টানা ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গা স্থানগুলো সময়মত মেরামত না করায় তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। তলিয়ে গেছে জনবসতি ও ফসলের ক্ষেত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গা স্থানগুলো দ্রুত ও সময় মতো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিল। সে জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে সামান্য কিছু কাজও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু পাউবোর গাফলতি ও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সময়মত এসব ভাঙ্গা স্থান মেরামত না করে সময়ক্ষেপণ করে আসছিল।
কৃষকদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভরসায় মাঠের ক্ষেতগুলোতে দ্বিতীয় দফায় আমান ধানের চারা রোপণ করেছিলেন তারা। এ জন্য বাড়তি দামে চারা কিনে রোপণ কাজে তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। কিন্তু এখন বন্যার পানিতে তেগুলো তলিয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক তির মুখে পড়তে হলো তাদের।
স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর ডান তীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি ভাঙ্গা স্থান দিয়ে হু-হু করে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ফলে তৃতীয়বারের মত বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর, নুরুল্লাবাদ ও কশব ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের মানুষ।
মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, পাউবো ভাঙ্গা স্থান মেরামতের কাজ শুরু করায় একবুক আশা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। বাড়তি দামে চারা কিনে রোপণ কাজে তার ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার টাকা। একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের চার বিঘা জমিতে ১৭ হাজার ও গোলাম মোস্তফার তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারশিমলা গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান ও নহলা কালুপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদেরও রোপণ কাজে একই ধরণের ব্যয় হয়েছে।
মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম গোলাম আজম বলেন, ‘গত জুলাই মাসের বাঁধভাঙা পানিতে প্রায় ২০ দিন ধরে তিন ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী ছিল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ফসলের মাঠগুলোতে কৃষকেরা আমনের চারা রোপন করেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার থেকে নুরুল্লাবাদ, জোকাহাট ও চকরামপুর এলাকায় বাঁধের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে আবারও পানি প্রবেশ করেছে।
এতে সদ্য লাগানো আমন চারা ডুবে যাওয়ায় আবারও তির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।’ এর দায় এখন কে নেবে তাদের মতো অসহায় গরীব কৃষকদের প্রশ্ন।
কশব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভাঙ্গা স্থানে এক মাস আগে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মোরামতের কাজ শুরু করে। কিন্তু সেখানে শ্যালো মেশিন চালিত দুটি ছোট ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে কাজ করতে দেখা যায়। ড্রেজারের পাশাপাশি ভেকু মেশিন (এস্কেভেটর মেশিন) ও শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হলে দ্রুত ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামত করা যেত। তাহলে এসব এলাকার মানুষকে আর বন্যার পানিতে ভাসতে হত না।’
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতি ও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে এ এলাকার মানুষকে তৃতীয়বারের মত বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে আমন ধানের তে। পাউবোর আশ্বাসে মাঠে ধানের চারা রোপণ করে কৃষকরা চরম আর্থিক তির মুখে পড়েছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, ‘ভাঙ্গা স্থান মেরামতের জন্য তার দপ্তর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ সেগুলো মেরামত করে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। পাউবোর আশ্বাস পেয়ে দুর্গত এলাকার কৃষকদের মাঠে আমন ধানের চারা রোপণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়মত ভাঙ্গা স্থান মেরামত না হওয়ায় বন্যার পানিতে ওইসব এলাকায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা আবারও আর্থিক তির মুখে পড়লেন।’
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান গাফলতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তৃতীয় দফার বন্যা একটু আগাম হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা