি বছর সহায়তা পায়। ইমরান সরকারের দুঃখ, ফি বছর এই অনুদানের টাকা ভালো কাজে লাগানোর আগেই দুর্নীতির হাত পৌঁছে যায় বলতে টাকাগুলো ধোঁয়ার মতো উড়ে গেছে।

ইমরান খান বলে আসছেন, আফগানিস্তান সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই, কাশ্মিরেও তাই। তথাপি ভারত কাশ্মিরিদের অধিকার না দিলে পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করবে। উপজাতীয় বেল্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাদ-উল ফাসাদ এবং জার-ই-আজাব নামে অভিযান চালিয়ে টেরোরিস্টদের নির্মূল করছে। এসব অভিযান দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। আরেকটি বড় কাজ পাকিস্তান সেনাবাহিনী করছে। সেটি হলো সীমান্তে বেড়া দেয়া। পাক-আফগান ২৬৪৯ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেয়া সোজা নয়। গভীর বন, অসমতল ভ্যালি ও প্রকাণ্ড পবর্তমালা বড় বাধা। তা সত্ত্বেও চার বছর কঠোর পরিশ্রম করে বেড়া নির্মাণ শেষ পর্যায়ে।

পাকিস্তান যদি কোনো ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেয় তবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয় দেশের বিরুদ্ধে তালেবানরা আবার অস্ত্র উঠাবে। পাকিস্তানি তালেবানরাও ব্যাপকভাবে অংশ নেবে, তখন ইমরান সরকারের পতন হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবান দমন করতে উভয় দেশে সেনাবহর পাঠাতে হবে। পুরো সমস্যাটি নতুন করে শুরু হবে। চীন সিইপিসির মাধ্যমে উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করেছে। পাকিস্তান ঘাঁটি দিলো বা না দিলো তা নিয়ে চীন এখনো কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। সিইপিসি ক্ষতিগ্রস্ত না হলে চীন সহজে নাক গলাবে না মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে থাকা না থাকা উভয়ই সঙ্কট।

বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই সব মার্কিন সেনা ফিরে যাবে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ সেনা কাবুল ছেড়েছে। সেনা প্রত্যাহার হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিশেষ করে পাকিস্তান বিপদাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আঞ্চলিক এই অবস্থানকে পাকিস্তান শান্তি ও স্থায়িত্বের জন্য ‘মারাত্মক স্তর’ মনে করছে। আফগানিস্তানের জন্যও এই স্তর আরো মারাত্মক হবে, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। পাকিস্তান এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে আফগানিস্তানে শান্তির জন্য নিজের দেশে অশান্তি ও বোমাবাজির খপ্পরে পড়ে চরমমূল্য দিয়েছে, যা এখনো চলমান। এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অর্থনৈতিক দুর্যোগ ঘাড়ে চেপে বসেছে।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের হিসাব মতে, ২০০২-২০১৬ সালে ১১৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু অর্থ দিয়েছে সর্বসাকুল্যে ১৪ বিলিয়ন যার কথা ট্রাম্প পই পই করে বলে পাকিস্তানের সব সাহায্য খাত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান তখন আফগানিস্তানে সেনাদের রসদ সরবরাহের খরচ দাবি করে এবং যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ভারতের সাথে কাবুলের কোনো যোগাযোগের সড়ক নেই। এই জন্য ট্রাম্প রাগ করে বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানে ভারতের কাজ কী?’ অপর দিকে ইকনোমিক করিডোর মহাপ্রকল্পে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-চীন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হতে শুরু করেছে।

আসলেই সব সেনা ন্যাটো প্রত্যাহার হবে কি-না সেটি অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। আফগান প্রেসিডেন্ট গনি বাইডেনের সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন! যারা বিদেশী সেনাদের সাথে এই দীর্ঘ সময় কাজ করেছে তারা এখন নিরাপত্তার অভাবজনিত ‘জ্বরে ভুগছে’। তালেবানরা যদি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলে তাহলে কি অবস্থার সৃষ্টি হবে তা শুধু কল্পনা করা যায়। যুক্তরাজ্য তিন হাজার আফগানকে সে দেশে নিয়ে যাবে। বাইডেন প্রশাসন আরো কিছু দেশ খুঁজছে যাতে আফগান সহযোগীদের সেখানে সরিয়ে নেয়া যায়। তালেবানরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে হুঁশিয়ার করেছে, যেকোনো সময় তারা রাজধানী কাবুল দখল করতে পারে। বাইডেন প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি কাবুল দখল করা হয় তবে ওয়াশিংটন সেটি মেনে নেবে না এবং পুরো সেনা প্রত্যাহার বিঘ্নিত হবে।

সেনা প্রত্যাহারে আফগানিস্তানে ক্ষমতার শূন্যতা আঞ্চলিক অশান্তির যেমন জন্ম দিতে পারে, তেমনি পাকিস্তানের জন্য অনেক সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে যেতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা পুরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির সোনালি প্রভাত-আলোতে ঝকমকে হতে পারে। বাইডেনের কাছে পুরনো পাকিস্তান আর নেই। অর্থের বিনিময়ে বিমানঘাঁটি দিলে সেটি আফগানিস্তান, ইরান ও লাদাখ সীমান্তে চীনের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে। ওই পরিস্থিতি ইমরান সরকারের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, ইমরান খান সেটি বুঝতে পেরেছেন। কাবুলের সাথে কাশ্মিরেও তিনি শান্তি চান। শান্তির জন্য সঠিক উদ্যোগ চাই। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতোই ইমরান খান মনে করেন, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের এখন শুভলগ্ন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিজে এগিয়ে যাবার লক্ষ্যে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭

সকল