নবম-দশম শ্রেণীতে দুই বছর লেখাপড়া করে, ক্লাস পরীক্ষা ও টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করে এসে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থী জানতে পারলো সে জেএসসিতে ফেল করেছে। তাই এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না সে। এ যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। ঘটনাটি অবাস্তব মনে হলেও ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এ দিকে ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম বিপর্যয় ঘটলেও নির্বিকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিজেদের ভুল শিকার করার পরিবর্তে তারা উল্টো মৃত প্রধান শিক্ষকের দোহাই দিয়ে অভিভাবককেই দোষারোপ করে চলেছেন। এতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অসহায় দরিদ্র পরিবার।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো: জামিল উদ্দিন জানান, তার ছেলে মোসাদ্দেক আলী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু কয়েক দিন আগে স্কুল থেকে জানানো হয় সে পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ জেএসসি পরীক্ষায় সে এক বিষয়ে ফেল করেছিল। সে বিষয়ে সম্পূরক পরীক্ষা না দেয়ায় তার জেএসসি’র সনদপত্র পাওয়া যায়নি। অথচ কয়েক দিন আগে স্কুলের অফিস সহকারী মো: রাসেদুল ইসলাম বোর্ডে সামান্য ভুল আছে তা সংশোধনের জন্য এক হাজার টাকা চেয়ে নেন আমার কাছে। এখন বলছে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে ফেল করে থাকলে তাকে কিভাবে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয় এবং কেমন করে সে নবম-দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করলো এবং টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে পাশও করলো? এত দিন তারা বিষয়টি কেন জানায়নি? কেন তারা আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি করলো? এর দায় কার? এখন তারা বলছে, এত দিন যা খরচ হয়েছে তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, তারা কি আমার ছেলের বিগত সময়গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে? পারবে তার শিক্ষা জীবনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে? পারবে না। মূলত কেরানীর মাধ্যমেই আমার ছেলেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়েছি। কোনো প্রকার ভুল হয়ে থাকলে তিনিই করেছেন। তার কারণেই একজন শিক্ষার্থীর এহেন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তিনি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আমাদের বিপদে ফেলেছেন। তিনি যদি বিষয়টি আগেই দায়িত্বশীলতার সাথে যাচাই বাছাই করতেন তাহলে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে তবেই আমার ছেলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হতো। কিন্তু তিনি লোভের বশে তা না করে এখন দোষারোপ করছেন সদ্য আত্মহত্যা করা যাওয়া প্রধান শিক্ষককে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে আমার বা আমার ছেলের অথবা পরিবারের অন্য কারো কোনো কথা হয়নি। যা করেছেন স্কুলের কেরানী রাসেদই করেছেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। দায়ী ব্যক্তির আইনানুগ শাস্তি চাই।
এদিকে একই সমস্যা আরো কয়েকজনের হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বোতলাগাড়ী মাঝাপাড়ার রমজান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, নাজমুল হকের ছেলের ক্ষেত্রেও একইভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় জানতে পারে যে তারা জেএসসিতে পাশ করেনি।
এ ব্যাপারে স্কুলের অফিস সহকারী রাসেদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, যা করেছি সাবেক প্রধান শিক্ষক (মৃত) মোখলেছুর রহমানের নির্দেশেই করেছি। ভুল হয়ে থাকলে তা প্রধান শিক্ষকের। এক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই।
নবম শ্রেণীতে ভর্তির সময় কেন তার কাগজপত্র না দেখেই তাকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করানো হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মিসটেক হয়েছে। অনেক সময় এমন হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহানা ইয়াসমিন নয়া দিগন্তকে জানান, এ ধরণের কোনো বিষয় তার জানা নেই। তাবে এমন হয়ে থাকলে তা সদ্য মৃত প্রধান শিক্ষক কিভাবে করে গেছেন তা তদন্ত করতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অফিস সহকারী যদি এর সাথে জড়িত থাকে তাহলে তার ব্যাপারেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাবেক প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হালিমা বেগম জানান, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে দোষারোপ করে অনেকেই নিজের অপরাধ ঢাকতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার স্বামী কোনোভাবেই অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অর্থ কমিটির লোকজনই হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন কেরানীও একই পথ ধরেছেন। তাদের অপকর্মের বিচার চাই। একজন মৃত ব্যক্তিকে মিথ্যা দোষারোপ করে তারা কখনো পার পাবেন না।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ নিয়োগ বাণিজ্য করতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রীম প্রায় ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সভাপতি মনিরুজ্জামান জুন। এক্ষেত্রে তার প্রধান সহযোগী ছিলেন স্কুলের অফিস সহকারী রাসেদুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষক আত্মহত্যা করার পর সভাপতি ও অফিস সহকারীসহ অন্যান্য যারাই স্কুলের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত তারা সকলেই অপরাধের জন্য প্রধান শিক্ষককেই দায়ী করে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা