০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অন্ত্র কি শরীরের দ্বিতীয় মস্তিষ্ক?

- ছবি : সংগৃহীত

শরীরের ভেতর পাঁচ থেকে আট মিটার লম্বা একটি পেঁচানো নল আছে, যার নাম অন্ত্র। এর নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র আছে। অন্ত্রই মানুষের জীবনধারা, অভ্যাস ও আবেগ প্রতিফলিত করে। কিছু বিশেষজ্ঞ অন্ত্রকে এমনকি এক ধরনের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু কেন?

অন্ত্রের প্রাচীরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন স্নায়ু কোষ আছে। তবে এই সংখ্যা মস্তিষ্কে যা থাকে তার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তথাকথিত এই ‘অ্যান্টেরিক স্নায়ুতন্ত্র’ অন্ত্রকে হজমের সাথে জড়িত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। যেমন, আংশিক হজম হওয়া খাবার পরিবহন, অন্ত্রের দেয়াল দ্বারা পুষ্টির শোষণ, এবং হজমকারী এনজাইম নিঃসৃত করা।

অন্ত্র আর মস্তিষ্কের মধ্যে ভালো যোগাযোগ হয়ে থাকে। সেটি ভ্যাগাস নার্ভ কিংবা রক্তের হরমোনের মাধ্যমে হয়। যেমন কখন খাবার দরকার, সেটি অন্ত্র মস্তিষ্ককে জানায়। আর মস্তিষ্ক হজম প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে পারে বা স্থবির করে দিতে পারে।

তবে কিছু অণুজীবেরও প্রভাব আছে। এই অণুজীবদের কাছে অন্ত্র যেন জন্মদান করার একটি জায়গা।

অন্ত্র আর মাইক্রোবায়োমের একটি লেনাদেনার সম্পর্ক রয়েছে। অন্ত্রের ইমিউন কোষগুলো নিরীহ জীবাণুকে একা ছেড়ে দেয়। বিনিময়ে তারা হজমে সহায়তা করে।

অণুজীবগুলো জটিল কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার ভেঙে দেয়, যা অন্ত্র নিজে ফাটাতে পারে না। তারা ভিটামিন বি ও কে-র মতো পুষ্টিও তৈরি করে।

অন্ত্রের মতো অণুজীবগুলোও নীরবে কাজ করে। তারা সিগন্যালিং মলিকিউলের মাধ্যমে অন্ত্র ও মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করে জানায়, তারা কিসের জন্য ক্ষুধার্ত।

কিছু ব্যাকটেরিয়া আবার সেরোটোনিন সংশ্লেষণের সাথে জড়িত-যা মেজাজ এবং ঘুমের প্যাটার্নে বড় প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং রোগ এই ভারসাম্যপূর্ণ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

হজম প্রক্রিয়া তখন খুব দ্রুত বা খুব ধীরগতিতে চলে। মাইক্রোবায়োমের বৈচিত্র্য হারিয়ে যায়। এর ফলে অন্ত্রের প্রদাহ বা বিরক্তিকর পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।

অনেকদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করছেন, অন্ত্রের ব্যাধি এবং বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের মতো মানসিক ব্যাধির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

তবে যেটি নিশ্চিত তা হলো, অন্ত্র আর মস্তিষ্ক একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আপনার অন্ত্র আপনার আবেগ প্রতিফলিত করে, এবং ইতিবাচক বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা মনে রাখে। তাই মাঝেমধ্যে আপনার অন্ত্রের অনুভূতি শোনা ভালো। কারণ, ভেতরে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে তার ভালো ধারণা আছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement