রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে মারধোর, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

বেশি ভাড়া চাওয়া নিয়ে তর্কের জেরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে লেগুনা চালকের মারধোরের ঘটনায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে প্রতিদিনের মতো ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে মিঠাপুকুরের জায়গীরে বাড়ি যাওয়ার জন্য মডার্ন মোড়ে লেগুনায় ওঠেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল আমিন। এ সময় তার কাছ থেকে ভাড়া ৫০ টাকা দাবি করলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে নির্ধারিত ভাড়া ২০ টাকা দিতে চান আলআমিন। এনিয়ে তর্ক হলে লেগুনার চালক সজিব ও হেলপার শাওন ওই শিক্ষার্থীকে চেইন দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ খবর পেয়ে তার কয়েক বন্ধু সেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরও চেইন দিয়ে পিটায় সজিব-শাওনের নেতৃত্বে অন্যান্য লেগুনা চালক ও হেলপাররা। খবর পেয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন মডার্ন মোড়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা আহত অবস্থায় ৫ সহপাঠিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

অন্যদিকে রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসের হল ও আশপাশের ছাত্রাবাসগুলো থেকে শতশত শিক্ষার্থী লাঠিশোঠা নিয়ে অবরোধ করেন পার্কের মোড়। তারা হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা রাস্তায় বসে যান। তাদের সাথে যোগ দেয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাও। এতে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

অবরোধকারী সহপাঠি ইমরান বলেন, লেগুনা চালকরা আমাদের সহপাঠীদের চেইন দিয়ে পিটিয়ে এতটাই জখম করে যা কল্পনাই করা যায় না। এদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

আরেক অবরোধকারী সহপাঠী মোনায়েম জানান, মডার্ন মোড় থেকে লেগুনার ভাড়া মূলত ২০ টাকা। কিন্তু লেগুনা চালক দাবি করে ৫০ টাকা। আমাদের সহপাঠী আলআমিন তা দিতে অস্বীকার করলে লেগুনা থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় আলআমিন ফোন দিয়ে বন্ধুদের ডাকলে লেগুনার চালক ও হেলপাররা তাদের চেইন দিয়ে কুপিয়ে-পিটিয়ে জখম করে।

অবরোধে যোগ দেয়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া জানান, বারংবার শিক্ষার্থীরা লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থা বন্ধ হোক। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। সেই সাথে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। এক ঘণ্টার মাথায় রাত সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয়া রোকেয়া বিশ্বাবদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক জানান, মডার্ন মোড়ে আমার মার্কেটিং বিভাগের ১৪তম ব্যাচের কয়েক শিক্ষার্থীকে লেগুনার কিছু হেলপার ও চালক চেইন দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তারা এখন হসপাতালে আছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে। যেহেতু আগামীকাল একটি ভর্তি পরীক্ষা আছে এবং এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের সাথে আমার কথা হয়েছে তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেগুনার সন্ত্রাসী চক্রকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কারণে আমরা মার্কেটিং বিভাগ, শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগসহ সবাই অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যাচ্ছি। আমরা চাই না আর কোনো শিক্ষার্থী এরকমভাবে আহত হোক। আমরা রাজপথে থাকতে চাই না। আমরা পড়ার টেবিলে থাকতে চাই। আমরা হলে থাকতে চাই। আমরা লাইব্রেরি এবং শিক্ষাঙ্গনে থাকতে চাই।

রংপুরে মেট্র্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান আরিফ জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। এখন রাস্তা সচল আছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে। যে ঘটনাটি ঘটেছে সে ব্যপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা আজকেই নিয়ে নিব।

প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাজহাট থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।