২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রত্যাশা পূরণ করছেন নাহিদ রানা

উইকেট নেয়া নাহিদ রানাকে অভিনন্দন মিরাজ-জয়দের : ক্রিকইনফো -

নাহিদ রানার ক্রিকেটে উত্তান বেশ চমকপ্রদ। মাত্র তিন বছর আগেও ক্রিকেট বলে খেলতেন না তিনি। বয়স ১৮ পেরুনোর পর প্রথম ক্রিকেট বল হাতে নেন। শারীরিক গড়নে দীর্ঘকায়। সহজাতভাবে পেয়েছেন জোরে বল করার সামর্থ্য। অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকায় নানা ধাপ পেরুতে দেরি হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছেলের।
দেশের উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাহিদের পরিবারের শুরুতে ক্রিকেটে সমর্থন ছিলো না। বরং পরিবার থেকে পড়াশোনার চাপ ছিল প্রবল। কিন্তু তার ঝোঁক ছিল খেলার দিকে। পরিবার শর্ত দেয় যদি এসএসসি পাস করতে পারে তবেই খেলতে দেয়া হবে। শর্ত-পূরণ করে ক্রিকেট বলের অনুশীলন শুরু ১৮ বছর বয়সে। বয়সভিত্তিক ধাপে গতির ঝড় তুলে সামনে এগোতে কষ্ট হয়নি।
প্রথম শ্রেণীতে রাজশাহী বিভাগের হয়ে ১৫ ম্যাচেই পান ৬৩ উইকেট। গত বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার গতি তোলে জন্ম দেন আলোচনার। এ রকম একজন প্রতিভাকে টেস্টে নামিয়ে দেয়ার লোভ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
দিনের নবম ওভারে প্রথম বল হাতে পান নাহিদ রানা। প্রথম বলটাই করেন ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার গতিতে। পুরো দিনজুড়ে এই গতি তার দেখা গেছে নিয়মিত। বাড়তি গতি দিতে গিয়ে লাইন-লেন্থ নিয়ে ভুগেছেন বিস্তর, তাতে খরুচে হয়েছে বোলিং ফিগার। তবে এই ধরনের বোলারদের যে বিশেষত্ব সেই ব্রেক থ্রোও পাইয়ে দিয়েছেন শেষ সেশনে। শ্রীলঙ্কার বড় জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর নায়ক তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪ ওভার বল করে ৮৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন ডান হাতি তরুণ। বোলিং ফিগার বলবে বিশাল কিছু ঘটাননি। তবে এত দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে জিনিসটার ঘাটতি ছিল প্রকট, তা মেটানোর আভাস দিয়েছেন প্রবলভাবে।
বাংলাদেশের একজন পেসার ঘণ্টায় নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন, কখনো গতি যাচ্ছে ১৫০ কিলোমিটারের কাছে। ভক্ত, সমর্থক তো বটেই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছেও এ যেন রোমাঞ্চকর ব্যাপার। গত শুক্রবার সিলেটে প্রথম দিনের খেলায় নাহিদের উপর চোখ ছিল সবার। মাত্র ১৫টি প্রথম শ্রেণী ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই টেস্টে নামেন ২১ পেরুনো নাহিদ। সহজাত অনন্য দক্ষতা থাকার কারণে তাকে পেরুতে হয়নি সবগুলো ধাপ। লাফ দিয়ে ছুটেছে তার পথ চলা।
পেস বোলিং ছাড়া ক্রিকেটে যে এখনো তিনি বেশ কাঁচা সেটা বোঝা যায় ফিল্ডিং দেখে। কখন বলের পেছনে ছুটবেন, কখন ডাইভ দেবেন তা নিয়ে নেই পরিষ্কার ধারণা। আগের দিন ক্যাচিং অনুশীলনে হিমশিম খেয়েছেন। নাহিদের এই দুর্বলতা জেনে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা তাকে সামলেছেন দারুণভাবে। বলের পেছনে ছুটে তিনি কখন কোনদিকে ডাইভ দেবেন তা চিৎকার গিয়ে গাইড করতে হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দিন শেষে গণমাধ্যমে কথা বলতে এসে নাহিদ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস, ‘সে প্রতিভাবান, সে গতিময়। প্রায় প্রতিটি বল ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে করেছে। তার বোলিং অ্যাকশনও সুন্দর। সে এখনো আনকোরা, দুর্দান্ত হয়ে উঠতে তার আরো অনেক কিছু শিখতে হবে।’
দীর্ঘকায় হলেও এখনো নাহিদের শরীর ঠিক পোক্ত নয়। ফিটনেস নিয়েও তার কাজ করার আছে অনেক। তাকে গড়েপিটে খেলানো, সামলানো এবং উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার করা হবে গুরুত্বপূর্ণ। বিপিএলেই গতির রাজা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন নাহিদ রানা। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই সেই গতির পসরা সাজিয়েছিলেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন তিন উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও আগুনে বোলিং অব্যাহত রেখেছেন। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বল করতে এসে চতুর্থ বলে তেমনই এক ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন লঙ্কান ওপেনার নিশান মাধুশঙ্কা। এরপর তার শিকার কুশল মেন্ডিস। ক্যাচ নিয়েছেন দিমুথ করুণারতেœরও।


আরো সংবাদ



premium cement