২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কবে পাবো ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘ’

কবে পাবো ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘ’ - ছবি সংগৃহীত

চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের দফতর ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ’ দুই দিনের একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিল। বিষয় ছিল : ‘জনগণের প্রয়োজনের সময়ে জাতিসঙ্ঘ : বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্ভাবনা’। এতে বেশ কয়েকজন দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, কোভিড-১৯-এর বিস্তার জাতিসঙ্ঘের কর্মপ্রক্রিয়ার দুর্বলতা উন্মোচিত করেছে। কিন্তু একই সাথে এই মহামারী বৈষম্য দূর করে একটি টেকসই পৃথিবী গড়ার অনেকগুলো সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাকে ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘে’ পরিণত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুই দিনের ছয়টি আলাদা কর্ম অধিবেশনের আলোচনায় বলা হয়, সঙ্ঘাত, গণহত্যা বন্ধ এবং বঞ্চিত বিশ্ববাসীর মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের কিছু করার আছে। যদিও সশস্ত্র সঙ্ঘাত, গণহত্যা ও ভূরাজনৈতিক দ্বৈরথ বন্ধ আর দেশের ভেতরে এবং এক দেশের সাথে আরেক দেশের বৈষম্য বিলোপের মতো বিষয়গুলো সুরাহায় জাতিসঙ্ঘ ক্রমে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আরো বলা হয়, জাতিসঙ্ঘকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া থেকে উদ্ধারের স্বার্থে সরকার আর নাগরিক সমাজের সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। বক্তারা আরো বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে জাতিসঙ্ঘের প্রতি আমাদের আস্থা ক্রমেই কমছে।

আলোচনায় অন্যসব বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আছে : জাতিসঙ্ঘকে কয়েকটি দেশের বৃত্ত থেকে বের করে আনার তাগিদ; সশস্ত্র সঙ্ঘাত, গণহত্যা, ভূরাজনৈতিক দ্বৈরথ বন্ধ : দেশের ভেতরে ও এক দেশের সাথে আরেক দেশের বৈষম্য বিলোপের মতো বিষয়গুলোর সুরাহায় জাতিসঙ্ঘের ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়া এবং সর্বোপরি জাতিসঙ্ঘকে ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘে’ পরিণত করার বিষয়টি। এসব বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের ব্যর্থতা সীমাহীন- এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।

জাতিসঙ্ঘের ব্যর্থতা সম্যক উপলব্ধি করার প্রয়োজনে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে, এই সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে এর ব্যর্থতার মাত্রা কতটুকু। জাতিসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৫ সালে। বর্তমানে এর সদস্য দেশের সংখ্যা ১৯৩। এর লক্ষ্য, কর্মপন্থা ও নীতি-আদর্শ বিধৃত রয়েছে এর ‘ফাউন্ডিং চার্টার’ তথা ‘প্রতিষ্ঠাকালীন সনদে’। এর বিভিন্ন বিশেষায়িত অঙ্গসংস্থার মাধ্যমে এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার কথা।
জাতিসঙ্ঘের সনদের প্রথম অনুচ্ছেদ মতে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা; বিভিন্ন জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার প্রভৃতি সমস্যার সমাধান করা; এসব অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। তা ছাড়া জাতিসঙ্ঘ সনদ মোতাবেক গোটা বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন সাধনসহ আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখাও জাতিসঙ্ঘের অন্যতম লক্ষ্য। এসব লক্ষ্য অর্জনে একটি যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা ছিল জাতিসঙ্ঘের অন্যতম অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ এই অবশ্য কর্তব্য পালনে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। অনেক গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য মানুষ অবাধ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। দেশ দখল করে রাখা চলেছে ও চলছে দশকের পর দশক ধরে। মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।

এই উপর্যুপরি ব্যর্থতার অন্যতম কারণ পাঁচটি বিশেষ দেশের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা, যে কারণে জাতিসঙ্ঘকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার দায়ভার বহন করে চলতে হচ্ছে। ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘ’ হওয়া দুরাশায় পরিণত হয়েছে। এ দাবিটি স্পষ্ট করার জন্য বড় দাগের কয়েকটি ব্যর্থতার কথা জানা যাক।

১৯৪৮ সালে ইহুদি ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিন কার্যত চলে যায় ইসরাইলের দখলে। সেই দখলদারিত্ব আজো চলছে। ফিলিস্তিনিরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন গড়তে। জাতিসঙ্ঘের এক তদন্তে বলা হয়েছিল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন চলছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইল অবৈধ দখল কায়েম রেখে তাদের ওপর হত্যা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে দিয়েছে। বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইলিরা আজ পর্যন্ত সেখানে ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ১৯৪৭-৪৯ সময়ে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ কিংবা মানুষ রয়েছে ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষে। জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিন প্রশ্নে যখনই কোনো প্রস্তাবের ওপর ভোট পড়েছে, তাতে বিশ্বের দেশগুলোর বিপুল ভোট পড়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। তখনই যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে এসব প্রস্তাব অকার্যকর করে দিয়েছে। যে কারণে জাতিসঙ্ঘ এর সাড়ে সাত দশকেও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।

কাশ্মিরের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রশ্নে ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের কোনো সমাধান আজ পর্যন্ত করতে পারেনি জাতিসঙ্ঘ। এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে স্বাধীন কাশ্মির প্রতিষ্ঠা। সময়ের সাথে ভারত কাশ্মিরকে ভারতের অঙ্গীভূত করার নানা অপ-পদক্ষেপ নিয়ে কাশ্মির ও কাশ্মিরিদের অস্তিত্ব বিলোপের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। যদিও এই বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারের জাতিসঙ্ঘের বেশ কিছু সুস্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু ভারত তা একেবারই আমলে নিচ্ছে না। গত বছর ভারত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভারতভুক্ত করে কেন্দ্রের শাসনাধীন করেছে। এর পর থেকে কাশ্মিরিরা সেখানে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধরনের মানবিক সঙ্কটে পড়েছে। সেখানে কাশ্মিরিদের ওপর চলছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নির্র্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, ধর্ষণ আর লুটপাট। জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবে কথা ছিল, কাশ্মির আলাদা স্বাধীন হবে, না ভারত কিংবা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হবে, সেটা গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে কাশ্মিরের জনগণ। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ সেই প্রতিশ্রুত গণভোটের ব্যবস্থাটি আজ পর্যন্ত করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে শুরু হয় কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধ। সমাজবাদী খেমার রুজ সরকার কম্বোডিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর ১৯৭৫-৭৯ সময়ে সেখানে চালায় গণহত্যা। এ সময় দেশটিতে নিহত হয় ২০ লাখ লোক, যা মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। ভিয়েতনামের হস্তক্ষেপের ফলে খেমাররুজ সরকারের গণহত্যা বন্ধ হয়। অথচ জাতিসঙ্ঘ ওই সময়ে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করে স্বীকৃতি জানিয়েছিল খেমাররুজ সরকারের প্রতি।

সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৯১ সালে। এখনো এর অবসান ঘটেনি। কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত বিবদমান উভয় পক্ষ। সেখানে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশন UNOSOM গঠন করা হয় ১৯৯২ সালে। লক্ষ্য ছিল দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো। কিন্তু তা বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘ ব্যর্থ। সেখানে আজ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ জাতিগত গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে রুয়ান্ডায়; ১৯৯০-১৯৯৪ সালের গৃহযুদ্ধের সময়ে। এই গৃহযুদ্ধ চলে রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের মধ্যে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন হুতো-প্রধান সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ১০ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করে। মাত্র তিন মাস সময়ে হুতুরা নির্মমভাবে হত্যা করে প্রায় আট লাখ তুতসিকে। ধর্ষণ করে আড়াই লাখ নারীকে। তখন জাতিসঙ্ঘ সেনাবাহিনী সেখানে ঘটনার শিকার লোকদের পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে, নয়তো এই নির্মম সন্ত্রাসী কর্মকা- নীরবে দাঁড়িয়ে অবলোকন করেছে।

১৯৯২ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা গণভাটের পর এর স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই স্বাধীনতা ঘোষণার পর বসনীয় সার্বরা সার্বিয়ার সরকারের সহায়তায় সৈন্য পাঠায় ওই দেশটিতে। শুরু হয় যুদ্ধ। এ সময় বসনিয়ার সার্ব সৈন্যরা প্রায় আট হাজার মুসলমান পুরুষ ও বালককে হত্যা করে। এই হত্যাকা-ের হুকুমদাতা সাবেক জেনারেল বাটকো ম্ল্যাডিস। ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে এই হত্যাকা- চলে সেব্রেনিকায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরোপের মাটিতে এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। এ ঘটনার শিকার অনেক মুসলমান পালিয়ে চলে গিয়েছিল জাতিসঙ্ঘের ঘোষিত সেব্রেনিকার সেইফ জোনে। সেখানে জাতিসঙ্ঘের সৈন্যরা তাদের রক্ষা করতে পারেনি।

২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুদানের পশ্চিমাঞ্চলের দারফুরে অবস্থান নেয় সরকার বিরোধীরা। এ সঙ্ঘাতে সেখানে আজ পর্যন্ত নিহত হয় দুই লাখ লোক। এ সময় ৪৪ লাখ মানুষকে সাহায্যনির্ভর হয়ে পড়তে হয়। স্থানচ্যুত হয় ২৫ লাখ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বাশারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কন্তু এর চার বছর জাতিসঙ্ঘ সিদ্ধান্ত নেয় দারফুর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২৬ হাজার সৈন্য পাঠানোর।

২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দেশের যৌথ বাহিনী তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে দখল জারি রাখার ফলে ইনফরমেশন ক্লিয়ারিং হাউসের হিসাব মতে, আজ পর্যন্ত দেশটিতে নিহত হয়েছে এক লাখেরও বেশি লোক। একইভাবে আফগানিস্তানে দখলদার বাহিনী হত্যা করেছে কয়েক লাখ আফগানকে। ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করে সেখানে পুতুল সরকার বসিয়ে ধ্বংস করেছে দেশ দুটির অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা। জাতিসঙ্ঘ ইরাকে এই অনুপ্রবেশকে বৈধতা দেয়। আর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাদ্দাম হোসেনের হাতে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগে সে দেশে এই অনুপ্রবেশ ও দখলদারিত্ব কায়েম করে।

অপর দিকে, সিরিয়ার সরকার রাজপথে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্মম হামলা চালায় ২০১১ সালের মার্চে। সরকারি নেতা বাশার আল-আসাদ গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লড়াই করে যাওয়ার কথা বলেন। এর ফলে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে সিরিয়া। বেশ কয়েকটি দেশ সিরিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। পরের বছর জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই দ্বন্দ্ব নিরসনে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাসের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু রাশিয়া এর মিত্র হাফিজ আল-আসাদকে বাঁচানোর জন্য এক ডজনেরও বেশি বার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সেখানে এক বছরের মধ্যে ষাট লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এর বাইরে দেশের ভেতরে স্থানচ্যুত হয়েছে আরো ছয় লাখেরও বেশি সিরিয়ান।

সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভ করে ২০১১ সালে। দেশটিতে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মেচার-এর অনুগতরা। এরা দু’জন ছিলেন ভিন্ন দুই জাতিগোষ্ঠীর লোক। এই গৃহযুদ্ধে নিহত হয় কম পক্ষে চার লাখ লোক। ২৫ লাখের মতো মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ১৮ লাখ লোক দেশের ভেতরে স্থানচ্যুত হয়। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সেখানে খ্যাদ্যাভাব ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়। জাতিসঙ্ঘ সেখানে মানবিক সঙ্কট নিরসনে ব্যর্থ।

ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু ২০১৪ সালে। একপক্ষে আন্তর্জাতিক ও সৌদি আরব সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মনসুর হাদি এবং অপরপক্ষে ইরান সমর্থিত একটি নৃ-গোষ্ঠী। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন ২০১৫ সালে ইয়েমেনে অনুপ্রবেশ ঘটালে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব এই দেশ কার্যত পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। জাতিসঙ্ঘ সেখানকার বেসামরিক লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে ব্যর্থ হয়।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন ও মানবাধিকার সঙ্কট চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয়ভাবে এই জাতিগত নিধনযজ্ঞ ব্যাপকভাবে শুরু করলে এ সঙ্কট চরম রূপ নেয়। অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির পরিসংখ্যান মতে, মিয়ানমার বাহিনীর হাতে নিহত হয় প্রায় ২৪ হাজার নিরস্ত্র বেসামরিক রোহিঙ্গা মুসলমান। এ সময় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। জাতিসঙ্ঘের দলিল মতে, সেখানে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ওপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ চালিয়েছে, হত্যা ও গুম করেছে। দেশটি নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের পরিণত করেছে রাষ্ট্রহীন। চীন এই রোহিঙ্গা সঙ্কটে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেয়নি।

এ পর্যন্ত উল্লিখিত প্রতিটি উদাহরণ প্রমাণ করে জাতিসঙ্ঘ জনগণের পাশে দাঁড়াতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে আরো হাজারো উদাহরণ টানা যাবে।

জাতিসঙ্ঘ তখনই ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘ’ হয়ে উঠতে পারবে- যদি পরাশক্তিগুলো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, নীতিহীন রাষ্ট্রীয় নীতি অবলম্বন করে ক্ষমতার পরিসর বাড়ানো আর অস্ত্রবাজার সম্প্রসারণের পথ থেকে সরে আসে এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা পরিষদে এসব দেশের ভেটো ক্ষমতা খর্ব করা হয়। কারণ, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের, অন্য কথায় বিশ্ব জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব দেশ ভেটো দিয়ে জাতিসঙ্ঘের অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। জনগণকে ঠেলে দিয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতা আর দুঃসহ দুর্ভোগের মুখে।


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

সকল