১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


তমার প্রিয় শখ

-

তমা এবার ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছে। তার বয়স ১২ বছর। পরিবারে রয়েছে মা-বাবা, দাদা-দাদী ও চার বছরের ছোট ভাই। পরিবারের সবার অনেক আদরের মেয়ে তমা। লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছাত্রী সে। শিক্ষকরা তাকে অনেক আদর যতœ করেন। প্রতি শ্রেণীতেই তমা প্রথম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। তমার অনেকগুলো গুণ রয়েছে। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, বক্তৃতা দেয়াসহ প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে সে অনেক চালু। এগুলোর মধ্যে তমার সবচেয়ে প্রিয় হলো বই পড়া। সে বই পড়তে খুবই ভালোবাসে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও সে পুরস্কার পেয়ে অনেক বই জমিয়েছে। তার পড়ার টেবিলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার বই।
ছোট ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই ও তার নজরে থাকে। সে শ্রেণীর পড়ালেখার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ে। পড়তে পড়তে পড়ার মধ্যে যে চিত্রগুলো থাকে সেগুলো খাতায় এঁকে রাখতে ভুল করে না সে। তার পরিবার ও তার প্রতি অনেক দায়িত্ববান। সবাই তাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। এ জন্য তমা কোনো আবদার করলে সেটা রাখতে বাধ্য হয়। মামার কাছ থেকেও বই নিতে ভুল হয় না তার। তার মামা ঢাকায় থাকে। প্রতিবার বাসায় আসার আগে তার জন্য বই নিয়ে আসাটা বাধ্যতামূলক। এক দিন তমা তার বান্ধবীদের সাথে স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সকাল সকাল চলে গেল।
আর এই ফাঁকে তার ছোট ভাই তার পড়ার টেবিলে বসে খাতা কলম, গল্পের বই, শ্রেণীর বই সব এলোমেলো করে ফেলল। ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করতে লাগল। কলম দিয়ে বইয়ের ওপর দাগাদাগি করে বিশ্রী একটা অবস্থা করে ফেলল। তমার আম্মু এ বিষয়ে অবগত ছিল না। মা রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল এ জন্য বুঝে উঠতে পারেনি। হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দেখে ছেলে তার এই অবস্থা করে রেখেছে। আম্মু হতবাক হয়ে গেল! মেয়ে যেমন একগুঁয়ে এবং বইপ্রেমী আর সে যদি এসব দেখে তাহলে তার কান্না থামাবার মতো কেউ হবে না।
এ জন্য আম্মু তাড়াতাড়ি করে পাশের বাড়ির তমার শ্রেণীতে পড়ে এক বান্ধবী মায়ের কাছে এই ঘটনা বলে সেখান থেকে পাঠ্যবইসহ কিছু গল্পের বই নিয়ে আসে। সেগুলো তমার টেবিল পরিষ্কার করে সেখানে রেখে দেয়। বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে তমা বাসায় ফিরে আসে দুইটা গল্পের বই এবং একটা ছবি আঁকার রঙের বাক্স নিয়ে। এগুলো সে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং অন্য খেলাধুলা করে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে। আনন্দের সাথে আম্মুকে সেসব কথা বলতে লাগল। তারপর সে তার পড়ার টেবিলে বইগুলো রাখতে যায়।
