১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


স্মার্টফোনের পারফরম্যান্সে ভার্চুয়াল র্যাম কতটুকু সহায়ক

-

বাংলাদেশের প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করছে স্মার্টফোন। তবে, স্মার্টফোন ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেলেও এর ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোনের প্রযুক্তি সম্পর্কে এখনো খুব ভালোভাবে অবগত নয়। ভার্চুয়াল র্যাম তেমনই একটি বিষয়। যার ফলে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর নিয়ে আসা ভার্চুয়াল র্যাম সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের অস্পষ্ট ধারণার সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভার্চুয়াল র্যামকে এক ধরনের গেম-চেঞ্জার হিসেবে তুলে ধরছে। এই র্যামকে এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যেন এটি রাতারাতি স্মার্টফোনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। ফলে ক্রেতারাও এই ভার্চুয়াল র্যামের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কিন্তু এটি বুঝতে হবে যে ভার্চুয়াল র্যামটি আসলে কিভাবে কাজ করে। ডেডিকেটেড বিল্ট-ইন র্যামের মতো ক্ষমতা ভার্চুয়াল র্যামের নেই। তাই স্মার্টফোন কেনার সময় ভার্চুয়াল র্যামের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার।
যখন ফিজিক্যাল র্যাম (র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি) কোনো কাজ পরিচালনা করতে অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে, তখন অতিরিক্ত মেমোরি হিসেবে ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভার্চুয়াল র্যাম অনেকটা ব্যাকআপ প্ল্যান থাকার মতো যখন কিনা প্রাথমিক বা প্রাইমারি মেমোরি মাত্রার অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে। ভার্চুয়াল র্যাম ডিভাইসকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে সাহায্য করে। এমনকি একাধিক অ্যাপ্লিকেশনে অথবা মেমোরি-নির্ভর কাজ করার সময়ও ভার্চুয়াল র্যাম কাজে দেয়।
ধরুন, আপনার চার র্যাম এবং ৬৪জিবি অভ্যন্তরীণ বা ইন্টারনাল স্টোরেজসহ একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস রয়েছে। যেখানে ভার্চুয়াল র্যামের ফিচার হিসেবে এই ৬৪ জিবি স্টোরজের মধ্যে দুই জিবি র্যাম হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ আছে। তাহলে এখন আপনার ডিভাইসে স্টোরেজ স্পেস হয়ে যাবে ৬২ জিবি এবং মোট কার্যকর র্যাম হবে ছয় জিবি (৪ জিবি + ২ জিবি)। শাওমির মতো ব্র্যান্ডগুলো ভার্চুয়াল র্যাম এবং ডিভাইসের পারফরম্যান্সের ওপর এর প্রভাবের উপর গুরুত্ব দেয়।
ভার্চুয়াল র্যাম সরাসরি বিল্ট-ইন র্যামের সম্প্রসারণ হিসেবে কাজ করবে না। এর মূল কারণ হলো র্যাম এবং ইন্টারনাল স্টোরেজ দু’টি ভিন্ন কম্পোনেন্ট। র্যাম হলো একটি দ্রুতগতির মেমোরি যা পড়া এবং লেখার কাজ করে অস্থায়ীভাবে।
অন্যদিকে, ইন্টারনাল স্টোরেজ হলো ধীরগতির তবে এটি আরো দীর্ঘ বা স্থায়ী সময়ের জন্য ডেটা সংরক্ষণ করে।
অ্যান্ডয়েড অপারেটিং সিস্টেমে, র্যামে সংরক্ষিত করা যায় এমন অ্যাপগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। গেম এবং ভিডিও প্লেয়ারের মতো চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে দ্রুত অ্যাক্সেসের জন্য এই অ্যাপগুলো র্যামে সংরক্ষিত হয়। অপর দিকে, কম গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলোকে ভার্চুয়াল র্যামে স্থানান্তরিত করা হয়।
স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো প্রায়ই ভার্চুয়াল র্যামকে পারফরম্যান্স বুস্টার হিসেবে বিজ্ঞাপনে দেখিয়ে থাকে। এতে দাবি করা হয়, দ্রুত এবং অধিক রিসোর্স ব্যবহার করে এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলো পরিচালনা করতে ভার্চুয়াল র্যাম আপনার ডিভাইসটিকে আরো সক্ষম করবে। এই ধারণাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা না হলেও বিভ্রান্তিকর। অনেক ব্র্যান্ড ভার্চুয়াল র্যামের সুবিধাগুলো অতিরিক্ত বাড়িয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করে থাকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো বাজারগুলোতে যেখানে স্মার্টফোন ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশে শাওমি ব্র্যান্ড ভার্চুয়াল র্যামের ফিচারকে অতিরিক্ত প্রচার করে না। ভার্চুয়াল র্যাম ডিভাইসের কর্মক্ষমতা কিছুটা উন্নত করলেও এটি ফিজিক্যাল র্যামের বর্ধিত রূপ হিসেবে সম্পূর্ণভাবে বিকল্প নয়- এমন প্রচারের মাধ্যমে ব্র্যান্ডটি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ভার্চুয়াল র্যাম ডিভাইসের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারলেও এটি আসল র্যামের বিকল্প নয়। স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে মার্কেটিং কৌশল হিসেবে প্রায়ই ভার্চুয়াল র্যামের বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই ভার্চুয়াল র্যামের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
বাধাহীন এবং দ্রুততর ডিভাইস পারফরম্যান্সের জন্য শুধু ভার্চুয়াল র্যামের ওপর নির্ভর না করে পর্যাপ্ত ফিজিক্যাল র্যামসহ একটি ডিভাইসে বিবেচনা করাই শ্রেয়।


আরো সংবাদ



premium cement