১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ইয়েমেনের চোরাবালি ও বিদ্যমান সঙ্কট

-

ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ইয়েমেন এক অনন্য নাম। মুসলিম বিশ্বে ইয়েমেন বিশেষ মর্যাদার আসনে সমাসীন। ইয়েমেনের এক পাহাড়ি ঝরনাকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সা: ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ফলে তার পানি সুমিষ্ট হয়ে এখনো প্রবাহিত হচ্ছে। সানা থেকে সামান্য দূরে রানী বিলকিসের প্রার্থনা ঘর এখনো বিদ্যমান। দর্শনীয় স্থানটি দেখার জন্য বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় করেন সারা বছর। ইহুদিরা মনে করেন, ৩০০০ বছর আগে রানী বিলকিস এখান থেকেই জেরুসালেমে হজরত সোলাইমান আ:-এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এই জনপদ তখনো খুবই সমৃদ্ধ ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে রানী বিলকিস বা কুইন অব শেবা ইয়েমেনের সানা শহর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সানা ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় নগর অঞ্চল, এখন সানায় হুতিদের রাজত্ব।

এবং সাবেক উত্তর ইয়েমেনেরও রাজধানী ছিল ইয়েমেনের পূর্বে হাদরামাউত অঞ্চল। এখানে হুদ আ:-এর কবর রয়েছে। ৪০০০ বছর ধরে তিনি হাদরামাউতের মাটিতে শায়িত। কুরআনে উল্লিখিত আদ জাতির নবী ছিলেন তিনি। হাদরামাউতের একটি পাহাড়ি স্থানে আদ জাতির বাসস্থান ছিল। হুদ আ:-এর সমাধির পাশে হাফিফ নামে খাল এখনো প্রবাহিত। এটি বিস্ময়কর, কেননা পাহাড় পর্বতের শুকনা মরুতে হাজার বছর ধরে পানির ধারা অবিরাম বয়ে চলেছে। হাদরামাউতের পশ্চিমে নবী সালেহ আ:-এর সমাধি। সারা বছর ওয়াদি হাদরামাউত এবং ওয়াদি মাসিলায় পানি পাওয়া যায়। ফলে উৎপন্ন হয় নানা ফলমূল। এ কারণে সমৃদ্ধ জনপদ সৃষ্টি হয়েছে। এসব জনপদের কথা ও কাহিনী পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে এসেছে অনেকবার। ‘সানা ডকুমেন্টারি’ মতে, আল্লাহর রাসূল সা: সানায় মসজিদ নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হাজার হাজার বছর ধরে ইয়েমেন পুরো আরব এলাকায়, মধু, গম, বার্লি এবং খেজুরসহ নানা ধরনের ফল উৎপাদন ও রফতানি করে আসছে। মাছ ধরার জন্যও এলাকাটি প্রসিদ্ধ। খাবারে সমৃদ্ধ এলাকায় এখন ইয়েমেনিরা খাবারের অভাবে মৃত্যুবরণ করছে প্রতিদিন।

পত্রপত্রিকায় মাঝে মধ্যে এমন খবর বের হয় যে, বিন সালমান নিখোঁজ। আসলে তখন সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মুহাম্মদ তার বিলাসবহুল ইয়টে অবস্থান করে ছিলেন। সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন আরাম তরী। বর্তমানে ‘হাউজ অব সৌদে’র অবস্থা বিস্ফোরণোন্মুখ। যুবরাজ সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে নিজকে রক্ষার জন্য মাঝে মধ্যে এই কৌশল অবলম্বন করে থাকেন বলে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ।

ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি সামরিক বাহিনীর অযোগ্যতা প্রত্যক্ষ করা গেছে। কত দুর্বল এই বাহিনী তা এই যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিরাট অঙ্কের বিনিময়ে অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহ করে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহার করেও কোনো সেক্টরে বড় ধরনের বিজয় লাভ করা যায়নি। সৌদি আরব সাধারণত আমেরিকা থেকেই অস্ত্র কিনে থাকে। গত পাঁচ বছরের হিসাবে দেখা যায়, সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক শক্তি যারা আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনেছে। অপর এক হিসাবে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করে তার অর্ধেকেরই ক্রেতা সৌদি আরব। এমনকি সাম্প্রতিক সময় এই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ২২৫ গুণ। যুক্তরাজ্য থেকেও সৌদি আরব প্রচুর অস্ত্র কেনে। ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সৌদি আরব ব্রিটেন থেকে ৭৮টি ফাইটার জেট, ৭২টি কমব্যাট হেলিকপ্টার, ৩২৮টি ট্যাংক কিনেছে।

সৌদি আরবে জার্মানিও প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এক তথ্যে জানায়, ভারতের পর সৌদি আরব বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অস্ত্র ক্রয়কারী দেশ। ইয়েমেন যুদ্ধের পর এই ক্রয় দ্রুত বেড়ে যায়। চলতি বছর ৫২ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতি সত্ত্বেও ২০৮ বিলিয়ন ডলারের বাজেট করা হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতের কারণে। সৌদি আরব কার বিরুদ্ধে এত অস্ত্র প্রয়োগ করবে? কেনইবা ইয়েমেন যুদ্ধ? ওরা তো সবাই তাদের জ্ঞাতি ভাই! যারা হুতি তারাও তো তাদের লোক। রাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে তারা সৌদি রাজতন্ত্রবিরোধী হয়েছে। এই সাধারণ মানুষদের নিঃশেষ করার জন্য বিদেশী অস্ত্রের অসাধারণ মজুদ গড়ে তুলেও ইয়েমেন যুদ্ধে জিততে পারছে না সৌদিরা। ‘আনসারুল্লাহ’র মিসাইল থেকে আত্মরক্ষার জন্য এখন সৌদি আরব রাশিয়ার এস-৪০০ কেনার চেষ্টা করছে।

ইয়েমেন ২০১৫ সালে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায়ই অবরুদ্ধ হয়ে আছে। হাজার হাজার ইয়েমেনিকে হত্যা, শহর নগরে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ, বিয়ের অনুষ্ঠান ও জানাজার নামাজেও বোমাবর্ষণ করে সৌদি সেনাজোট এরই মধ্যে অমানবিক শক্তি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। এভাবে পাইকারিহারে বোমাবর্ষণ করেও ইয়েমেনিদের নতজানু করা যায়নি। বরং ইয়েমেন থেকে মাঝে মধ্যে ১২০-৩২০ কিমি. দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম, এমন মিসাইল ছোড়া হচ্ছে। ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতিরা এখন ৫০০-১০০০ কিমি. দূরত্বের মিসাইল সংযোজন করছে। যেকোনো মুহূর্তে সৌদি আরবের মূল ভূখণ্ডে ইয়েমেনি বাহিনী ঢুকে পড়তে পারে ভয়ে সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, আমরা কোনোভাবেই ইয়েমেন যুদ্ধে অংশ নেবো না। তবে মক্কা মদিনায় কোনো আঘাত এলে তা প্রতিহত করব।

ইয়েমেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যে প্রকাশ, ২০১৮ সালে সৌদি ভূখণ্ডে ৯০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে কথিত আনসারুল্লাহ বাহিনী রিয়াদে বিশ্বখ্যাত তেল উৎপাদনকারী সংস্থা আরামকোর তেলকূপে আক্রমণ চালায়। অর্থাৎ ইয়েমেনি মিসাইল এখন ১০০০ কিমি. দূরেও সফল আঘাত করতে পারছে। ব্যালেন্স অব পাওয়ার বা সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্যে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সাথে কোনো তুলনাই হুতিদের হতে পারে না, তথাপি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরবের যেন ঘুম নেই।

বিন সালমান প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এই যুবরাজ মাত্র তিন সপ্তাহে পুরো ইয়েমেন এক ঝটকায় দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে জোট গঠন করেছেন ও আক্রমণ চালালেন, কিন্তু বিদ্রোহীদের প্রতিরোধে সেটা স্বপ্নই থেকে যায়; বরং পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের এক নম্বর মানবিক সঙ্কটের জন্ম দিয়ে সৌদি আরব বরঞ্চ দুর্নাম কুড়িয়েছে। বৈশ্বিক চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ওপর। ইয়েমেনে রাশিয়ার দূতাবাসের তথ্যের বরাত দিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিওনিদ ঈসায়েভ জানিয়েছেন, ইরান ও বিদ্রোহীদের সাথে মধ্যস্থতা করার জন্য রিয়াদ মস্কোর সহায়তা কামনা করছে। বোঝা যায়, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের একতরফা জেতার সম্ভাবনা নেই।

ইয়েমেনের চোরাবালিতে যেন সৌদি আরব আটকা পড়েছে। যুদ্ধে কাক্সিক্ষত ফল না আসায় শীর্ষ মিলিটারি কমান্ডারদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমণ ‘অবৈধ ও অর্থহীন’ ছিল। এই আক্রমণের মূল হোতা যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। তার ধারণা ছিল হঠাৎ আক্রমণ বা যুদ্ধ করে ইয়েমেনকে সহজেই পরাজিত করা যাবে। কিন্তু দেখা গেল হিসাবটি ভুল। সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য সামরিক সহায়তা করা সত্ত্বেও কোনো সফলতা আসেনি। এদিকে আমিরাত সকোত্রা দ্বীপ পুরো দখল করে নিয়ে সেখানে সামরিক অবস্থান তৈরি করেছে। এটি সাগরের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত এলাকা। ধারণা করা কঠিন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া এ কাজ আমিরাত করছে না।

সম্প্রতি বুয়েন্স আয়ারে জি২০ সম্মেলনেও ইয়েমেন সঙ্কট স্থান পেয়েছে। অনেক নেতা মুহাম্মদ বিন সালমানকে তিন বছর স্থায়ী ভ্রাতৃহত্যার অভিযান বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিন সালমানকে সাবধান করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিদ্রোহীদের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ আলী আল-হুতির সাথেও সেখানে আলাপ করেছেন। বিন সালমান বহুলালোচিত মুসলিম ব্রাদারহুডকে কোনো ছাড় দিতে চান না। সৌদি আরব ও আমিরাত এখন ব্রাদারহুডফোবিয়ায় ভুগছে। এরদোগান মনে করেন, ইয়েমেন সঙ্কটের জন্য যুবরাজ বিন সালমান এককভাবে দায়ী। এই অর্থহীন যুদ্ধ সৌদি সরকারের বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। তাদের রাজস্বের টাকা যুদ্ধের পেছনে নিঃশেষ হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের নেতা হওয়া, আঞ্চলিক বা আরব বিশ্বের নেতৃত্ব প্রদানে সৌদি আরবের সম্ভাবনা এই যুদ্ধ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এখন আমেরিকাও সৌদি আরবকে বাদ দিয়ে নতুন জোট গড়ার চিন্তাভাবনা করছে।

২০১৫ সালে সৌদি কোয়ালিশন যখন যুদ্ধ শুরু করে, তখন থেকেই আমিরাত এই যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে দুই যুবরাজের রাজনীতি বহুল আলোচিত বিষয়। আরব আমিরাত ইয়েমেনকে দুই ভাগ করে অধিকতর বন্ধুভাবাপন্ন দক্ষিণাংশের কর্তৃত্ব নিতে চায়। এখানে আছে এডেন বন্দর, যেটি বিশ্বের সব স্থানে সহজ বাণিজ্যের জন্য খ্যাত। ইয়েমেনের প্রাকৃতিক সম্পদ হস্তগত করার ক্ষেত্রে এই বন্দরের অবস্থান কৌশলগত। আমিরাত মনে করে, একটি বড় ধরনের আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা না হলে এডেন বন্দর হাত করা সম্ভব নয়।

আমিরাতে সৌদি আরব বন্ধু হলেও স্বার্থ নিয়ে সাথে প্রচ্ছন্ন বিরোধ রয়েছে। সৌদিরা এবং ইয়েমেনের বেশির ভাগ জনগণ চায় না, দক্ষিণ ইয়েমেন ‘স্বাধীন’ হোক। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আমিরাত অনেক গোষ্ঠীকে সব ধরনের সহায়তা করে। যেমন হাদরামি এলিট ফোর্স। এদের লক্ষ্য, স্বাধীন হাদরামাউত গঠন। এরা মনে করে, তারা আদ জাতির বংশধর। মেধা ও শক্তির জন্য আদ জাতি সুনামের অধিকারী ছিল, যা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়েমেনে আরো অনেক গোষ্ঠীর মধ্যকার মতবাদ নিয়ে বিস্তর বিভেদ ও বিরোধ রয়েছে। রিয়াদ ‘ইসলাহ’কে সহায়তা করে থাকে, এরা ব্রাদারহুডের শাখা হলেও সৌদির প্রতি বিশ্বস্ত। অপর দিকে, আমিরাত সব ব্রাদারহুড সংগঠনের বিরোধিতা করে। আমিরাত এমন সব দলকে সহায়তা করে, যারা ‘ইসলাহ’র সাথে যুদ্ধরত।

হেলেন লাকনার তার ‘ইয়েমেন ইন ক্রাইসিস’ গ্রন্থে বলেছেন, ইয়েমেনে সৌদি আরব ও আমিরাত ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। আমিরাত সৌদি আরবকে এই যুদ্ধ শুরু করার জন্য বেশি ইন্ধন জুগিয়েছে। দক্ষিণ ইয়েমেন বিচ্ছিন্ন এবং সকোত্রা দ্বীপ দখল করতে আমিরাত ওয়াশিংটনের অনুমোদন নিয়ে থাকতে পারে। ইয়েমেনের যুদ্ধকে আরো জটিল করার জন্য ব্রিটিশরা আমিরাতকে অন্ধের মতো সহায়তা করে যাচ্ছে। ইসরাইলি মোসাদের ভয়ঙ্কর ‘ব্ল্যাক কিউব’ বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করে আরবদের মধ্যে টোপ হিসেবে ফেলছে, যেন মুসলমান বনাম মুসলমান যুদ্ধ চলতেই থাকে।

এএফপি আর বিবিসি পরিবেশিত সংবাদে জানা যায়, ইয়েমেনে ৫৫ লাখ শিশু খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। সব খাবারের দাম আকাশচুম্বী। ফলে যারা একসময় খাবার কিনে খেত তারা অর্থাভাবে খাবার পাচ্ছে না। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়েসী, অপুষ্টির শিকার চার লাখ শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সব শিশু চিকিৎসার সহায়তা পাচ্ছে না। কিছু দিন আগে অপুষ্টির শিকার এক শিশুর মৃত্যুর ছবি মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় যেন বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ওই সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, ৪০ লাখ শিশু অপুষ্টি ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।’ উত্তর ইয়েমেনের হাসপাতাল ঘুরে এসে সংস্থার প্রধান নির্বাহী জানান, ‘শিশুদের কাঁদারও শক্তি নেই।’

এমন চরম সঙ্কটের প্রতি ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি জোটকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এর বিরোধিতা করতে সক্ষম নন। বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই খাশোগি হত্যাকাণ্ড ‘হাউজ অব সৌদ’ এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে আরো বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে গেছে। সিআইএ খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করলেও ট্রাম্প তা অস্বীকার করেছেন। তার মতে, সিআইএ কনসুলেটের ভেতর সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে চূড়ান্ত উপসংহার টানেনি। সিআইএ প্রধান গিনা হাসপেল একজন পাকা খেলোয়াড়। ট্রাম্পই মুসলিমবিদ্বেষী এই মহিলাকে নিয়োগ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কোনো দেশের নেতাকে যুক্তরাষ্ট্র আর তোষণ করে না। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সেই সীমা অতিক্রম করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যদি সৌদি আরব বোঝা মনে হয়, তারা নিঃসন্দেহে পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করবে। তখন হয়তো সৌদিবিরোধী শিবির যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও পাকিস্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ অবস্থানে দেখা যায়, মাইক পম্পিউ ঘোষণা দিয়েছেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষীদের শাস্তি পেতে হবে। এদিকে সৌদি আরব থেকে ট্রাম্প প্রশাসনে কী পরিমাণ অর্থ এসেছে তা তদন্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের জামাতা কুশনার সৌদি আরব ও আমিরাত থেকে অর্থ নিয়েছেন কি না তাও তদন্তের আওতায় আসছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হোদায়দাতে যুদ্ধ বন্ধ রাখার চেষ্টা করলেও তা বিফল হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি যুদ্ধ বন্ধ করবে, শান্তি ও মানবতার জন্য সেটা ততই কল্যাণকর।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বম উজিরপুরে বিশ্বনবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল তামিমের ব্যাটে বাংলাদেশের উড়ন্ত শুরু নাটোরে এক প্রার্থীর সমর্থককে মারপিট করায় অপর প্রার্থী গ্রেফতার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অবসরে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার কক্সবাজারে ৩ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ সরকারের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় : গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা, বিপাকে দেড়শতাধিক কৃষক রেলপথ উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করল চার দেশ একাদশে ৩ পরিবর্তন, টসে হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

সকল