২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত

-

প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আসসালামু আলাইকুম, আশা করি মহান সৃষ্টির্কতার অপার করুণায় ভালো ও সুস্থ আছেন। স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। অতীব জরুরি একটি মানবিক বিষয় আপনার কাছে বিনয়ের সাথে উপস্থাপন করতে চাই। আমরা স্বাধীনতা-উত্তর পরবর্তী প্রজন্মের কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলের একজন সাধারণ শিক্ষক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত যে, আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে, দূরদর্শিতা, সৎ ও সততার সাথে প্রায় ১৭ কোটি বাঙালির স্বপ্নরতœ হিসেবে অদম্য গতিতে দেশ সব বিভাগ সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দরবারে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে এ রাষ্ট্র অনুন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হতে চলছে। জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৫৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল রয়েছে, যার প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক নিরলসভাবে প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীকে যোগ্যতার সাথে পাঠদান করে যাচ্ছেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশ আমরা, যারা কেজি স্কুলে সরকারি সুযোগ সুবিধা, বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষাদানে নিয়োজিত। ছাত্রদের সামান্য বেতনের ওপরই আমাদের জীবন এবং জীবিকা চলছিল। বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ‘প্রাথমিক স্তরের বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা। এরই একটি অংশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে সরকারি বই এবং পিইসি পরীক্ষা দেয়ার সরকারি অনুমতি ছাড়া আর্থিক কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেই। এমনকি সরকারি ও আধাসরকারি স্তরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করছেন। অনেক সময় পাঠদান বন্ধ রেখেও আন্দোলন করছেন। কিন্তু আমরা (কেজি) স্কুল কখনো আন্দোলন তো দূরের কথা, সরকারি ছুটি ছাড়া কখনো ক্লাস বা স্কুল বন্ধ দেই না। আমাদের অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সরকারি বড় চাকরি করছে। এটা কি শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকারকে সহযোগিতারই একটি অংশ নয়? আজ শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সুশিক্ষিত জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে কেজিগুলো।
মাননীয় সফল প্রধানমন্ত্রী, মহামারীর কবলে পড়ে দেশের প্রতিটি স্তরে যেমন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তেমনি আপনার দূরদর্শী চিন্তাধারায় এর আশু সমাধানও দিচ্ছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের যাদের কেজি স্কুলে চাকরি করে সংসার ও সন্তানদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেয়ার ব্যবস্থা ছিল, তাদের আয় গত মার্চ মাস থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। আমরা আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করছি। মাননীয় শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী, বঞ্চিত এ শিক্ষক সমাজের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরতে চাই। আপনার সন্তানতুল্য এই নিরীহ শিক্ষক সমাজ মানবেতর করুণ দিন যাপন করছে। আমরা না পারি কারো কাছে কিছু চাইতে, না পারি নিজেদের অভাবের কথা বলতে। আপনিই আমাদের একমাত্র অভিভাবক, যার কাছে আমাদের করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি। আমরা দৃঢ়তার সাথে আশা প্রকাশ করছি, আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তাচেতনা এবং সফলতার হাত প্রসারিত হবে, ইনশা আল্লাহ। আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং আপনার নেতৃত্বে দেশ আরো উন্নত হোক।
মো: নজরুল ইসলাম
সহকারী প্রধান শিক্ষক, দাউদকান্দি ইস্পাহানি স্কুল, কুমিল্লা


চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের সেকাল-একাল

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কলেজ জীবনে ছাত্রত্ব ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাগড় থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বাঘমারা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর আমাকে এবং সাথের যোদ্ধাদের ফেনীর বিলোনিয়া রণক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছিল। দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাইওনিয়ার প্লান্টে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বের সাথে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধাবস্থায় বুলেটবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছি এবং বুলেটের চিহ্ন বুকে ধারণ করে এখন জীবনের ৬৮ বছর অতিক্রম করছি। আমার পরিবারে বাবা ও আমিসহ তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ফেনী হানাদারমুক্ত হয়েছিল। আমরা অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্যাম্প স্থাপন করেছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডারের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি এবং লেখাপড়ায় মনোযোগী হলাম। ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত পূবালী ব্যাংকে চাকরিতে যোগ দিলাম। তখন স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আমলের কর্মকর্তার সংখ্যা প্রতিটি অফিসেই অনেক বেশি ছিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বে¡ও পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছিল। বন্ধু-বান্ধব অনেকেই চাকরিতে যোগ দিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় জানলে দূর-দূরান্তে বদলি করা হতো। তখন মোবাইল ফোন ছিল না, পরিচিত লোকের মাধ্যমে সংবাদ জানতে পারতাম। অফিস থেকে বের হওয়া যেত না। পরিচিত কেউ এলে কথা বলা যেত না। সামান্য দেরি হলে চিঠির মাধ্যমে কৈফিয়ত তলব করা হতো। চাকরিতে কনফার্মেশনে বিলম্ব করা হতো। পদোন্নতিতে বিলম্ব করা হতো। আরো অনেক কিছু।
১৯৮৪ সালে পূবালী ব্যাংক প্রাইভেট সেক্টরে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এই এ্যাগ্রিমেন্টে অনেক শর্ত ছিল তার মধ্যে একটি শর্ত হলো, সময় সময় সরকার কর্তৃক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। ১৯৮৪ সালে প্রাইভেট সেক্টরে হস্তান্তরিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার উদাহরণ নেই। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের দুই বছর চাকরির বয়স বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকারি গেজেট তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে পরিপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল, তা কার্যকর করেনি। সংসদে আইন পাসের সময় পূবালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আইন পাস করেও আইন মানলেন না, অথচ হলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, ৬ ডিসেম্বর ২০১২ সালে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক বছর চাকরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তারা কার্যকর করেছেন। তা ৯৫৮তম বোর্ড মিটিংয়ে ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে পাস এবং কার্যকর করা হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকেও প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে তদারকি করা হয়েছে বলে মনে হয় না। এভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আগে কর্মকর্তাদের নির্যাতন চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের সহ্য করতে হয়েছিল আর এখন অন্যরকম নির্যাতন মুক্তিযোদ্ধাদের সহ্য করতে হচ্ছে। সরকারপ্রধানের অবগতির জন্য বলতে হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে ১২ মার্চ ২০১৯ সালে এক দরখাস্তে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, যা তার বরাবর পাঠানো হয়েছিল।
মো: আনোয়ারুল আলম
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ব্যাংকার

গুরুত্বসহকারে দূরত্বে থাকুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে পরস্পর নিরাপদ (কমপক্ষে তিন ফুট) দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? বাংলাদেশের কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ হাট-বাজারে গেলে যা পরিলক্ষিত হয়, তাতে মনে হয়, করোনাভাইরাস নামক ঘাতক জীবাণু বিশ্বের এক কোটির বেশি মানুষকে ঘায়েল করে পাঁচ লাখের বেশি জীবন প্রদীপ যে এরই মধ্যে নিভিয়ে দিয়েছে, তা যেন নাটক-সিনেমায় দেখা অবাস্তব কাহিনী। তিন ফুট দূরে থাক, তিন মিলিমিটার দূরে থাকারও সাধ্য কি নেই? একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কাধাক্কি এবং ঘষাঘষি ঘটেই চলেছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই! অনেকেরই নাকে-মুখে মাস্ক নেই, অনেকে মাস্ক লাগিয়েছে, তবে নাক-মুখ নয়, থুতনি ঢাকার জন্য। অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার সাথে অবাধে সর্বত্র বিচরণের ফলে দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা। এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সমগ্র বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হবে। তাই মিনতি করে বলছি, যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বে থাকুন, নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরেই অবস্থান করুন। অন্যথায় সবাইকে ইউরোপ-আমেরিকার মতো রাস্তায় অজস্র লাশ দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলীলুল্লাহ
বারইয়ারহাট, মীরসরাই, চট্টগ্রাম

 


আরো সংবাদ



premium cement