হঠাৎ তার চোখে পড়ে তার টেবিলের রাখা বইগুলো আগের মতো নেই। বইগুলো অন্য রকম দেখাচ্ছে। সে আম্মুকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘এগুলো কার বই? আমার বইগুলো কোথায়?’ তার আম্মু একটু নিম্ন স্বরে বলল, ‘এগুলোই তোমার বই।’ তমা কিছুতেই বিশ্বাস করল না। বাধ্য হয়ে আম্মু সবকিছু খুলে বলল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সে কি কান্না! দুপুরের খাবার পর্যন্ত খেলো না। দাদা-দাদী এত করে বুঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিকেলের দিকে তার বাবা বাসায় ফিরে যায়। তমা বাবার সাথে কান্না করতে করতে এসব বলে।
তার বাবা আদরমাখা কণ্ঠে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করল এবং বলল তোমার মামা কিছুদিন পর বাসায় আসবে তাকে তোমার জন্য অনেক নতুন বই কিনে আনতে বলব। তখন একটু শান্ত হলো তমা। কিন্তু সে মামা কখন আসবে কখন আসবে এটা বলে তোলপাড় শুরু করে দিলো। তখন বাবা তার মামার সাথে কথা বলে দুই দিনের মধ্যে চলে আসতে বলল। সাথে কিছু পাঠ্যবই, গল্পের বই ও রঙ পেনসিল বক্স নিয়ে আসতে বলল। এটা শুনে তমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল! তখন বাবা তাকে আদর করে খাইয়ে দিল। এভাবে এক দিন চলে গেল। তমার অপেক্ষা সহ্য করতে পারছে না। মামাকে কল দিয়ে নিজেও একবার আবদারের কথা জানাল।
মামা বলল তোমার জন্য সব কিছুই নিয়ে আসব। এই তো কালই চলে আসব। তমা খুশিমনে বাইরে চলে গেল খেলা করতে। তখন সামনে যাকে পায় তাকে এ কথা বলতে লাগল। তার বন্ধুদের কেউ কেউ বলল ‘কয়েকটা বই আমাকে ধার দিস।’ তমা সাদামনের হলেও নিজে সবগুলো বই শেষ না করার আগে কাউকে বই দেবে না এ কথা বলে দিলো। সবার সাথে এক মনোমালিন্য হলেও আবার খেলায় মেতে ওঠে তারা। সবাই একসাথে যার যার বাসায় ফিরে গেল। সন্ধ্যা নেমে এলো। তমা হাত মুখ ধুয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে খেলতে বসল। আজ সে আর পড়বে না। শুধু বলতে থাকল, ‘এই রাতটুকু যায় না কেন’।
রাত পেরোলেই সকালে চলে আসবে মামা। নতুন বই দেখার আনন্দে নাচতে শুরু করে দিল সে। ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে কত কি বোঝাতে থাকল। এমন কাজ করতে নেই, সবাই খারাপ বলবে, দুষ্টু বলবে, পাপ হবে এসব কিছু বলতে লাগল। ছোট ভাই আধো আধো কণ্ঠে বলল, ‘সে এমন আর করবে না’। রাত ১০টা বাজল রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুম পাড়ল। তমা মনে মনে শুধু বই নিয়ে কল্পনা করতে শুরু করে দিলো। কোন বই কখন পড়বে, কোনটা কোথায় রাখবে, কত দিনের মধ্যে পড়া শেষ করবে এসব নিয়ে ভাবতে থাকল।
চোখে ঘুম এসে যায় তার। পরদিন সকালে মামা এলো তাদের বাসায়। মামা ব্যাগ থেকে তার আবদারের জিনিসগুলো বের করে দিলো। এগুলো দেখে খুশিতে মামাকে জড়িয়ে ধরল সে! মামা তাকে বলল, ‘তুমি এক দিন অনেক বড় হবে। তোমার মধ্যে সেটা দেখতে পাচ্ছি আমি। বই পড়া একটা ভালো অভ্যাস। বই পড়লে অনেক জ্ঞান বাড়বে সবকিছু জানতে পারবে। আরো বেশি বেশি বই পড়বে। এখন থেকে তোমার যখন যে বই লাগে আমাকে বলবা আমি সেগুলো নিয়ে আসব।’ মামার কথা শুনে সে খুশি মনে মাথা কাত করে সায় দিলো।


আরো সংবাদ



premium cement
শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা শতবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে পারেন : ডেপুটি গভর্নর ইসরাইলি হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত আফগানিস্তানে গুলিতে ৩ স্প্যানিশ ও ৩ আফগান নিহত বিভিন্ন অপরাধে সাতজনের ফাঁসি কার্যকর করল ইরান কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ‘প্রাচীন হিব্রুদের সাথে ইসরাইলি ইহুদিদের জেনেটিক সংযোগ নেই’

সকল