২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনন্তের পথে আরব বিশ্বের বিদগ্ধ কুরআন গবেষক

অনন্তের পথে আরব বিশ্বের বিদগ্ধ কুরআন গবেষক - ফাইল ছবি

জগদ্বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ ‘সাফওয়াতুত তাফাসির’ লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, স্কলার এবং সিরিয়ার উলামা পরিষদের চেয়ারম্যান শাইখ মুহাম্মদ আলী আস-সাবুনি ৯১ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন গত ১৯ মার্চ। একজন প্রথিতযশা পণ্ডিত, বিশেষত পবিত্র কুরআনের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পৃথিবীব্যাপী তাকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আপসহীন এ আলেমে দ্বীন জীবনের শেষ দিনগুলো তুরস্কের উত্তর পশ্চিম ইয়ালোভা শহরে কাটিয়েছেন। বাদ জুমা ইস্তাম্বুল শহরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদে ফাতিহ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে এ জানাজায়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এক টুইট বার্তায় তার জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। তিনি সারা জীবন কুরআনের খিদমত করে গেছেন। কুরআন চর্চা, তাফসিরের পাঠদান, সাধারণ মানুষের মাঝে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ আঞ্জাম দেন আমৃত্যু।

‘সাফওয়াতুত তাফাসির’ ছাড়াও তিনি তাফসির ইবনে কাছির ও তাফসিরে তাবারি সম্পাদনা করে সংক্ষিপ্ত ভলিউমে বের করেন। মহানবী সা:-এর বহুবিবাহ নিয়ে প্রতিপক্ষ শক্তির নানা অভিযোগের দালিলিক জবাব দিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। দুই বছর পরিশ্রম করে, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি টেলিভিশনে সম্প্রচারের উপযোগী কুরআনের তাফসিরের ৬০০টি ভিডিও তৈরি করেন, যা আরব বিশে^ বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

তার মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। মিসরের আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শাইখ আহমদ আল তাইয়েব এক বিবৃতিতে শাইখ আস সাবুনির ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এ গবেষক পবিত্র কুরআন, সুন্নাহর গবেষণা ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের জন্য বিশাল খিদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।’ বায়তুল মুকাদ্দাস স্টাডিজের অধ্যাপক, আল আকসা মসজিদের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ এক শোকবার্তায় বলেন, ‘আমরা আল্লাহ তায়ালার হুকুমে এসেছি এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব। আল্লাহ তার ওপর রহমত নাজিল করুন এবং তার নেক আমলগুলো কবুল করুন।’ মিনহাজুল কুরআন ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ তাহির আল কাদেরি বলেন, ‘আস সাবুনির মৃত্যুতে বিশ্ব নির্ভরযোগ্য এক স্কলার ব্যক্তিত্বকে হারাল। তিনি মুসলিম বিশ্বের জন্য সাধারণত এবং সুন্নি চিন্তাধারার মানুষের জন্য বিশেষত, এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ফিকহ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে গেছেন।’

১৯৩০ সালে সিরিয়ার হালবে (Aleppo) জন্মগ্রহণকারী এ প্রখ্যাত মনীষীর শিক্ষার হাতেখড়ি তার বাবা সিরিয়ার বিখ্যাত আলেম শায়খ জামিল আস সাবুনির কাছে। ইতোমধ্যে তিনি পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। ১৯৪৯ সালে হালবের খসরুইয়া শরিয়াহ মাদরাসা থেকে ইসলামিক স্টাডিজ, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর সিরিয়ার ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের বৃত্তি নিয়ে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে শরিয়াহ বিচার ব্যবস্থার ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়ালেখা শেষে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত হালবের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী সংস্কৃতি বিষয়ে পাঠদান করেন। পরবর্তীতে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী গবেষণাকেন্দ্র ও ইসলামী ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন বিষয়ে এবং জেদ্দা কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা অনুষদে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ দুই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রায় ২৮ বছর শিক্ষকতা করেন। তার অসংখ্য ছাত্র গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মক্কার মসজিদে হারামে প্রতিদিন এবং মদিনার মসজিদে সপ্তাহে একদিন দরসে কুরআন প্রদান করতেন। মসজিদুল হারামে তিনি বেশ কিছু দিন ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর কেন্দ্রীয় দফতরে কুরআনিক সায়েন্স বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

আরবি ভাষায় লিখিত ছোট-বড় তার গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। তার রচিত অনেক গ্রন্থ আরব বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্য। এর মধ্যে তিন খণ্ডে সমাপ্ত ‘সাফওয়াতুত তাফাসির’-এর খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। শায়খ আস সাবুনি বিরচিত কিছু গ্রন্থ বাংলা, ইংরেজি, ফ্রান্স ও তুর্কি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার রচনাসমগ্র বাংলা ভাষায় অনূদিত হলে ৩৫ কোটি পাঠক উপকৃত হতে পারত। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. ‘সাফওয়াতুত তাফাসির’; ২. আত-তিবয়ান ফি উলুমিল কুরআন; ৩. রাওয়ায়েউল বায়ান ফি তাফসিরি আয়াতিল আহকাম; ৪. মিন কানুযিস সুন্নাহ; ৫. কাবাস মিন নুরিল কুরআন; ৬. মুসুআ আল ফিকহিস শরঈ; ৭. আত-তাফসির আর-ওয়াদিহ; ৮. আল হাদি আন নববী আস সহিহ ফি সালাতিত তারাবিহ; ৯. ইজাজ আল বায়ান; ১০. মাওকিফ আশ মরিয়াহ আল গাররাহ মিন নিকাহিল মুতাআ; ১১. আল আরদ ওয়া দাওর; ১২. আল মাহদি ওয়া আশরাতুস সাআ; ১৩. শারহু রিয়াদিস সালেহিন; ১৪. জারিমাতুর রিবা; ১৫. শুবহাত ওয়া আবাতিল; ১৬. রিসালাহ ফি হুকমিত তাসভির; ১৭. মাআনিল কুরআন লিন নুহাস; ১৮. মুখতাছার তাফসির ইবন কাছির’ ১৯. মুখতাছার তাফসির আত-তাবারি; ২০. তানভিরুল আযহান মিন তাফসিরি রুহিল বয়ান; ২১. আল মুনতাকা আল মুখতার মিন কিতাবিল আযকার লিন নববী ও ২২. ফাতহুর রহমান লিল আনসারি।

শায়খ জালালুদ্দিন সিয়ুতি রচিত ‘তাফসিরে জালালাইন’-এর চেয়ে ‘সাফওয়াতুত তাফাসির’ নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বিজ্ঞ লেখক বলেন- ‘রুহুল মাআনি, আল বাহারুল মুহিত, ইবনে কাছির, আল-কাশশাফ ও আত-তাবারির মতো সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্য তাফসির গ্রন্থাবলির ওপর ভিত্তি করে বর্ণনাগত প্রতিবেদন ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি হয় এ ব্যাপক গ্রন্থ। সাবলীল বর্ণনাশৈলী ও বোধগম্য ভাষায় রচিত এ তাফসিরে সাহিত্য ও শব্দগত উৎকর্ষের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। এর নাম দিয়েছি ‘সাফওয়াতুত তাফাসির’ (শ্রেষ্ঠ তাফসির) অর্থাৎ বৃহৎ তাফসির গ্রন্থাবলির দীর্ঘ বর্ণনার সংক্ষেপিত, স্পষ্ট ও সুসমন্বিত বিশ্লেষণ।’

শায়খ মুহাম্মদ আলী আস সাবুনি সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের স্বৈরশাসন, দুর্বৃত্তপনা, ইসলামের বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ড, আলেমদের দমন-পীড়ন, খুন-গুমের জন্য তাকে মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার মুসাইলিমা আল কাজ্জাব নামে প্রকাশ্যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, মুসাইলিমা নামে ইয়ামামার এক ব্যক্তি মহানবী সা:-এর জামানায় নবুওয়াতের দাবি করেছিল। মহানবী সা: তাকে কাজ্জাব বা মিথ্যাবাদী অভিধায় অভিহিত করেছেন। হজরত আবুবকর রা:-এর খিলাফতকালে হিজরি একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদের হাতে ইয়ামামার যুদ্ধে মুসাইলিমা প্রাণ হারায়। শাইখ আস সাবুনি বলেন, ‘যারা বাশারকে সহযোগিতা করবে, তাদের করুণ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বাশার আল আসাদের পতনের জন্য গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরশাসকদের আশপাশে কিছু আলেম নামের দরবারি লোক থাকে। তারা সরকারের সব নির্দেশকে সমর্থন করে ফতোয়া জারি করে থাকে। আস সাবুনি দরবারের মুফতি আহমদ হাসুনের ফতোয়ার প্রচণ্ড সমালোচক ছিলেন এবং তাকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

২০১২ সালে আস সাবুনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, আরব বিশ্ব যদি তুরস্কের রজব তাইয়্যেব এরদোগানের হাতকে শক্তিশালী করে, তাহলে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তুর্কি বা অটোমান জাতি একজন ঈমানদারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আরব জাতি যদি এরদোগানের মতো নেতা পেতাম তাহলে মুসলমানরা বিজয় উল্লাস করতে পারত। একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সিরিয়ার ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের রক্ত বৃথা যাবে না।

শাইখ মুহাম্মদ আলী আস সাবুনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ছিলেন। ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি ইমাম আবু হানিফা রহ:কে মেনে চলতেন। আকিদার ক্ষেত্রে তিনি আশআরি ও মাতুরিদির মতাবলম্বী ছিলেন। তিনি সবসময় ধর্মীয় ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে চরমপন্থা এড়িয়ে চলতেন এবং কট্টর শিয়া মতবাদ ও উগ্রবাদী সালাফি উভয়ের তীব্র সমালোচনা করতেন। শিয়াদের চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (নিকাহে মুতাআ) নিয়ে গবেষণানির্ভর গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। আশআরি ও মাতুরিদির চিন্তা-চেতনা লালন করার কারণে কট্টরপন্থী কিছু আলেম তাকে ‘জাহমিয়া’ সম্প্রদায়ভুক্ত বলে দাবি করতেন। আশআরি ও মাতুরিদি আকিদার কারণে তাকে পথভ্রষ্ট আখ্যায়িত করা হয়। উল্লেখ্য, আশআরি ও মাতুরিদিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত। বরং বেশির ভাগ মুসলমানই এই দুই মহান ইমামের মতের অনুসারী। যুগ যুগ ধরে বেশির ভাগ মুসলমান এই দুই ইমামের পন্থায় ইসলামী আকিদা ধারণ করে এসেছে। আশআরি চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠাতার নাম, ইমাম আবুল হাসান আশআরি (মৃত্যু : ৩২৪ হিজরি)। মাতুরিদি চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠাতার নাম ইমাম আবুল মানসুর মাতুরিদি (মৃত্যু : ৩৩৩ হিজরি)। (আল ইবানাহ, পৃষ্ঠা-২০, আল আকিদাতুল ইসলামিয়া ওয়াল ফিরাক আল বাতিলা, পৃষ্ঠা-২৯)। আশআরি ও মাতুরিদি চিন্তাধারাদ্বয়ের মধ্যে মূলত আক্ষরিক বা শাখা-প্রশাখাগত কিছু মতভেদ রয়েছে। বড় বা মৌলিক কোনো মতভেদ নেই। সেভাবে চার মাজহাবের মধ্যে শাখা-প্রশাখাগত মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইফাবা, ইলমুল কালাম-৫৭)। যারাই হানাফি, তারাই মাতুরিদি ও আশআরি। একসময় মুতাজিলা, জাহমিয়া ও মুজাসসিমা ফিরকার লোকেরা আকিদা বিষয়ে প্রচণ্ড ভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে। তখন আবুল হাসান আশআরি রহ: এবং আবু মানসুর মাতুরিদি রহ: মুতাজিলি ফিরকার দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে বিশুদ্ধ আকিদা ব্যাখ্যা করেন ও প্রচার করেন। আশআরি ও মাতুরিদি কোনো নতুন আকিদা নয়। নয় হানাফি আকিদার বাইরের কোনো আকিদা। আকিদা একই। শুধু অন্য ফিরকা তথা মুতাজিলাদের থেকে নিজেকে আলাদা করতেই তারা নিজেদের মাতুরিদি ও আশআরি বলে থাকেন (লুৎফুর রহমান ফরায়েজি, https://muhammadsaifurbd. wordpress.com/2018/01/29 মাজহাবে-হানাফি)।

মাতুরিদি ও আশআরি হলো সুন্নি ইসলামের অন্তর্গত অন্যতম প্রধান ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তাধারা। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের মধ্যে বিদ্যমান আকিদাগুলোকে একটি সুসংবদ্ধ কালামশাস্ত্রীয় চিন্তাধারায় উপনীত এবং যৌক্তিকতা ও যুক্তিবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। মাতুরিদি মতবাদকে আশআরি মতবাদের পাশাপাশি সর্বজনগৃহীত সুন্নি আকিদা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মাতুরিদি ও আশআরি চিন্তাধারা ইরানে সুন্নি মুসলমান, হানাফি ও আহল আর-রায়ের মাঝে বরাবরই প্রভাবশালী ছিল এবং তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য ও ভারতের মোগল সাম্র্রাজ্যে অগ্রগণ্য মাজহাবের মর্যাদা লাভ করেছিল। এর বাইরে বেশির ভাগ তুর্কি, মধ্য এশীয় ও দক্ষিণ এশীয় সুন্নি মুসলমান মাতুরিদি ও আশআরি আকিদায় বিশ্বাসী। আরব মুসলিমদের মধ্যেও মাতুরিদি ও আশআরি প্রভাব বিদ্যমান। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, তুর্কিস্তান, আমু দরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাসমূহ, যেমন- উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, বুখারা, সমরকন্দ, তাসখন্দ, তিরমিজ ইত্যাদি অঞ্চলের বেশির ভাগ মুসলমান মাতুরিদি ও আশআরি মতাবলম্বী। পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক সুফি, দরবেশ, ধর্মবেত্তা, মুহাদ্দিস মাতুরিদি ও আশআরি চিন্তাধারা ও আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মোল্লা আলী আল-কারি, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, শায়খ বাহাউদ্দিন নকশবন্দী, শায়খ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী, ফখরুদ্দীন আল রাজি, ইমাম গাজ্জালী, জালালুদ্দীন সিয়ুতি, ইমাম আল-বায়হাকি, মুহিউদ্দিন আন-নববী, ইবনে হাজার আসকালানী, শিহাবুদ্দীন আল কাস্তাল্লানী, ইবন জওজি, নিজামুল মুলক তুসি, ইবনে খালদুন, শাহ জালাল সিলেটি, আদ-দারুল কুতনি, খতিব বাগদাদি, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি, শায়খ আহমেদ সিরহিন্দি মুজাদ্দিদে আলফে সানি, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী, শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী, শাহ ইসমাইল শহীদ, শাহ আবদুল হক দেহলভী, শহীদে বালাকোট সৈয়দ আহমদ বেরলভী, কাজী আয়াজ, শায়খ তাজ উদ্দিন আস সুবকি, শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী, আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি, মুফতি আহমদ রেজা খান বেরলভী, সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানি, মুফতি মুহাম্মদ শফি দেওবন্দি, শাহ কারামত আলী জৌনপুরী, আবু বকর সিদ্দিকি ফুরফুরা, মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী, আবদুল লতিফ ফুলতলী ও শাহ আহমদ শফি (https://bn.wikipedia.org/wiki/ মাতুরিদি/আশআরি)।

অষ্টাদশ শতকের মুসলিম পণ্ডিত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন, প্রতি শতাব্দীর শেষে একজন মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হয়। প্রথম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন ইমামু আহলিস সুন্নাহ উমর ইবনে আবদুল আজিজ। দ্বিতীয় শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন ইমামু আহলিস সুন্নাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ-শাফিঈ। তৃতীয় শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন ইমামু আহলিস সুন্নাহ, আবুল হাসান আল-আশআরি। চতুর্থ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন ইমামু আহলিস সুন্নাহ, আবু আবদুল্লাহ হাকিম নিশাপুরী (ইযালাতুল খাফা, পার্ট-৭, পৃষ্ঠা-৭৭)।

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম কুরআন গবেষক, ইসলামিক স্কলার ও সত্যের ঝাণ্ডাবাহী শাইখ মুহাম্মদ আলী আস সাবুনি তার জ্ঞান গবেষণা লেখনীর মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন, তার দারাজাত বুলন্দ করে দিন, তার খিদমতগুলো কবুল করুন, আমীন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল