২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বালিয়াডাঙ্গীতে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি

বালিয়াডাঙ্গীতে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় আধাপাকা গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার (২০ মার্চ) ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ।

বুধবার ভোর ৩টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়নে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হয়েছে।

তবে চৈত্র মাসের অসময়ে ভোররাত হতে দিনব্যাপী বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এই অঞ্চলের আম চাষিরা।

আমের মুকুল শুরু হবার পর থেকেই অনাবৃষ্টি ও তীব্র রোদ এবং খরায় চিন্তিত ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আম চাষিরা। অবশেষে আম চাষিদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাদের স্বস্তি দিয়েছে প্রকৃতি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বলেন, বুধবার ভোর ৩টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গীতে পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই চৈত্র বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রথমবারের মতো ঝরল বৃষ্টি। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১২টায় দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় আধাপাকা গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই হিসেবে এটাই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টি।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে ঠাকুরগাঁও জেলায় সাত হাজার ১২৭ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আম বাগান রয়েছে প্রায় দুই হাজার ১৩২ হেক্টর জমিতে। জেলায় আমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বালিয়াডাঙ্গী, রাণীসংকৈল, হরিপুর ও পীরগঞ্জসহ এই চার উপজেলার আম উৎপাদনের ওপরে নির্ভর করে। এজন্য অসময়ের বৃষ্টিতে আম চাষিরা খুশি হয়েছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া গ্রামের আম চাষি মনোয়ার হোসেন মোনু বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমের মুকুল আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মুকুল আসার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হওয়া বৃষ্টিতে গাছ ধুয়ে গেছে। দূর হয়েছে অনেক রোগবালাই। একইসাথে গাছের গোড়ার সেচও হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ কমে গেছে। এই বৃষ্টি আমের মুকুল আসতে ও ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টি আমের জন্য প্রয়োজন ছিল। অতি খরায় ধুলোবালিতে আমের মুকুল আসাতে বাধাগ্রস্ত করে। বৃষ্টিতে গাছ ধুয়ে পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন দ্রুত সময়ে মুকুলে ভরে উঠবে গাছ।

বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত বিঘা জমির আধাপাকা গম মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। কৃষকরা উৎপাদিত ফসল কেটে ঘরে তুলে বিক্রির স্বপ্ন দেখছিলেন। ভেবেছিলেন, ধার-দেনা ও ঋণের বোঝা মিটিয়ে স্বস্তির হাসি হাসবেন। সেখানে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে গম চাষিদের। লাভ তো দূরের কথা, দরিদ্র কৃষকরা উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে এখন শঙ্কিত।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল আট হাজার ৩০০ হেক্টর।

কৃষি অফিস বলছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারা দেখেছেন। অনেক জমির গম নুয়ে পড়েছে। তবে কৃষকদের দাবি প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার বড়বাড়ী এলাকার কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে গমের আবাদ খুব ভাল হয়েছিল। গমের শিষও পর্যাপ্ত ছিল। আর ১৫-২০ দিন পরেই গম ঘরে উঠত। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে সব গম মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। এতে ফলনের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। লাভের জিনিস একদিনের ব্যবধানে মাথার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় গমের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২০০ হেক্টর জমির গম শুয়ে পড়েছে। গমের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আমের জন্য এই বৃষ্টি উপকারী হবে।


আরো সংবাদ



premium cement