২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক আলোকিত মানুষের বিদায়

মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রহ: - ছবি : সংগৃহীত

বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেমে দ্বীন, সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ, সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও দেওদীঘি কাছেমুল উলুম কওমি মাদরাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রহ: গত ১০ মার্চ চিরবিদায় নিয়ে গেলেন। নিজেকে নিঃশেষিত করে সমাজকে আলোর পথে নিয়ে গেছেন। নবতিপর এ শিক্ষাবিদ ছিলেন শতাব্দীব্যাপী সংঘটিত ঘটনাগুলোর নীরব সাক্ষী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অর্জন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ নির্বিশেষে সবাই তাকে সম্মান ও সমীহ করে চলতেন। মুক্তিযুদ্ধচলাকালে বহু হিন্দু পরিবার নগদ অর্থ ও সোনাদানা তার হাতে আমানত রেখে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তারা দেশে ফিরে এসে আমানত বুঝে নেন।

উপমহাদেশের বহু রাজনীতিক ও খ্যাতনামা ব্যক্তিকে তিনি কাছ থেকে দেখেছেন এবং অনেকের সান্নিধ্যও পেয়েছেন। কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, ফাতেমা জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জেনারেল আইয়ুব খান, মুফতি মুহাম্মদ শফী, মাওলানা আতাহার আলী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, সৈয়দ মাওলানা ফজলুল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই), মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ (শর্ষীনার পীর সাহেব), খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মৌলভী ফরিদ আহমদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিয়া নওয়াজ শরিফ, পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ার এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনদার পরিবারে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভী আবদুল ওয়াদুদ মিয়াজি, মায়ের নাম রহিমা বেগম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা তিনি জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে সম্পন্ন করেন। কিশোর বয়সে একই দিনে মা-বাবাকে হারালে বর্তমান সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বাবা প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন ও গ্রন্থকার চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসার নাজিমে আলা আল্লামা ফজলুল্লাহ রহ: তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা হাবিবুল্লাহকে চুনতি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। ওখান থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আলিম ও ফাজিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি এক বছর বরিশালের শর্ষীনা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দেওবন্দের কৃতী ছাত্র, তিরমিজি শরিফের ভাষ্যকার আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খুত্তানি আত-তুরকিস্তানি এবং আল্লামা আবদুচ্ছাত্তার বিহারির কাছে হাদিস শরিফ অধ্যয়ন করেন। বরিশালের আবহাওয়া তার স্বাস্থ্যের অনুপযোগী হওয়ায় পরে তিনি চট্টগ্রাম চন্দনপুরা দারুল উলুমে ভর্তি হয়ে প্রথম বিভাগে কামিল (হাদিস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আল্লামা জফর আহমদ ওসমানীর ছেলে মাওলানা ওমর আহমদ ওসমানী ও শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ আমিন ছিলেন তার প্রিয় উস্তাদ।

মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রহ: ছিলেন একজন পরহেজগার ও বুজুুর্গ ব্যক্তি। রাতের প্রথম প্রহরে সামান্য ঘুমানোর পর সারারাত কুরআন তিলাওয়াত, অজিফা, জিকির আজকারে মশগুল থাকতেন। সুন্নাতে রাসূল সা:-এর অনুসরণের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। মুফতিয়ে আজম আল্লামা ফয়জুল্লাহ রহ:-এর হাতে ইসলাহি বায়আত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর বাংলাদেশী বিশেষ খলিফা আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান জওক নদভী (দা.বা.) তাকে খেলাফত দেন। ছাত্রজীবন শেষ করে লোহাগাড়া থানার পদুয়া হেমায়েতুল ইসলাম মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি সাতকানিয়ার বাজালিয়া হেদায়েতুল ইসলাম মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন। চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় দীর্ঘকাল প্রিন্সিপাল ছিলেন এবং গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া দেওদীঘি কাছেমুল উলুম কওমি মাদরাসার মুহতামিম হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ খিদমত আঞ্জাম দেন। জিরি জামিয়া আরাবিয়া, রাজঘাটা হোছাইনিয়া, পদুয়া হেমায়তুল ইসলাম, ডলুকুল নূরিয়াসহ বহু কওমি মাদরাসার তিনি মজলিসে শূরার প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। পঠন ও পাঠনে তার আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। কঠিন ও জটিল কথাকে সহজভাবে প্রকাশ করার দক্ষতা ছিল। মেধাবী ও কম মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বিশেষে সবাই তার ক্লাসে উপকৃত হতো।

মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন আদর্শ শিক্ষক এবং যুগসচেতন আলেমে দ্বীন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় তার হাজার হাজার ছাত্র নানা খিদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি ছিলেন উদার হৃদয়ের অধিকারী। কওমি ও আলিয়া উভয়ধারার ওলামায়ে কেরামের মধ্যে ঐক্যের সুদৃঢ় সেতুবন্ধন রচনা করতে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

তিনি নিজ সন্তান এবং ছাত্রদের উন্নত নৈতিক চরিত্র ও জ্ঞান-প্রজ্ঞায় যোগ্য করে গড়ে তুলতে সারা জীবন মেহনত করে গেছেন। তার ছয় সন্তানই যোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নয়া দিগন্তের নিয়মিত কলাম লেখক ও চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান; মেজো ছেলে হাফিজ মাওলানা জাহিদ হোসেন, লাহোরের শরিফ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি ভাষার অধ্যাপক, তৃতীয় ছেলে হাফিজ নাজিম হোসেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা, চতুর্থ ছেলে মাওলানা ড. সাদিক হোসেন সৌদি আরবের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূতের একান্ত সহকারী এবং পঞ্চম ছেলে মাওলানা ফারুক হোসেন ও ষষ্ঠ ছেলে হাফেজ আবদুল্লাহ, হোমিও চিকিৎসক। মেয়েদেরকেও তিনি দ্বীনি তালিমে প্রশিক্ষিত করে উচ্চশিক্ষিত ও উপযুক্ত পাত্রে সোপর্দ করেছেন। জামাতাদের মধ্যে কওমি মাদরাসার মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম, আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। শিক্ষার প্রতি অনুপম দরদ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানুরাগী হওয়ার কারণে তার নাতি-নাতনীদের মধ্যে আলেম, হাফেজ, এমবিবিএস ডাক্তার, বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, কলেজ শিক্ষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যাংকার রয়েছেন।

কুরআনের শিক্ষাবিস্তার এবং দ্বীনের খেদমতে সারা জীবন ত্যাগ ও কোরবানি দিয়েছেন তিনি। ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবন যাতে শিরক, বিদয়াত ও কুসংস্কারমুক্ত হয় এবং সুন্নাতে রাসূল সা:-এর পরিপূর্ণ অনুসরণে জীবন যাতে শুদ্ধ ও সমৃদ্ধ হয় সে পথে একনিষ্ঠ প্রয়াস চালিয়েছেন। এতিমের প্রতিপালন, শিক্ষা প্রদান ও বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদার। তিনি সমাজসেবা, মানবকল্যাণ, ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সবসময়।

স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে তিনি খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ রহ:-এর সাথে নেজামে ইসলাম পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন। ইসলামী আদর্শের আলোকে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল তার লালিত স্বপ্নসাধ। পরে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতির নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখতেন। ইসলামপন্থীরা পারস্পরিক দলাদলি ভুলে এক হওয়াই কামনা করতেন সবসময়।

প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন হজরত মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি কওমি ও আলিয়া উভয় ধারার শিক্ষাব্যবস্থার সাথে যুক্ত থেকে দারস-তাদরিস, সুনাগরিক গঠন, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সফলতার শ্রেষ্ঠ আসন অলংকৃত করেছিলেন। সামাজিক ন্যায়বোধ, সমঝদারি চিন্তাচেতনা ও মানবকল্যাণ ছিল তার নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী ছিলেন, তেমনি তার মধ্যে ছিল পরকে সহজে আপন করে নেয়ার পারঙ্গমতা। উগ্রতা ও শৈথিল্য পরিহার করে মধ্যমপন্থাকে তিনি অধিক পছন্দ করতেন।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের শাসনামলে ইসলামাবাদের ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তদানিন্তন পাকিস্তানের মহাপরিচালক ড. ফজলুর রহমান লিখিত ‘ইসলাম’ নামক গ্রন্থে আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ সাহেবের নেতৃত্বে গারাঙ্গিয়ার ছোট হুজুর হজরত মাওলানা আবদুর রশিদ, হাঙ্গরমুখ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল্লাহ ও দেওদীঘি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুচ্ছালামকে সাথে নিয়ে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। ড. ফজলুর রহমানকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আইয়ুব খানের কাছে কয়েক হাজার টেলিগ্রাম পাঠিছিলেন। গণ-আন্দোলনের মুখে তাকে অপসারণ করতে সরকার বাধ্য হয়।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী, বন্ধুবৎসল, উদার, পরোপকারী ও অতিথিপরায়ণ। কৃতজ্ঞতাবোধের প্রাবল্য তার জীবনকে মহিমান্বিত করে। বাড়িতে যত মেহমান আসুক, যত্ন আত্তি ও আতিথ্য প্রদর্শনে তিনি কখনো কার্পণ্য করেননি। সংগ্রাম ও বৈরী পরিস্থিতির মোকাবেলা করে তিনি বড় হয়েছেন। বিনয়, সৌজন্য, ঋজুতা ও গাম্ভীর্য তার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য আলোকিত দিক। শিক্ষকতার পাশাপাশি মানবসেবায় ব্রতী হয়ে হোমিও চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক। রোগ নির্ণয় ও ওষুধ নির্বাচনে তার পারঙ্গমতা ছিল বিস্ময়কর। ড. হ্যানিম্যানের ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ ও ড. বোরিকের ‘মেটেরিয়া মেডিকা’ ছিল তার প্রিয় চিকিৎসাবিষয়ক গ্রন্থ। তার প্রতিষ্ঠিত হাবিবিয়া হোমিও ফার্মেসিতে নানা পেশার ক্রনিক রোগী ভিড় জমাতেন প্রতিদিন। ফি আর ওষুধ খরচ নিয়ে তিনি কোনো দিন চাপাচাপি করেননি। অনেকে বিনা পয়সায় ওষুধ নিয়ে যেতেন। তিনি চিকিৎসাকে সেবাব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার এমপি মাওলানা ড. আবু রেজা নদভী মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রহ:-এর নামাজে জানাজাপূর্ব বক্তৃতায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার চাচা (হজরত মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ:) নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আমাকে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। তৎকালীন প্রধান পরিচালক হজরত হাজী ইউনুছ সাহেবকে তিনি সুপারিশ করেন। তার নেক দোয়া সবসময় পেয়েছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মরহুমের সুকৃতিগুলো কবুল করুন- আমিন’।

তাফসির অধ্যয়নের প্রতি মরহুমের বিশেষ আগ্রহ লক্ষ করা যায়। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’, আল্লামা আশরাফ আলী থানভীর ‘বায়ানুল কুরআন’, আল্লামা শিব্বির আহমদ ওসমানীর ‘তাফসিরে ওসমানী’, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফীর ‘মা-আরিফুল কুরআন’ ও আল্লামা ইকবালের ‘কুল্লিয়াত’ সবসময় অধ্যয়ন করতেন। বাংলা, উর্দু ও আরবি ভাষাদক্ষতা ছিল তার সহজাত। ছাত্রজীবনে তার শিক্ষার মাধ্যম উর্দু থাকায় উর্দুচর্চায় তিনি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতেন। ‘আল্লামা ফজলুল্লাহ রহ: জীবন ও কর্ম’ স্মারকে উর্দু ভাষায় লিখিত তার নিবন্ধ সমৃদ্ধ উর্দু সাহিত্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রয়োজনীয় ইংরেজিও তিনি জানতেন। হস্তলিপিও ছিল আকর্ষণীয়।

জিরি জামিয়া আরাবিয়ার প্রধান পরিচালক শাহ আল্লামা মুহাম্মদ তৈয়ব, পটিয়া আল জামিয়ার প্রধান পরিচালক আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারি, চট্টগ্রাম দারুল মা-আরিফের সহকারী পরিচালক আল্লামা ফুরকানুল্লাহ খলিল, কক্সবাজার মাশরাফিয়া মাদরাসার প্রধান পরিচালক, পদুয়া হেমায়তুল ইসলাম মাদরাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজির নেতৃত্বে পৃথক পৃথক প্রতিনিধিদল নামাজে জানাজায় শরিক হয়েছেন। চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া, গারাঙ্গিয়া ইসলামিয়া আলিয়া, বাজালিয়া ফাজিল মাদরাসা ও সাতকানিয়া আলিয়া মাদরাসা প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকরা নামাজে জানাজায় অংশ নেন।

লন্ডনে চিকিৎসাধীন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিয়া নওয়াজ শরিফ, পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পাক পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরের প্রধান পরিচালক মাওলানা ফজলুর রহিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করিম ও নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করিম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ও যুগ্ম মহাসচিব শেখ লোকমান হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মাওলানা আবদুল খালেক নিজামী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা শোক ও সমবেদনা প্রকাশ এবং মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেছেন।

নামাজে জানাজায় দূর-দূরান্ত থেকে রেকর্ড পরিমাণ মানুষের উপস্থিতি তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে উচ্চ মাকাম নসিব করুন। মহাকবি ইকবালের ভাষায়- ‘আকাশ বর্ষণ করুক তোমার কবরে রহমতের বারিধারা,/ আলোকময় সবুজ মাটি যেন এই ঘরকে দেয় পাহারা।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গণি এমইএস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট

সকল