২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিভক্ত ও দুর্বল সাংবাদিক সমাজ

বিভক্ত ও দুর্বল সাংবাদিক সমাজ - ছবি : সংগৃহীত

‘বাংলাদেশে কর্মরত সাংবাদিকদের ৭১ শতাংশের বেশি পেশা ছেড়ে দিতে চান। নানা প্রতিকূলতা ও টানাপড়েনের মাঝে বিষণ্নতায় ভুগছেন ৪২ শতাংশের বেশি সাংবাদিক।’ টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজপোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে করা জরিপের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত গবেষণা থেকে এ খবর জানা যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ এ গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষণায় আরো জানা যায়, সাংবাদিকরা কম বেতন পান, সময়মতো প্রমোশন পান না, অনেক বেশি কাজের চাপ রয়েছে তাদের। মেধাবীরা কিছু দিন করার পর এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ৭৯ শতাংশের বেশি সাংবাদিক তাদের পেশায় সন্তুষ্ট নন। গবেষণা প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রকাশনা সংস্থায় গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক টেলিভিশন চ্যানেল, বিপুলসংখ্যক স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা এবং অসংখ্য অনলাইন নিউজপোর্টালসহ সংবাদমাধ্যমের ছড়াছড়ি। এ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের মর্যাদা ও আর্থিক সচ্ছলতার কথা উঠলে এর বিপুল সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হয়। সংখ্যা দিয়ে সাংবাদিকতার মান ও সাংবাদিকদের অবস্থা প্রকাশের এ চেষ্টা যে মোটেও সঠিক নয় তা ইউল্যাবের গবেষণা প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। এ গবেষণা প্রতিবেদনে একটি গড়পড়তা সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার আরো অনেক অন্ধকার, করুণ ও দুর্বল দিক রয়েছে।

ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগের সাংবাদিক হারুন উর রশীদের উপস্থাপনায় এক টকশোতে ময়মনসিংহের একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক খাইরুল আলম রফিক তার ওপর নেমে আসা ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দেন। খাইরুল এই বর্ণনা দিতে গিয়ে আত্মসংবরণ করতে পারেননি। টকশোর মধ্যে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চারজন বেঁধে নির্যাতন চালায় তার ওপর। উলঙ্গ করে গোপনাঙ্গে কিভাবে বিদ্যুতের শক দেয়া হয়, তার বর্ণনা দেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। তার উচ্চ চিৎকারের রেশ সরকারি অফিসের চারদেয়াল ভেদ করে বাইরেও চলে যায়। ডিবি কার্যালয়ের বাইরে উপস্থিত তার স্ত্রী ডিবি কর্মকর্তাদের পায়ে পড়ে তাদের কাছে স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চান। তিনি তাদের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, তার স্বামীকে নিয়ে ময়মনসিংহ ছেড়ে যাবেন; আর কোনো দিন ফিরবেন না। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

খাইরুলকে কয়েক রাত খাবার দেয়া হয়নি। পানি চাইলে পানি দেয়া হয়নি। নির্যাতনের মধ্যে নৌকায় করে অন্য জায়গায় নেয়া হচ্ছিল। তিনি নদীর পানি পান করতে চেয়েছিলেন। তাও তাকে পান করতে দেয়া হয়নি। টকশো চলার সময় তার উচ্চস্বরে করুণ কান্না পরিবেশ ভারী করে তোলে। সাংবাদিক হারুনসহ টকশোতে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের চোখ ছলছল করছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি অন্যদের চোখ ঠিকরে পানি বেরিয়ে আসবে। অন্য দিকে খাইরুলের আর্তনাদের মধ্যে তার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছিল। সম্পাদক খাইরুলের বিরুদ্ধে ডিবি কর্মকর্তার একটাই কথা, ‘তুই অপরাধ’ স্বীকার করে নে। যত সব মাদক ব্যবসা, নারী ব্যবসাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড ময়মনসিংহে হয়, এর সব তুই করিস। ডিবি কর্মকর্তার মতে, ময়মনসিংহে কি আর কোনো সাংবাদিক নেই? তুই একাই সাংবাদিক! খাইরুলের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি তার পত্রিকায় মাদক ও অন্যান্য অপরাধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এ কারণেই তার জীবনে এ অমানিশা নেমে আসে।

ওই টকশোতে উপস্থিত ছিলেন আরেক নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। তিনি কক্সবাজারের স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা ও একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক। তার ওপর নির্যাতনের ধারাবাহিক চিত্রটি ছিল আরো অনেক বেশি ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী। মোস্তফার ওপর নির্যাতন নেমে আসার কারণ একই। তিনি টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপের মাদক ব্যবসা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। এরপর যেভাবে তার ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছেন প্রদীপ তাতে মনে হতে পারে দেশে কোনো ধরনের আইনকানুন নেই। থাকলেও সেটি পুরোপুরি প্রদীপদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মোস্তফাকে উল্টো মাদকের মামলায় অভিযুক্ত করে দেয়া হয়।

তার আগে তাকে আটক করে উপর্যুপরি নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। থানায় তাকে যখন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল তিনি পানি চেয়েছেন। পানির বদলে তার জন্য জুটেছিল টয়লেটের মলমূত্র। চোখে মরিচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেয়া হয়, খুঁচিয়ে তার চোখ নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন প্রদীপরা। স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দ্বারে দ্বারে তিনি তখন ঘুরেছিলেন একজন নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য। প্রদীপ এতটাই শক্তিশালী ছিলেন, কেউ মোস্তফাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারেনি। শেষে তিনি জীবন বাঁচাতে পরিবারসহ ঢাকায় পালিয়ে আসেন। ঢাকায় এসেও তিনি রক্ষা পাননি। মোবাইল ট্র্যাক করে তাকে প্রদীপের কাছে পৌঁছে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে তাকে যত দিন পারা যায় পৈশাচিক কায়দায় থানায় রেখে নির্যাতন চালানো হলো। সেখান থেকে মামলার রায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে কারাগারে অন্তরীণ করা হয়। নির্যাতনে বিধ্বস্ত অসুস্থ শরীর নিয়ে কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি জীবন চলছিল তার।

একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের হত্যার পর মোস্তফার আহাজারি জাতির কানে পৌঁছেছে। সামরিক বাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত মেজরের বলিদানে তার আর্তনাদ জাতির সামনে প্রকাশ পেতে পেরেছে। তার ওপর যখন প্রদীপ অন্যায়ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছিলেন, তখন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত গিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন। তার পরও প্রদীপের হাত থেকে রেহাই পাননি।

সাংবাদিকরা যখন এভাবে অসহায় হয়ে যান তখন সহযোগী সাংবাদিকদের দায়িত্ব কী? ঠিক উপরের দু’টি সাংবাদিক নির্যাতনের কথাই আমরা ধরি। তারা স্থানীয়ভাবে পরিচিত এবং কিছুটা প্রভাবশালীও। মোস্তফাকে যখন নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছিল তখন স্থানীয় সাংবাদিকরা একযোগে এ খবরটি কি প্রকাশ করতে পারছিলেন না? না তারাও প্রদীপদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি? তিনি যেভাবে নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় ঘুরেছেন, সেটি জাতীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কেউ না জেনে থাকার কথা নয়। একজন সাংবাদিক নেতাও কি ছিলেন না, যিনি জাতীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় একটি থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আওয়াজ তুলতে পারতেন? ময়মনসিংহের ওই স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অপরাধগুলোর প্রতিবাদে সাংবাদিক সংগঠনগুলো কি কোনো কর্মসূচি দিতে পারে না? এসব সাংবাদিকের জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের কি কোনো দায় নেই?

সাম্প্রতিক সময় আরো অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কাউকে নিখোঁজ হওয়ার পর পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। তিনি ঘোরের মধ্যে বলে যাচ্ছিলেন ‘আর লিখব না’। সাধারণ মানুষ তাকে উদ্ধার করেছেন। অন্য একটি ঘটনায় সম্প্রতি দেখা গেল, ক্ষমতাসীনরা এক সাংবাদিককে সাপের মতো পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। সারা দেশে এমন সাংবাদিক নির্যাতন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মোটকথা হচ্ছে, সাংবাদিকরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।

সংবাদমাধ্যমগুলো নির্ভয়ে খবর প্রচার করতে পারছে কি না এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেই বিভক্ত মতামত পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের বড় একটা অংশ দাবি করে, দেশের সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং তাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। এ ব্যাপারটি শেষ পর্যন্ত খোলাসা হয়ে গেল বাংলাদেশকে নিয়ে আলজাজিরার একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশের পর। সরকারের পক্ষ থেকে ওই সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করা হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিলো। তখন দেখা গেল, সংবাদমাধ্যমগুলো মূল ঘটনাটি প্রকাশ করেনি। মূল ঘটনাটি না জানিয়ে তার ব্যাপারে প্রতিবাদ কিভাবে প্রকাশ করা যায়? এটি তো সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য একটি লজ্জার ব্যাপার। এ ব্যাপারে দেয়া সরকারের ব্যাখ্যা বিবৃতি সংবাদমাধ্যমকে প্রকাশ করতে হয়েছে।

ডকুমেন্টারিটি প্রকাশের দুই দিন পর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এ ব্যাপারে সম্পাদকীয় লিখে পাঠকদের কাছে নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার একদিন পর প্রথম আলো ‘আলজাজিরার প্রতিবেদন এড়িয়ে গেলে জনগণ ভুল বার্তা পাবে’ বলে সম্পাদকীয় লিখে। পত্রিকাটি এরপর আলজাজিরার সূত্র ধরে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দিয়েছে। এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘অসত্য তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট।’ আলজাজিরায় প্রদর্শিত কিছু তথ্যপ্রমাণের ব্যাপারে এই সংবাদ সূত্রে তাদের পাঠকরা জানতে পেরেছে।

এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় অভিযোগগুলো খণ্ডন করা। অথবা কেউ অপরাধী হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এর মাধ্যমে সরকার নিজের অবস্থান সমুন্নত করতে পারে। সাংবাদিকরা কিংবা সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ কাজে সরকারকে উৎসাহিত করতে পারে। ডেইলি স্টার তার সম্পাদকীয়তে বলেছে, তারা আলজাজিরার মতো সাংবাদিকতা করতে চায়। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের হুমকির শঙ্কা না থাকে তা হলে তারা বড় বড় অন্যায় নিয়ে এমন রিপোর্ট করতে চায়, যাতে দেশের উপকার হয়। নিজেদের দেশের মধ্যে কোনো অপরাধ সঙ্ঘটিত হলে নিজেরা সেটি অনুসন্ধান করে উদঘাটন করবেন। তা হলে বাইরের সংবাদমাধ্যমে সেটি প্রকাশ করার দরকার হবে না, কিংবা ওই সব ঘটনার কোনো সংবাদমূল্য তখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে থাকবে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাকের কারা হেফাজতে মৃত্যুর পর নাগরিক সমাজের পাশাপাশি সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ আইনের কিছু ধারার সংশোধন চাচ্ছে। অন্য দিকে কেবল মারা যাওয়ার পরই মুশতাকের পরিচয়টা বড় হয়ে উঠল। তাকে একজন লেখক হিসেবে সম্বোধন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিবৃতি এসেছে। আমাদের সমাজব্যবস্থা যেভাবে মানুষকে মূল্যায়ন করছে তার যৌক্তিকতা পাওয়া যায় না। মারা গেলে কোনো মানুষ মহিমান্বিত হয়ে যান না। লেখক মুশতাক একজন আদর্শবান ব্যক্তি। সেটি তিনি মারা যাওয়ার আগেও ছিলেন। তিনি একজন লেখক- সেটিও তার গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কিন্তু এগুলোর প্রকৃত মূল্যায়ন যদি মৃত্যুর আগে সঠিকভাবে হতো, তা হলে তাকে কোনো বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হতো না। একইভাবে একজন জঘন্য অপরাধীর মতো তাকে ছয়বার জামিন আবেদনের পর নিরাশ হতে হতো না।

কেবল রাশেদ সিনহা হত্যার পর আমরা ওসি প্রদীপকে দোষী হিসেবে মেনে নিলাম। তিনি যখন প্রথম অপরাধটি করেছিলেন তখনই যদি আমরা তাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতাম, তা হলে সিনহাকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। কিংবা সাংবাদিক মোস্তফার জীবনে এ নির্মমতা নেমে আসত না। বেঁচে যেতে পারতেন কক্সবাজার অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আমাদের এখনো বোধোদয় হতে পারে। এখনো অনেক জীবিত মানুষ রয়েছেন যারা ভয়াবহ নির্মমতার শিকার হচ্ছেন। তাদের আমরা বাঁচাতে পারি। জীবিত মানুষকে আমরা যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করি তা হলে কারো নির্যাতনে মৃত্যু নিয়ে আফসোস করতে হবে না। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা রুহুল আমিন গাজী, দৈনিক সংগ্রামের বার্তা সম্পাদক সাহাদাত হোসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে রয়েছেন। তারা রাষ্ট্র্রের জন্য ক্ষতিকর, এমন আলামত বা প্রমাণ নেই। এই জীবিত সাংবাদিকরা জামিনে মুক্তি পেতে সাংবাদিক নেতা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর আগে আমরা দেখেছি, প্রবীণ সাংবাদিক গবেষক ও লেখক আবুল আসাদ এক বছর কারাগারে ছিলেন। জীবিত এ মানুষটির জন্যও সাংবাদিক সমাজের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবাদ আমরা দেখিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ ছাড়া আরো সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন তাদের মুক্তির জন্য জোরালো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেখা যায় না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা সংশোধন হয়ে গেলে সাংবাদিকদের জন্য এ দেশে কাজ করা সহজ হয়ে যাবে, এমনটি চিন্তা করা সঠিক হবে না। ময়মনসিংহের সাংবাদিক খাইরুল কিংবা কক্সবাজারের মোস্তফার ওপর নির্মম নির্যাতনের সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো সম্পর্ক কেউ খুঁজে পাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার সাথে এ আইনের সম্পর্ক খুব বেশি নেই। আমরা দেখেছি, সাংবাদিকদের মুরুব্বি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন করছে ও বিবৃতি দিচ্ছে এ আইনের সংশোধন চেয়ে। আমরা আশা করব, সাংবাদিকদের অভিভাবক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক নির্যাতন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধে ধারাবাহিক প্রতিবাদের সমন্বিত উদ্যোগ নেবেন, যাতে ইউল্যাবের গবেষণায় প্রকাশিত সাংবাদিকদের দুরবস্থা লাঘব হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যায়।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement