১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্রিয়জনের কবর জিয়ারত করে শুরু ঈদ

প্রিয়জনের কবর জিয়ারত করে শুরু ঈদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

স্ত্রীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একা একাই কথা বলছেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। কাঁদছেন আর হাত তুলে দোয়া করছেন। ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া গোরস্থান। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও পুরানা কবরস্থান এটি। ১৭ একর আয়তনের রুহিয়া ছালেহিয়া মাদরাসা সংলগ্ন গোরস্থানটি কত বছর আগের তা কারো জানা নেই।

স্থানীয়রা জানান, ঈদ রোজা বলে কথা নেই, বছরের ৩৬৫ দিনই এ কবরস্থানে লাশ দাফন হয়।

প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কার না মন চায়। সবাই চায় পরিবার-পরিজনের সাথে উৎসব উদযাপন করতে। কিন্তু যাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, আদরের সন্তান কিংবা অন্যকেউ চিরবিদায় নিয়েছেন উৎসবের দিন এলেই তাদের শূন্যতা অনুভব হয়। নিজের অজান্তেই কেঁদে ওঠে মন। তাইতো এ আনন্দের দিনে প্রিয়জনের রূহের মাগফিরাত কামনা করতে ঠাকুরগাঁও সদরের এই শতবর্ষী কবরস্থানে ছুটে এসেছেন অনেকে।

ঈদের দিন শুক্রবার ফজরের নামাজ শেষে ছালেহিয়া মাদরাসা সংলগ্ন গোরস্থানের প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় ঢাকা থাকা সুলতান আলীর।

তিনি জানান, দশ বছর আগে তার মা মারা গেছেন। এরপর থেকে ঈদে বাড়ি এলে ঈদের দিন ফজরের নামাজ পড়ে কবরস্থানে মায়ের কবর জিয়ারত করতে আসেন। ফজরের নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করে শুরু হয় আমাদের ঈদ।

সুলতানের মতো আরো অনেকে নামাজ শেষে কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে ছুটে এসেছেন। কেউ আসছেন সপরিবারে আবার কেউ একা। নিরবে দাঁড়িয়ে সূরা পাঠ করছেন কেউ। আবার অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে দু’হাত তুলে মোনাজাত করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কবরস্থানের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে অসংখ্য লোকজন কবর জিয়ারত করছেন।

ঠাকুরগাঁও শহরের থেকে কবরস্থানে মায়ের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন রহমত আলী। সাথে এসেছেন তার ছোট ছেলে নিপু। রহমত আলী উচ্চ স্বরে কাঁদছেন মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে।

জিয়ারত শেষে তিনি বলেন, ‘মায়ের কাছে প্রতি ঈদের নামাজ পড়েই ছুটে চলে আসি। আজও এসেছি। ঈদের দিন সব কাজের আগে মায়ের সাথে দেখা না করে গেলে যেন কিছুই হয়ে ওঠে না।’

বাবার কবর জিয়ারত করতে আসছেন রফিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার মা-বাবা, দুই ভাই আর এক বোন এখানে শুয়ে আছেন। বলতে পারেন পুরো পরিবারই শুয়ে আছেন এখানে। এখানে এলে মনে হয় পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছি।’ বলতে বলতে চোখ মুছেন রফিক।


আরো সংবাদ



premium cement